ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৫

রয়টার্সের অনুসন্ধান

‘অপারেশন মুভ আর্থ’, আসাদ সরকারের গণকবর সরানোর গোপন অভিযান

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৫, ০২:১৯ এএম

দুই বছর ধরে গোপনে এক বিশাল অভিযানে হাজার হাজার মরদেহ এক গণকবর থেকে তুলে মরুভূমির গভীরে নতুন স্থানে সরিয়ে নিয়েছিল সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকার। সম্প্রতি রয়টার্সের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এমন ভয়াবহ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত চলে এই অভিযান। ‘অপারেশন মুভ আর্থ’ নামে পরিচিত এই অভিযানে রাজধানী দামেস্কের উত্তরে কুতাইফাহ এলাকার একটি কুখ্যাত গণকবর থেকে মরদেহগুলো ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয় ধুমাইর মরুভূমির একটি গোপন স্থানে। রয়টার্সের তদন্তে জানা গেছে, সিরিয়ার সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে আসাদ সরকার রাতের অন্ধকারে প্রতি সপ্তাহে চার রাত প্রায় ছয় থেকে আটটি ট্রাকভর্তি মরদেহ ও মাটি কুতাইফাহ থেকে মরুভূমির ওই স্থানে নিয়ে যেত। সংবাদ সংস্থাটির তদন্তে অংশ নেন ১৩ জন প্রত্যক্ষদর্শী। যাদের মধ্যে ছিলেন ট্রাকচালক, প্রকৌশলী, বুলডোজারচালক এবং এক সাবেক রিপাবলিকান গার্ড কর্মকর্তা। তারা সবাই জানান, অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল সরকারের অপরাধের প্রমাণ মুছে ফেলা এবং আন্তর্জাতিক মহলে আসাদের ভাবমূর্তি পুনর্গঠন করা। রয়টার্স বলছে, ধুমাইর মরুভূমির ওই নতুন গণকবরটিতে অন্তত ৩৪টি বিশাল গর্ত রয়েছে, যার প্রতিটি প্রায় দুই কিলোমিটার লম্বা।

এটি সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ চলাকালে সবচেয়ে বড় গণকবরগুলোর একটি বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাক্ষ্য অনুযায়ী, সেখানে ১০ হাজারের বেশি মানুষের দেহ থাকতে পারে। ২০১৪ সালে এক মানবাধিকার কর্মী কুতাইফাহ গণকবরের ছবি স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ করলে প্রথমবারের মতো এটির অস্তিত্ব প্রকাশ পায়। তবে ২০১৮ সালের শেষ দিকে, যখন আসাদ গৃহযুদ্ধে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, তখনই সিদ্ধান্ত হয় গণকবরটি সরানোর। এক সাবেক সেনা কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘আসাদ চেয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে। তাই পুরোনো অপরাধের চিহ্ন মুছে ফেলাই ছিল লক্ষ্য।’ //অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০২১ সালের মধ্যে কুতাইফাহর ১৬টি গণকবর সম্পূর্ণ খালি করে ফেলা হয়। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী, সিরিয়ার যুদ্ধের সময় ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষ আসাদের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিখোঁজ হন। তাদের অনেকেই এ ধরনের গণকবরে সমাহিত করা হয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয়। আসাদ সরকারের পতনের পর এখন পর্যন্ত নতুন সরকার মরদেহ শনাক্ত বা ডিএনএ পরীক্ষার উদ্যোগ নিতে পারেনি। জরুরি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক মন্ত্রী রায়েদ আল-সালেহ স্থানীয় সংবাদমাধ্যম আল-ওয়াতানকে বলেন, ‘যত দিন মায়েরা তাদের সন্তানদের কবর খুঁজে না পান, যত দিন স্ত্রী ও সন্তানরা প্রিয়জনের দেহাবশেষ না পান, তত দিন এই ক্ষত রক্তাক্ত থাকবে।’

তিনি জানান, সরকার একটি ডিএনএ ব্যাংক ও নিখোঁজদের তথ্যভান্ডার তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে। তবে বিশাল এ প্রকল্প কাজটি এগিয়ে নিতে বিশেষজ্ঞ ও সম্পদের অভাবই এখন বড় বাধা। সিরিয়া জাস্টিস অ্যান্ড অ্যাকাউন্টেবিলিটি সেন্টারের প্রধান মোহাম্মদ আল আবদাল্লাহ রয়টার্সকে বলেন, ‘এভাবে লাশ সরানোর অর্থ হলো পরিবারগুলোর জন্য দুঃস্বপ্ন আরও দীর্ঘ হওয়া। পরবর্তী সময়ে পরিচয় শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে।’ কবর স্থানান্তরের সঙ্গে জড়িত ড্রাইভার, প্রকৌশলী এবং অন্যরা বলেছেন, গোপন অভিযানের সময় কথা বলার অর্থ ছিল নিশ্চিত মৃত্যু। একজন ড্রাইভার জানিয়েছেন, ‘কেউ তখন আদেশ অমান্য করত না। কারণ করলে তারও সেই গর্তে যেতে হতো।’