উত্তরের তাখার প্রদেশের শাকিবা। তিনি ধাত্রীবিদ্যা পড়ছিলেন। কিন্তু সেই কোর্স নারীদের জন্য নিষিদ্ধ হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা পড়তে চাই, শিখতে চাই। কিন্তু ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার খবর শুনে মনে হলো, পৃথিবী অন্ধকার হয়ে গেছে।’ একই অনুভূতি ফাতিমা নামের আরেক আফগান নারীর। ইন্টারনেট বন্ধ করার পর তার মনে হচ্ছে, তিনি আরও অসহায় হয়ে পড়েছেন। আফগান নারীদের জীবনে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা। ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে আফগান নারীদের জীবনে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা নেমে এসেছে। স্কুল-কলেজে ১২ বছরের বেশি বয়সি মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করা, কর্মক্ষেত্রে নারীদের সীমিত করা, এমনকি সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে নারী লেখকদের লেখা বই সরিয়ে নেওয়ার মতো পদক্ষেপে তাদের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়েছে। এই দমবন্ধ পরিস্থিতিতে নারীদের শেষ আশ্রয় ছিল ইন্টারনেট যার মাধ্যমে তারা অনলাইনে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছিলেন।
কিন্তু সে পথও বন্ধ হয়ে গেল। ইন্টারনেট বন্ধের পর আফগান নারীদের প্রকৃত অবস্থা জানতে চেয়েছিল যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি। দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় এক প্রদেশের ছাত্রী ফাহিমা নুরি (ছদ্মনাম) বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমাদের শেষ আশা ছিল অনলাইন শিক্ষা। এখন সেটিও শেষ। আমি আর আমার দুই বোন একসঙ্গে পড়াশোনা করছিলাম। বাবাকে সহায়তা করার স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু আজ আমরা ঘরে বসে কিছুই করতে পারছি না।’ মঙ্গলবার বিবিসি জানিয়েছে, ইন্টারনেট বন্ধ করায় আফগানিস্তানের শিক্ষকেরাও সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সাংবাদিকতা থেকে ফিরে এসে ইংরেজি পড়ানো শুরু করেছিলেন জাবি (ছদ্মনাম)। তার ৭০-৮০ জন শিক্ষার্থী অনলাইনে আইইএলটিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ নেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা মাঝপথে থেমে গেলেন। জাবির ভাষায়, তারা মাসের পর মাস প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। এক মুহূর্তে সব শেষ হয়ে গেল।
ব্যবসা-বাণিজ্যও ধসে পড়ছে। তাখারের মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ী আনাস বলেছেন, ‘আমাদের কাজের ৯০ ভাগ ইন্টারনেটনির্ভর। এখন প্রায় কিছুই সম্ভব হচ্ছে না।’ তার সবচেয়ে বড় কষ্ট, তার তিন কন্যা আর অনলাইন ক্লাস করতে পারছে না। তালেবান এখনো এ সিদ্ধান্তের সুনির্দিষ্ট কারণ জানায়নি। শুধু জানিয়েছে, বিকল্প পথে ইন্টারনেট চালুর চেষ্টা চলছে। কিন্তু কবে তা সম্ভব হবে, তা অনিশ্চিত। আর তত দিন পর্যন্ত আফগান নারী-পুরুষ, বিশেষ করে, তরুণ প্রজন্মের শিক্ষা ও জীবিকা দুটোই অন্ধকারে ঢেকে যাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। আফগানিস্তানে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে পড়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন দেশটির সাধারণ মানুষ। শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে অনলাইন উদ্যোক্তাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে ব্যাপকভাবে।
ইন্টারনেট না থাকায় এরই মধ্যে কাবুল বিমানবন্দরে সব ধরনের ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ২০২১ সালে ক্ষমতা নেওয়ার পর তালেবানের অনেক কর্মকা- আশ্চর্য করেছে আফগানবাসীকে। এবার ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দিয়ে ফের সমালোচনার মুখে পড়েছে দলটি। গত কয়েক দিন ধরেই পুরো আফগানিস্তানে ধাপে ধাপে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করেছে তালেবান সরকার। শুরুতে পর্নোগ্রাফিসহ অনৈতিক কার্যক্রম থেকে আফগানিস্তানের নাগরিকদের হেফাজত রাখতে ফাইবার-অপটিক ইন্টারনেট বন্ধ করে তারা। এরপর তাদের হস্তক্ষেপে মোবাইল ইন্টারনেট সেবাও পুরোপুরি অন্ধকারের মুখে। এতে করে বহির্বিশ্বের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ।ডিজিটাল এই যুগে ইন্টারনেট সেবা বন্ধে চরম ভোগান্তিতে আফগানিস্তানের সাধারণ নাগরিক।
স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ ব্যবসায়ী, সরকারি প্রতিষ্ঠান, উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে সকলেই নানান ধরনের জটিলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।নাগরিকদের একজন বলেন, ‘গত তিন দিন ধরে কাবুলে ইন্টারনেট পাওয়া যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে সরকারি সেক্টরসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনায় অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। পুনরায় ইন্টারনেট সেবা চালু করতে সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।’ আরেকজন বলেন, ‘সোমবার বিকেল থেকে একেবারেই সংযোগ পাচ্ছি না।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন