**** চরম দুর্ভোগে আশপাশের ৫ গ্রামের মানুষ
**** সেতুতে সংযোগ সড়ক না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল
**** প্রতিদিন বাড়ছে দুর্ঘটনার শঙ্কা
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বড় হযরতপুর ইউনিয়নের রামনাথেরপাড়া এলাকায় সেতু নির্মাণ শেষ হলেও দুই পাশে সংযোগ সড়ক (এপ্রোচ রোড) না থাকায় বিপাকে পড়েছেন আশপাশের পাঁচ গ্রামের মানুষ। বাধ্য হয়ে স্থানীয়রা বাঁশের মই লাগিয়ে সেতুর সঙ্গে রাস্তার অস্থায়ী সংযোগ করেছেন। প্রতিদিন শত শত মানুষ, শিক্ষার্থী, এমনকি রোগীও ঝুঁকিপূর্ণ সেই মই বেয়ে চলাচল করছেন। এতে প্রতিদিন দুর্ঘটনার শঙ্কা বাড়ছে।
মিঠাপুকুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণের দায়িত্ব পায় মেসার্স মুনতাহা কনস্ট্রাকশন। প্রায় এক বছর আগে মূল সেতুর কাজ শেষ হলেও এখনো সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, বড় হযরতপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সদুরপাড়া হয়ে একটি হেরিংবন সড়ক রামনাথের পাড়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ওই সড়কের মাত্র ১০০ মিটার দূরেই সেতুটি নির্মাণ করা হলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় এখনো তা ব্যবহারের অনুপযোগী। দুই পাশে বাঁশের মই বসিয়ে নামা-ওঠার ব্যবস্থা করেছেন স্থানীয়রা।
ফলে নানকর, ফতেপুর, রামনাথের পাড়া, সদূরপাড়া ও কাঠালি গ্রামের প্রায় ২০-২৫ হাজার মানুষকে প্রতিদিন এভাবে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। শিশু, বৃদ্ধ ও নারীদের মই বেয়ে ওঠানামা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছোট-বড় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় কৃষকরা কৃষিপণ্য পরিবহনে মারাত্মক সমস্যায় পড়ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা নিতাই চন্দ্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘১০-১১ মাস আগে ব্রিজের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার রাস্তার কাজ করে নাই। এখন এই ব্রিজ মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। আমরা চরম ভোগান্তিতে আছি।
দলিল লেখক ধনেশ্বর রায় বলেন, ‘আমাদের ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না ঠিকমতো। পানি হলে বাঁশের মই একেবারেই পিচ্ছিল হয়ে যায়। তখন আমরা গ্রামের মানুষ মিলে নিজের খরচে সাঁকো বানাই। একটু ভারি জিনিসপত্র তো নিয়েই যাওয়া যায় না। সরকার ব্রিজ করে দিয়েছে, কিন্তু সংযোগ সড়ক না থাকায় সেটা কোনো কাজে আসছে না।
এলাকাবাসী জানান, প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী ওই সেতু দিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে। ইতোমধ্যে কয়েকজন মই বেয়ে ওঠার সময় পড়ে গিয়ে আহতও হয়েছে। বৃষ্টির সময় মই পিচ্ছিল হয়ে গেলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়। বাধ্য হয়ে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মনিরুজ্জামান সরকার জানান, ‘সংযোগ সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্ত বিল দেওয়া হয়নি। আমরা কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য তাগাদা দিচ্ছি। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে এবং স্থানীয়রা উপকৃত হবেন।’
মিঠাপুকুর উপজেলা প্রকৌশলী বাদশা আলমগীর বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অধীনে ব্রিজ কালভার্টের কাজগুলো পিআইও দেখেন। কাজ বুঝে নিয়ে ঠিকাদারকে ওই দপ্তর বিল দেবেন। এখানে আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুলতামিস বিল্লাহ বলেন, আগের ইউএনও স্যার চলে গেছেন। আমি অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি। বিষয়টি উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার ও পিআইওর সঙ্গে কথা বলে যত দ্রুত সম্ভব সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে সেতুটি ব্যবহার উপযোগী করা হোক। তারা বলছেন, সরকারের কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি সংযোগ সড়ক ছাড়া এখন শুধু অকার্যকর কাঠামো হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় এক বছর ধরে প্রতিদিন বাঁশের মই বেয়ে পারাপার হওয়া মানুষের একটাই দাবি ‘অবিলম্বে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করুন, আমাদের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন