ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

গবেষণা প্রতিবেদনে উদ্বেগ

দক্ষিণ কোরিয়ায় ৮ বছরে ১,৫০০-এর বেশি যৌথ আত্মহত্যা

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫, ১২:৩৩ এএম

শুধু প্ররোচনায় নয়। নানা কারণেই আত্মহত্যা করেন অনেকে। এটা একটা মানসিক রোগ। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাইকোলজিক্যাল কিংবা নিউরো বায়োলজিক্যাল কারণেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আত্মহত্যা করে থাকে কোনো ব্যক্তি। তবে বর্তমানে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া কিংবা মান-অভিমান থেকেই আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি দেখা যায় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। দক্ষিণ কোরিয়ায় আত্মহত্যার প্রবণতা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি রিসার্চ সার্ভিসের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৩ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে রেকর্ড করা প্রায় এক লাখ ৮ হাজার আত্মহত্যাজনিত মৃত্যুর মধ্যে প্রায় ১,৫০০ জন যৌথ আত্মহত্যায় প্রাণ হারিয়েছেন। একই সময়ে ৪০০-রও বেশি মানুষ হত্যা করার পর আত্মহত্যা করেছেন। প্রতিবেদন অনুসারে, যৌথ আত্মহত্যার ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একসঙ্গে জীবন শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছেÑ পারিবারিক সম্পর্কের জটিলতা (৩৪.৪%), আর্থিক সংকট (২০.৭%), মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ও পারস্পরিক দ্বন্দ্ব। গত মে মাসে, একজন ব্যক্তি তার স্ত্রী এবং দুই ছেলেকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেওয়ার পর নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে তিনি পুলিশকে জানান যে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ওন ($ ১৪৩,৯০০) ঋণের কারণে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। গত জুলাই মাসে, গিওংগি প্রদেশের হোয়াসিওংয়ে ৪০ বছর বয়সি এক দম্পতি এবং তাদের দুই কিশোরসন্তানকে একটি পার্ক করা গাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়, যেখানে আর্থিক সংকটের কথা উল্লেখ করে একটি চিরকুট পড়ে ছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক শিক্ষাব্যবস্থা, কর্মক্ষেত্রে তীব্র চাপ, পরিবারভিত্তিক টানাপোড়েন এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা একসঙ্গে মানুষকে মানসিকভাবে ভেঙে দিচ্ছে। একক আত্মহত্যার পাশাপাশি যৌথ আত্মহত্যার প্রবণতা প্রমাণ করছে, হতাশার এই ভার শুধু ব্যক্তিকেই নয়, সম্পর্ককেও গ্রাস করছে।

এ বিষয়ে মনোবিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, আত্মহত্যার মতো চরম পদক্ষেপ ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে পরামর্শ ও সহায়তা সেবার প্রসার ঘটাতে হবে। একই সঙ্গে পরিবারভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। দক্ষিণ কোরিয়ায় আত্মহত্যা প্রতিরোধে সরকার নানাবিধ সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করছে। যদি পরিচিত কারো আত্মহত্যার সতর্কতামূলক লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে কোরিয়ার সুইসাইড ক্রাইসিস হটলাইনে ১০৯ নম্বরে যোগাযোগ করতে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। আত্মহত্যা শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং একটি গভীর সামাজিক সমস্যা। যৌথ আত্মহত্যার মতো প্রবণতা কমাতে হলে শুধু আইন নয়, প্রয়োজন পরিবার ও সম্প্রদায়ের মধ্যে মানসিক সহায়তা নেটওয়ার্ক তৈরি করা। দক্ষিণ কোরিয়ার সাম্প্রতিক এই পরিসংখ্যান তাই নীতিনির্ধারক, সমাজবিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীদের সামনে এক নতুন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে জাতীয় প্রতিরোধ কৌশল কার্যকর হওয়ায় জাপানে সামগ্রিক আত্মহত্যার হার গত বছর হ্রাস পেয়ে বিশ হাজারের সামান্য বেশিতে উন্নীত হয়েছে। তবে শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে এটি একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা। গত বছর এই বয়সের ৫২৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যার এই সংখ্যা হলো সর্বকালের সর্বোচ্চ।  আত্মহত্যা শুধু কোনো ব্যক্তির সংকট নয়। এটা এখন একটা সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি এভাবেই ব্যাখ্যা করছেন।

একের পর এক আত্মহত্যার ঘটনাকে মনস্তত্ত্ববিদ্যার পরিভাষায় বলা হয় ‘সুইসাইড কন্টাজিওন’ বা ‘আত্মহত্যার সংক্রমণ’। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট বা চিকিৎসামনোবিদ ডা. প্রশান্ত কুমার রায় ডিডব্লিউকে বলেন, ‘এটাকে বলা হয় সুইসাইড কন্টাজিওন। অর্থাৎ যখন একটি ঘটনা হয়, সেটা খুব বেশি প্রচার পেতে শুরু করে, আলোচনা হয়, তখন যারা সমস্যার মধ্যে আছেন, তাদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি করে দেখা দেয়। মেট্রোর আত্মহত্যা নিয়ে যখন লেখালেখি হয়, তখন দেখা যায়, পরপর কয়েকটা ঘটনা ঘটে যাচ্ছে একই পদ্ধতিতে। অর্থাৎ একাধিক মানুষ আত্মহত্যায় প্ররোচিত হন। অভিনয় জগতেও এটা দেখা যায়। একটা সময়ে কলকাতায় একজন অভিনেত্রী আত্মঘাতী হওয়ার কিছুদিনের মধ্যে এ রকম আরো দু-একটি ঘটনা ঘটে গিয়েছিল।’