দিল্লি বিস্ফোরণের ছক কষা হয়েছিল অনেক আগেই। এটি পূর্বপরিকল্পিত। তেমনটাই মনে করছেন ভারতীয় তদন্তকারীরা। আর সেই কারণেই গাড়ি কেনাবেচার ক্ষেত্রে অনেক ছলচাতুরী করা হয়েছে। আই ২০ অভিশপ্ত সেই গাড়ি, যেটা ঘিরে এত রহস্য, সেই গাড়ি অনেক হাত ঘুরে এসেছিল ‘আত্মঘাতী’ চিকিৎসক উমর নবির হাতে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৫২ মিনিটে ওই ছোট গাড়ি গতি কমিয়ে লালকেল্লার কাছে সুভাষ মার্গ সিগন্যালে দাঁড়ায়। তখনই আচমকা বিস্ফোরণ ঘটে ওই গাড়িতে। ওই গাড়িতেই ছিলেন নবি। জানা যাচ্ছে, সিগন্যালে দাঁড়ানোর আগে পার্কিং লটে প্রায় তিন ঘণ্টা ঠায় দাঁড়িয়েছিল ওই গাড়ি। গাড়ির ভেতর বসে ছিলেন নবি। গাড়ি থেকে এক মুহূর্তের জন্যও নামেননি। তদন্তকারীরা মনে করছেন, ডাক্তার উমর হয়তো কারোর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অথবা তিনি পার্কিং লটে নির্দেশের অপেক্ষা করছিলেন।
ভারতের দিল্লির লালকেল্লার কাছে ‘আত্মঘাতী’ বোমা হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন হামলাকারীর প্রথম ছবি প্রকাশ করেছে পুলিশ। তার নাম উমর মোহাম্মদ, পেশায় চিকিৎসক। পুলিশের তথ্য মতে, তিনি দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামার বাসিন্দা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়, স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানী দিল্লির ওই হাইপ্রোফাইল এলাকায় একটি গাড়ি বিস্ফোরিত হয়ে অন্তত নয়জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে দিল্লি পুলিশ জানায়, উমর মোহাম্মদ ওই সাদা রঙের হুন্দাই আই-টোয়েন্টি মডেলের গাড়িটির চালক ছিলেন। গাড়িটিতে বিস্ফোরণ ঘটানোর আগে প্রায় তিন ঘণ্টা সেটি লালকেল্লার কাছের একটি পার্কিংয়ে থামিয়ে রাখেন।
ভয়াবহ এই বিস্ফোরণে ১৩ জন নিহত হয়েছেন এবং ২০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৫২ মিনিটে লালকেল্লা মেট্রোস্টেশনের গেট নম্বর ১-এর কাছে ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়ানো একটি হুন্দাই আই-২০ গাড়িতে এ বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তেই গাড়িটিতে আগুন ধরে যায় এবং আশপাশের একাধিক যানবাহন ও ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্তে জানা গেছে, বিস্ফোরণে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ব্যবহার করা হয়েছিল।
দিল্লির রেড ফোর্টের কাছে গাড়ি বিস্ফোরণের ঘটনায় পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদের যোগসূত্র পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে ভারতীয় পুলিশ। জানা গেছে, বিস্ফোরণে ব্যবহৃত গাড়িটি ছিল হুন্দাই আই-২০, যাতে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ফুয়েল অয়েল ভরা ছিল। এতে নয়জন নিহত হন। খবর এনডিটিভির। জইশ-ই-মোহাম্মদ প্রধান মাওলানা মাসুদ আজহার এর পেছনে রয়েছে বলে ধারণা তাদের। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার জন্যও দায়ী করা হয় তাকে। সেই হামলায় ৪০ ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছিলেন। এরপর ভারতের বিমানবাহিনী পাকিস্তানের বালাকোট ও বাহাওয়ালপুরে জইশের ঘাঁটিতে হামলা চালায়। বাহাওয়ালপুরে হামলায় আজহারের পরিবারের ১০ সদস্য নিহত হন, যার মধ্যে তার ভগ্নিপতি ইউসুফ আজহারও ছিলেন। ইউসুফের স্ত্রী সাদিয়া আজহারকে পরবর্তী সময়ে সংগঠনের নারী শাখা জামাত-উল-মুমিনাত-এর দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি ও তার বোন সামাইরা আজহার অনলাইনে নারীদের জিহাদি প্রশিক্ষণ ক্লাস চালু করেন। এখন দিল্লি বিস্ফোরণের সঙ্গে এই নারী শাখার দুটি যোগসূত্র পাওয়া গেছে।
প্রথমটি হলো হামলায় জড়িত জইশের সন্ত্রাসী চক্র, দ্বিতীয়টি শাহীনা শাহিদ নামের এক নারী। তার মালিকানাধীন গাড়ি থেকে একটি অ্যাসল্ট রাইফেল ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। শাহীনা পেশায় চিকিৎসক এবং ফরিদাবাদের আল-ফালাহ হাসপাতালের সহকর্মী ডা. মুজাম্মিল শাকিলের সঙ্গে কাজ করতেন। দুজনকেই সোমবার গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, শাহীনা জইশের ভারতীয় নারী শাখার প্রধান। বিস্ফোরণটি ঘটান আরেক চিকিৎসক, ডা. উমর মোহাম্মদ, যিনি সহকর্মীদের গ্রেপ্তারের পর আতঙ্কে বোমা বিস্ফোরণ ঘটান। পুলিশের মতে, শিক্ষিত চিকিৎসকদের মাধ্যমে হামলা চালানো জইশের নতুন কৌশল হতে পারে।
