গাজা সংকটের সমাধান খুঁজতে কাতারে যখন বৈঠক হওয়ার কথা ছিল হামাস নেতাদের, এ সময় তাদের হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই হামলায় ছয়জন নিহত হন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন কাতারের নিরাপত্তা কর্মকর্তা। তবে হামাসের কোনো শীর্ষ নেতা নিহত হননি। এ ঘটনায় গোটা আরব বিশ্বের যেন টনক নড়েছে। এই হামলাকে শুধু একটি দেশের ওপর নয়, বরং পুরো উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) ওপর হামলা হিসেবে দেখছে উপসাগরীয় দেশগুলো। এ ঘটনায় একাট্টা হয়েছে আরব ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো। গত ১৫ সেপ্টেম্বর সোমবার দোহায় অনুষ্ঠিত হয় আরব-ইসলামিক জরুরি সম্মেলন। যেখানে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ইসরায়েলের জন্য আসতে পারে আরবদেশগুলোর আকাশপথ অবরোধ।
বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে বলা হয়, সদস্য দেশগুলো আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদার করতে একযোগে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। এর অংশ হিসেবে তারা তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে। যেখানে বলা হয়, যৌথ সামরিক কমান্ডের গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান বৃদ্ধি করা হবে। উপসাগরীয় অঞ্চলের জন্য একটি যৌথ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তৈরি করা হবে এবং একটি যৌথ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সতর্কতা ব্যবস্থা তৈরি করা হবে। যাতে ভবিষ্যতে সম্ভাব্য যেকোনো হামলা বা হুমকি মোকাবিলা করা যায়। পাশাপাশি তারা তিন মাসের মধ্যে অপারেশন এবং বিমান প্রতিরক্ষা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সমন্বয় মহড়া এবং একটি বৃহৎ আকারের বিমান মহড়া পরিচালনার অনুমোদন দেওয়া হয়।
এদিকে আরব ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো যদি সমন্বিতভাবে ইসরায়েলের জন্য আকাশপথ অবরোধ করে, তবে তার অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাগত প্রভাব কী হতে পারেÑসে বিষয়ে গত বুধবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের মালিকানাধীন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আল হাবতুর রিসার্চ সেন্টার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
আল হাবতুর রিসার্চ সেন্টারের বিশ্লেষণে বলা হয়, ইসরায়েলের কর্মকা-ের জন্য দেশটির বিরুদ্ধে আকাশপথে অবরোধ আরোপ করা হলে তেল আবিবের অর্থনীতির নানা খাতে ভয়াবহ ক্ষতি হবে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর ফলে ইসরায়েলের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৪ দশমিক ৮ থেকে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এতে দেশটি মন্দার মুখে পড়বে।
ওআইসির বড় বড় সদস্য যেমনÑ তুরস্ক, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়া যদি এ অবরোধে যোগ দেয়, তবে ইসরায়েল এশিয়া ও আফ্রিকার প্রবৃদ্ধিশীল বাজারগুলোর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হারাবে। এতে পূর্ব ও দক্ষিণমুখী ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাবে।
আকাশপথ অবরোধে ইসরায়েলের পর্যটনশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হীরার মতো উচ্চমূল্যের ও চিকিৎসা-সরঞ্জামের মতো সময়-সংবেদনশীল পণ্যের রপ্তানিও ব্যাহত হবে। এমন পরিস্থিতিতে অনেক আন্তর্জাতিক চুক্তি বাতিল হতে পারে এবং ইসরায়েলভিত্তিক গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম অন্যত্র চলে যেতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থনীতির বাইরে এ ধরনের পদক্ষেপ পুরো অঞ্চলের ভূরাজনীতির চিত্র মৌলিকভাবে পাল্টে দেবে।
গবেষণাকেন্দ্রটির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, আরব ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর সমন্বিত আকাশপথ অবরোধে নতুন আঞ্চলিক নিরাপত্তা কাঠামো তৈরি হবে। এতে যুক্তরাষ্ট্র একটি কূটনৈতিক সংকটে পড়বে। দেশটিকে ইসরায়েলকে বাঁচানো আর আরব দেশগুলোর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারত্বÑএই দুটির একটি বেছে নিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তিতে ষষ্ঠবারের মতো আটকে গেল গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ফিলিস্তিনের গাজায় অবিলম্বে ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত একটি খসড়া প্রস্তাবে ষষ্ঠবারের মতো ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক ডেপুটি দূত মরগান ওরটাগাস বলেছেন, প্রস্তাবটিতে হামাসের নিন্দায় যথেষ্ট কিছু বলা হয়নি, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অন্য ১৪টি সদস্য দেশই এই খসড়া প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। প্রস্তাবটিতে গাজার মানবিক পরিস্থিতিকে ‘বিপর্যয়কর’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে এবং ইসরায়েলের প্রতি সব ধরনের ত্রাণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ক্যাপশন: গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছে নারী-শিশুসহ সব বয়সিরা। খান ইউনিসে বৃহস্পতিবারের বিমান হামলায় নিহত হয় দশ বছর বয়সি খাদিজা আল-হামস ও তার ছয় বছর বয়সি ভাই মোহাম্মেদ। নাসের হাসপাতাল থেকে ভাই-বোনের লাশ নিয়ে যাচ্ছেন তাদের স্বজনরা
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন