শুরু হয়েছে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের রোমাঞ্চ। লিগের উদ্বোধনী দিনেই দুর্দান্ত এক জয় পেয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। তারা ২-১ গোলে হারায় অলিম্পিক মার্শেইকে। তাদের এই জয়ের নায়ক কিলিয়ান এমবাপ্পে। জোড়া গোল করে ১০ জনের দলে পরিণত হওয়া রিয়ালকে জয় এনে দেন এই ফরাসি তারকা। অপর ম্যাচে জুভেন্টাস ও বরুশিয়া ডর্টমুন্ড নতুন রূপকথার জন্ম দিয়েছে। মাত্র ৪৪ মিনিটের মধ্যেই ৮ গোল করে দল দুটি। সবগুলো গোলই হয়েছে খেলার দ্বিতীয়ার্ধে। চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে বিরতির পর এত গোল কখনো দেখা যায়নি।
সাত ম্যাচে ৮ গোল আর ২ অ্যাসিস্টই জানান দিচ্ছে, রিয়াল মাদ্রিদ ও ফ্রান্স জাতীয় দলের জার্সি গায়ে কতটা দুর্দান্ত ফর্মে আছেন এমবাপ্পে। এর চেয়েও বড় ব্যাপার, এমবাপ্পের বেশির ভাগ গোলে অবদান ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিয়েছে। ব্যবধান গড়ে দিল চ্যাম্পিয়নস লিগের শুরুর ম্যাচেও। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে এমবাপ্পের জোড়া গোলে পিছিয়ে পড়েও অলিম্পিক মার্শেইকে হারাল রিয়াল। স্বদেশি ক্লাবকে হতাশায় ডোবাতে ফরাসি তারকা দুটি গোলই করেছেন পেনাল্টি থেকে। ম্যাচের ৮১ মিনিটে জয়সূচক গোলটা আবার রিয়ালের জার্সিতে এমবাপ্পের ৫০তম। লস ব্লাঙ্কোসের হয়ে নিজেদের ৬৪ ম্যাচ খেলতে নেমে এই মাইলফলক স্পর্শ করলেন তিনি, যা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর দ্রুততম। ২০১০ সালের নভেম্বরে রোনালদো রিয়ালের হয়ে ৫০তম গোল করেছিলেন নিজের ৫৪তম ম্যাচে। ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে ইউরোপিয়ান কাপ থেকে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ নামকরণ করার পর এই প্রতিযোগিতায় এ নিয়ে ২০০তম জয় পেল রিয়াল, আর ওই সময় থেকে গোল করল ৭০০টি। এ দুটি মাইলফলক ছোঁয়ার ক্ষেত্রে মাদ্রিদের ক্লাবটিই প্রথম। অথচ ৭২ মিনিটে নিজের তো বটেই; দলেরও সর্বনাশ ডেকে আনেন দানি কারভাহাল। মেজাজ হারিয়ে মার্শেইয়ের আর্জেন্টাইন গোলকিপার হেরোনিমো রুয়িকে মাথা দিয়ে সজোরে আঘাত করেন। রুয়ি সঙ্গে সঙ্গে মাঠে লুটিয়ে পড়লে রিয়াল অধিনায়ক কারভাহালকে লাল কার্ড দেখান বসনিয়ান রেফারি ইরফান পেলিতো। ১০ জনের দলে পরিণত হওয়ার পর রিয়াল বেশ চাপে পড়ে যায়। কিন্তু পেনাল্টির সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজের ও দলের দ্বিতীয় গোল করে রিয়াল সমর্থকদের আনন্দে ভাসান এমবাপ্পে। অবশ্য এই পেনাল্টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্কের ঝড় বইয়ে যাচ্ছে। এই ম্যাচ দিয়েই চ্যাম্পিয়নস লিগে অভিষেক হলো ফ্রাঙ্কো মাস্তানতুয়োনোর। রিয়ালের সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার (১৮ বছর ৩৩ দিন) হিসেবে ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের শীর্ষ এই প্রতিযোগিতায় খেলার কীর্তি গড়লেন আর্জেন্টিনার এই মিডফিল্ডার। ছাড়িয়ে গেলেন ব্রাজিলের ফরোয়ার্ড এনদ্রিককে (১৮ বছর ৭৩ দিন)।
এদিকে, আলিয়াঞ্জ স্টেডিয়ামে জুভেন্টাস ও ডর্টমুন্ড ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে রোমাঞ্চকর মুহূর্ত উপভোগ করেছেন ফুটবলপ্রেমীরা। ৫২ মিনিটে করিম আদেইয়েমির গোলে এগিয়ে যায় জার্মান ক্লাব ডর্টমুন্ড। ৬৪ মিনিটে সমতা ফেরান জুভেন্টাসের কেনান ইলদিজ। গোলের নেশা দুই দলকে তখন থেকেই পেয়ে বসে। এরপর ২ মিনিটের ব্যবধানে আবারও ২ গোল। ৬৫ মিনিটে ফেলিক্স এনমেচার গোলে ডর্টমুন্ড আরেক দফা এগিয়ে যাওয়ার পর ৬৭ মিনিটে দুসান ভøাহোভিচের গোলে আবারও সমতায় জুভেন্টাস। তবে ৭৪ মিনিটে ইয়ান কৌতো এবং ৮৬ মিনিটে পেনাল্টি থেকে রামি বেনসেবাইনির গোলে ডর্টমুন্ড ৪-২ গোলে এগিয়ে গেলে মনে হচ্ছিল জুভেন্টাসের পক্ষে আর ম্যাচে ফেরা সম্ভব নয়। কিন্তু তুরিনের বুড়িরা এখান থেকেই অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়ায়। যোগ করা সময়ের চতুর্থ মিনিটে ভøাহোভিচ ও ষষ্ঠ মিনিটে লয়েড কেলি গোল করলে পিনপতন নীরবতা নেমে আসা আলিয়াঞ্জ স্টেডিয়ামে আবারও প্রাণের সঞ্চার হয়। ২০১৬ সালের পর এই প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচে ২ গোলে পিছিয়ে পড়েও হার এড়াল জুভেন্টাস। ম্যাচটা চ্যাম্পিয়নস লিগ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গোলের ড্রয়ের তালিকায়ও যৌথভাবে শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন