মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২৫, ০৩:০১ এএম

গাজায় যুদ্ধবিরতি

শোক, ক্লান্তি ও আশা নিয়ে মায়েদের যাত্রা

ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২৫, ০৩:০১ এএম

শোক, ক্লান্তি ও আশা নিয়ে মায়েদের যাত্রা

মুশতাহা। এমনই একজন মা। বাস করতেন ফিলিস্তিনের গাজার পূর্বাঞ্চলীয় শহর শেজাইয়াতে। তিনি যখন অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, তখন পূর্ব গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েরি বাহিনী। তখন তিনি প্রাণভয়ে পালিয়ে যান দক্ষিণ গাজায়। কিছুদিনের মধ্যেই প্রসববেদনা ওঠে রাওয়ান্দ মুশতাহার। তিনি ভর্তি হন দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে। তারপরের ভয়াবহ বর্ণনা না হয় রাওয়ান্দার মুখেই শোনা যাক। ‘হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে তেমন কোনো নার্স ছিলেন না। চিকিৎসক ছিলেন হাতে গোনা।

ওষুধপত্র নেই বললেই চলে। আমাকে সাধারণ অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার কথা ছিল। পর্যাপ্ত চিকিৎসাসামগ্রীর অভাবে সেটি দেওয়া গেল না। আংশিক অ্যানেসথেসিয়া দিয়েই আমার অস্ত্রোপচার করলেন চিকিৎসক। আমার পেট থেকে বের হলো তিন তিনটি সন্তান!’ বলছিলেন রাওয়ান্দ মুশতাহা। মাত্র কুড়ি বছর বয়সি এই মা বলেন, ‘আমি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়েই খবর শুনলাম, আমার শাশুড়ি, দুই বোনসহ আমার স্বামীর পরিবারের অন্তত ৫০ জন মারা গেছেন ইসরায়েলি বোমা হামলায়।’

রাওয়ান্দ মুশতাহা মাথায় হাত দিয়ে নিজের কপালকে দুষলেনÑ ‘মানুষের হয় যমজ সন্তান, আর আমার হলো তিনটা!’ চোখ মুছে তিন কন্যার নাম রাখলেন মৃত দাদি আর দুই খালার নামেÑ সুহাদ, হুদা ও নাদা। এরপর ভয়ানক এক দুর্বিষহ সংগ্রাম শুরু হলো তার। কারণ, গাজার দক্ষিণাঞ্চলেও হামলা শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তিন নবজাতক নিয়ে কোথায় যাবেন এখন? এরই মধ্যে খুঁজতে খুঁজতে তার স্বামী চলে এসেছেন খান ইউনিসে।

স্বামীকে পেয়ে বাঁধভাঙা কান্নায় ভেঙে পড়েন রাওয়ান্দ মুশতাহা। তিনি ভেবেছিলেন, তার স্বামী মারা গেছেন ইসরায়েলি বোমা হামলায়, তাকে আবার ফিরে পাবেন, এ কথা স্বপ্নেও ভাবেননি। এবার স্বামী আর তিন সন্তানকে নিয়ে দেইর আল-বালাহ শহরে পালিয়ে যান রাওয়ান্দ মুশতাহা। সেখানে একটা তাঁবুতে আশ্রয় নেন তারা। কিন্তু শহরজুড়ে দুর্ভিক্ষ। কোথাও কোনো খাবার নেই। মাঝে মাঝে ত্রাণের গাড়ি আসছে, আর ঝাঁপিয়ে পড়ছে বুভুক্ষের দল। যুদ্ধের মধ্যে এ আরেক যুদ্ধ। মাথার ওপরে বোমা, জমিনে ক্ষুধা। কোথায় যাবেন তারা? তবু এরই মধ্যে লড়াই করে কিছু খাবার নিয়ে আসেন রাওয়ান্দের স্বামী। নিজেরা তাই দিয়ে কোনোমতে জীবন বাঁচান।

রেডিও চ্যানেল এনপিআরকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক শ্রৌক আল আইলা। তিনি বলতে শুরু করেন, ‘আমি এক ধরনের হ্যাংওভারের মধ্যে আছি। আজ সকালে খুব অদ্ভুত লাগছিল। কারণ, আমি বিমান হামলা ও বিস্ফোরণ ছাড়া গভীরভাবে ঘুমানোর সুযোগ পেয়েছিলাম। এটা সত্যিই অদ্ভুত লাগছে।’ ৭০০ দিনের বেশি সহিংসতার পর ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে। তবু শান্ত হয়নি গাজার আকাশ। কিন্তু গাজাবাসী, বিশেষত নারী ও কিশোরীদের মধ্যে ভঙ্গুর হলেও দেখা দিয়েছে আশাÑ বেঁচে থাকার আর এগিয়ে যাওয়ার আশা। যুদ্ধের পুরো সময়ে গাজার অধিকাংশ নারী কমপক্ষে চারবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

ইউএন উইমেনের তথ্য অনুযায়ী, ১০ লাখের বেশি নারী ও কিশোরীর খাদ্যসহায়তার প্রয়োজন এবং প্রায় আড়াই লাখের প্রয়োজন জরুরি পুষ্টি সহায়তা। যুদ্ধ শুরু হওয়ার ১৬ দিনের মাথায় বাড়িতে বোমা হামলায় নিহত হন আইলার স্বামী। এর পর থেকে নিজের কন্যাশিশুর সঙ্গে জীবনযাপন করছেন তিনি।

আইলা জানান, তার কন্যাটি তার বয়সের অর্ধেকের বেশি সময় খাওয়ার পানি, চিকিৎসাসামগ্রী, দুধ আর ডায়াপার ছাড়া কাটিয়েছে। দুর্ভিক্ষের কারণে সে ক্যানড ফুডের ওপর বড় হয়েছে। ফলে শিশুটি আপেল, কলা ও অন্য সব ধরনের ফল চিনতে পারে না। গাজায় প্রতি সাতটি পরিবারের মধ্যে একটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন একজন নারী। তাঁদের এখন সরাসরি সহায়তা দরকার, যাতে তাঁরা সন্তানদের খাওয়াতে পারেন, স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারেন, জীবিকা পুনর্গঠন করতে পারেন এবং সব কিছু হারানোর পর কিছুটা স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করতে পারেন।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!