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির ঐতিহাসিক লালকেল্লার কাছে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িতদের কেউ রেহাই পাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মঙ্গলবার ভুটানের থিম্পুতে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এই বার্তা দেন। এর আগে, সোমবার সন্ধ্যায় লালকেল্লা মেট্রোস্টেশনের কাছে ধীরগতিতে চলা একটি গাড়িতে শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে। এতে নয়জন নিহত ও অন্তত ২০ জন আহত হয়। ঘটনাস্থলটি ভারতের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র লালকেল্লার ঠিক পাশে হওয়ায় মুহূর্তেই পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার পর তদন্তে নেমেছে দেশটির একাধিক সংস্থা।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, আমাদের তদন্ত সংস্থাগুলো এই ষড়যন্ত্রের মূল পর্যন্ত পৌঁছাবে। যারা এই ঘটনার পেছনে আছে, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে দুই দিনের সফরে গিয়ে মোদি বলেন, আজ আমি এখানে এসেছি ভারাক্রান্ত হৃদয়ে। সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে যে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে, তা গোটা দেশকে স্তম্ভিত করেছে। নিহতদের পরিবারের প্রতি আমি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। সমগ্র দেশ তাদের পাশে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, সোমবার রাতজুড়ে আমি ঘটনাটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। তদন্তের প্রতিটি দিক আমি খতিয়ে দেখছি।
দিল্লিতে গাড়ি বিস্ফোরণের পর সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে ভারত। নয় রাজ্যে রেড এলার্ট জারির পাশাপাশি সীমান্ত এলাকা, গুরুত্বপূর্ণ শহর, ধর্মীয় স্থাপনাসহ বিমানবন্দরে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা তল্লাশি। হামলার কারণ ও সব ধরনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সিসিটিভি ফুটেজের ভিত্তিতে শনাক্ত করা হয়েছে সম্ভাব্য বোমা হামলাকারীকে। ফরিদাবাদের সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সঙ্গে তার যোগসূত্র ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে এনডিটিভি। নয়াদিল্লির লালকেল্লা মেট্রোস্টেশনের কাছে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় ভারতে অবস্থানরত মার্কিন ও ব্রিটিশ নাগরিকদের জন্য নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের দূতাবাস। সোমবার (সন্ধ্যায় নয়াদিল্লির ঐতিহ্যবাহী লালকেল্লার কাছে বিস্ফোরণের পর এসব সতর্কবার্তা জারি করা হয়। ওই সতর্কবার্তায় নাগরিকদের সতর্ক থাকতে এবং নির্দিষ্ট এলাকা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিধর দেশ দুটি। মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন দূতাবাস এক নিরাপত্তা বার্তায় নয়াদিল্লিতে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের লালকেল্লা ও চাঁদনি চকের আশপাশের এলাকা এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি বড় জনসমাগম থেকে দূরে থাকা, স্থানীয় গণমাধ্যমে হালনাগাদ খবর পর্যবেক্ষণ করা এবং সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে দূতাবাস। অন্যদিকে, বিস্ফোরণের ঘটনার পর যুক্তরাজ্য সরকারও ভারতের কিছু অঞ্চলে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন দপ্তর (এফসিডিও) ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে সব ধরনের ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছে। মূলত সীমান্ত এলাকায় সম্ভাব্য সশস্ত্র সংঘাতের আশঙ্কা উল্লেখ করে এই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

