ঢাকা শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৫

সুদানে লাইভ-স্ট্রিমে হাজারো মানুষকে হত্যা

‘ফাশারের কসাই’ আবু লুলু গ্রেপ্তার মৃত্যুর পথে ফাশারের উদ্বাস্তুরা

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২৫, ০৬:৪২ এএম

যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এরপর জাতিসংঘের মানবিক সংস্থাগুলোকে ফাশারে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়ার পর শহরটি সম্পূর্ণ ভীতসন্ত্রস্ত এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে ডুবে গেছে। স্থানীয় সংস্থাগুলো জানিয়েছে, শহরের ভেতরে আটকা পড়াদের বিরুদ্ধে অপরাধ অব্যাহত রয়েছে। আলজাজিরার সাংবাদিক তাহের আল-মারজি ফাশারের কিছু সংস্থা এবং মেডিকেল নেটওয়ার্ক থেকে যেসব তথ্য প্রকাশ করেছেন, সেগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, বিপুলসংখ্যক বেসামরিক নাগরিক শহরের ভেতরে আটকা পড়েছেন এবং তারা বের হতে পারছেন না। এমনকি পানি কিংবা খাবারও পাচ্ছে ননা। ফাশারের দীর্ঘ অবরোধের ফলে খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং চিকিৎসা পরিষেবার তীব্র সংকট দেখা দেয়। বিশেষ করে হাসপাতালগুলোতে আক্রমণ এবং লুটপাটের পর।

সুদানিজ ডক্টরস নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, আরএসএফ এখনো হাজার হাজার বেসামরিক লোককে শহরের ভেতরে আটকে রেখেছে এবং তাদেরকে শহর ছেড়ে যেতে বাধা দিচ্ছে। সন্ত্রাসীরা মানুষের ব্যবহৃত যানবাহনও জব্দ করেছে এবং পালিয়ে আসা কিছু লোককে হুমকির মুখে শহরে ফিরে যেতে বাধ্য করেছে।  মানবিক সংস্থাগুলো ফাশারে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে এবং শহরে আটকা পড়াদের ন্যূনতম সাহায্য দেওয়ার জন্য লড়াই করছে। বাস্তুচ্যুতরা আশ্রয় সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে, তাদের অনেকেই খোলা আকাশের নিচে বাস করছে। মানবিক করিডর এখনো খোলা হয়নি এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক চাপের কোনো উল্লেখযোগ্য ফলাফল পাওয়া যায়নি। এমন অবস্থায় ফাশারের নরক থেকে নিজেদের বাঁচাতে এবং পালাতে সক্ষম হলেও কয়েক ডজন পরিবার বাস্তুচ্যুতি এবং গৃহহীনতার কঠোর বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছে।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এক ভবিষ্যদ্বাণীতে বলেছে, আগামী দিনে বাস্তুচ্যুতির ভয়াবহ ঢেউ আসবে, যেখানে বাস্তুচ্যুতরা আশ্রয় নেওয়ার মতো কোনো জায়গা পাবে না। ফাশার শহর থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, সন্ত্রাসীরা গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদীদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের মতোই এ শহরের মানুষের শেষ আশার জায়গা যেমনÑ ত্রাণ কেন্দ্র, রান্নাঘর, বাজার ও হাসপাতাল ইত্যাদি ধ্বংস করে দিয়েছে।

ফাশার থেকে পালাতে সক্ষম এক সাংবাদিক বলেছেন, ফাশার শহরের সাহায্য সংস্থাগুলো গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে এবং জনগণকে কোনোভাবেই সাহায্য করতে পারছে না। এই শহরের বাসিন্দারা প্রচ- ক্ষুধার জ্বালায় গাছের পাতা খাচ্ছে এবং পান করার মতো পানিও পাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, বিশ্ব গণমাধ্যমের নীরবতার সুযোগে জঙ্গিরা গুদামগুলোর অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে, গবাদি পশু ও ঘরবাড়ি লুট করে এবং সমস্ত পরিষেবা সুবিধা, পানির কূপ, হাসপাতালসহ বাজারঘাট সব ধ্বংস করে দিয়েছে। এদিকে  সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সুদানের এল-ফাশার শহরে র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ) সন্ত্রাসীদের নৃশংস অপরাধের খবরাখবরের মধ্যে ‘আবু লুলু’ নামে এক সন্ত্রাসীর নাম এখন সবার মুখে মুখে। তিনি গর্বের সঙ্গে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার ছবি প্রকাশ করেন এবং ‘ফাশারের কসাই’ নামে পরিচিতি লাভ করেন।

বার্তা সংস্থা তাসনিম জানিয়েছে, এ অঞ্চলে দ্রুত উন্নয়নসহ গাজা ইস্যু এবং সেখানে যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়ার ওপর বিশ্বব্যাপী মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হওয়ার মধ্যে গত দুই সপ্তাহ ধরে আমিরাতের সঙ্গে যুক্ত আরএসএফ সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে সুদানে একটি বড় গণহত্যা চালানো হয়েছে। তবে মিডিয়া সুদানের ওই ভয়াবহ ঘটনার খবর গোপন করতে পারেনি। গত কয়েক দিন ধরে সুদানের ঘটনাবলীর খবর মিডিয়ায় প্রকাশিত হচ্ছে, বিশেষ করে সোশ্যাল নেটওয়ার্কগুলোতে। সেখানকার যেসব ছবি এবং ভিডিও প্রচারিত হচ্ছে তা আরএসএফ মিলিশিয়াদের হাতে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিকের ভয়াবহ হত্যাকা-ের ইঙ্গিত দেয়। গত সপ্তার শুরুতে সন্ত্রাসীরা ঘোষণা করেছিল যে, তারা ৫০০ দিনের অবরোধের পর উত্তর দারফুর রাজ্যের এল-ফাশির শহর সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এরপর এই সন্ত্রাসীদের হাতে অসহায় মানুষ, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের ওপর সংঘটিত নৃশংস অপরাধের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রাথমিক পরিসংখ্যানে দেখানো হয়, মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে ২,০০০ জনেরও বেশি মানুষকে ভয়াবহভাবে হত্যা করা হয়েছে। সুদানে আমিরাতি সন্ত্রাসীদের নৃশংস অপরাধের সঙ্গে গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদীদের অপরাধের একটা মিল রয়েছে। আর সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সুদানের ঘটনাবলীর সঙ্গে সম্পর্কিত সংবাদের শীর্ষে যে নামটি উঠে এসেছে, সেই নামটি হলো- আবু লুলু। যাকে ‘ফাশারের কসাই’ উপাধি দেওয়া হয়েছে। আসল নাম ফাতিহ আবদুল্লাহ ইদ্রিস হলেও আবু লুলু নামেই সমধিক পরিচিত।