ঢাকা রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫

জব্দ বিস্ফোরকেই বিস্ফোরণ, নিহত বেড়ে ৯

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২৫, ০১:৫৩ এএম

রাতের নিস্তব্ধতা চিরে আচমকা ভয়াবহ বিস্ফোরণের শব্দ। মুহূর্তে আগুনে ঘেরা থানা চত্বর, চারদিকে ধ্বংসস্তূপ আর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা দেহাংশ। এমনই বিভীষিকাময় দৃশ্য উঠে এসেছে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরের নওগাম থানার বিস্ফোরণের বিভিন্ন ভিডিওতে। থানা সংলগ্ন এক বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজেও ধরা পড়েছে বিস্ফোরণের সেই মুহূর্ত। তবে এসব ভিডিওর সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করা হয়নি। থানার ভেতরে ফরিদাবাদ থেকে বাজেয়াপ্ত বিপুল পরিমাণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট পরীক্ষা চলছিল। শুক্রবার রাতেই হঠাৎ ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, এ ঘটনায় অন্তত ৯ জন নিহত এবং ২৭ জন আহত হয়েছেন। মৃতদের মধ্যে অধিকাংশই পুলিশ ফরেনসিক কর্মকর্তা। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, থানার ভেতর আচমকা আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং বিস্ফোরণের ধাক্কায় ভবন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আরেক ভিডিওতে দেখা যায়, থানা চত্বরে ধোঁয়ার ঘনকুয়াশা, ধ্বংসস্তূপের মাঝে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রাণান্ত চেষ্টা চালাচ্ছেন আগুন নিয়ন্ত্রণে।

স্থানীয়রা জানান, বিস্ফোরণের শব্দ ১৫ কিলোমিটার দূর থেকেও শোনা গেছে। বিস্ফোরণে থানা এলাকা থেকে দেহ ও দেহাংশ ছিটকে পড়ে অন্তত ৩০০ মিটার দূর পর্যন্ত। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া দেহাবশেষ উদ্ধারেও হিমশিম খেতে হয়েছে উদ্ধারকারী দলকে। উল্লেখযোগ্যভাবে, সম্প্রতি ‘সন্ত্রাসীগোষ্ঠী’ জইশ-ই-মোহাম্মদের সমর্থনে পোস্টার লাগানোর অভিযোগে এক চিকিৎসক আদিল আহমেদকে গ্রেপ্তার করে নওগাম থানা। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই গত ১০ নভেম্বর ফরিদাবাদ থেকে উদ্ধার করা হয় ৩৬০ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট। সে দিন সন্ধ্যাতেই দিল্লির লালকেল্লার সামনে গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে। নিহত হন অন্তত ১৩ জন। ফরিদাবাদ থেকে বাজেয়াপ্ত সেই অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নওগাম থানায় রাখা হয়েছিল। ঠিক তারই নমুনা পরীক্ষা চলাকালীন ঘটে এই ভয়াবহ বিপর্যয়। কাশ্মীর পুলিশের ডিজিপি জানিয়েছেন, রাত ১১টা ২০ মিনিটে বিস্ফোরক পরীক্ষার সময়ই এই বিস্ফোরণ ঘটে। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ নেই বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। নিহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্য ছাড়াও তিনজন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ছিলেন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন ২৭ জন পুলিশ সদস্য এবং তিনজন স্থানীয় বাসিন্দা।

থানাটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, পাশাপাশি আশপাশের ভবনগুলোতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিস্ফোরণের কারণ খতিয়ে দেখতে চলছে তদন্ত।দিল্লির লাল কেল্লায় বিস্ফোরণের পর, সন্দেহভাজন চিকিৎসকের বাড়ি থেকে জব্দ বিস্ফোরকই এবার বিস্ফোরিত হলো ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের শ্রীনগরের একটি পুলিশ স্টেশনে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নয়জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ২৯ জন। যাদের অধিকাংশই পুলিশ কর্মকর্তা ও ফরেনসিক দলের সদস্য। পুলিশের ধারণা, ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসগুলো ঠিকমতো জোড়া লাগানো ছিল না, আর সেখান থেকেই এমন দুর্ঘটনা। দিল্লির লাল কেল্লায় ভয়াবহ গাড়ি বিস্ফোরণের তিন দিনের মাথায় আবারও বিস্ফোরণের কবলে ভারত। জম্মু-কাশ্মীরের শ্রীনগরের যে পুলিশ স্টেশন থেকে দিল্লির লাল কেল্লায় বিস্ফোরণের ঘটনার প্রথম সূত্র মিলেছিল, এবার দুর্ঘটনার কবলে সেই শ্রীনগরের নোওগাম স্টেশন।

আর বিস্ফোরণটি ঘটেছেও হরিয়ানা রাজ্যের ফরিদাবাদ থেকে জব্দ করা বিস্ফোরক পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময়। সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসী সংগঠন জইস-ই-মোহাম্মদের কিছু পোস্টার খুঁজে পায় পুলিশ। এর জেরে অক্টোবরে ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মতো মারাত্মক বিস্ফোরক। আটক করা হয় হয় বেশ কয়েকজন চিকিৎসককে। যারা হোয়াইট কলার টেরর ইকোসিস্টেমের মধ্যে থেকে বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো বলে ধারণা করে পুলিশ। তাদের দাবি, অক্টোবরে আটককৃত অনন্তনাগের সরকারি মেডিকেল কলেজের কর্মকর্তা ডাক্তার আদিল আহমেদ দিল্লির লাল কেল্লা বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের একজন সক্রিয় সদস্য।আদিলকে আটকের পর হরিয়ানার ফরিদাবাদের আল-ফালাহ মেডিকেল কলেজের আরেক চিকিৎসক মুজাম্মিল শাকিলকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। শাকিলের বাড়ি থেকে প্রায় তিন কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেড উদ্ধার করার কথা জানায় জম্মু-কাশ্মীর ও হরিয়ানা পুলিশের যৌথ দল।

এরপর লাল কেল্লা বিস্ফোরণের জেরে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে চলে যায় ভারত। শুরু হয় তদন্ত। জব্দ করা বিস্ফোরক আর আটককৃত ওই চিকিৎসকদের সঙ্গে লাল কেল্লা বিস্ফোরণের সরাসরি যোগসূত্র পান তদন্তকারী কর্মকর্তারা। ঘটনাচক্রে গেল শুক্রবার রাতে ফরিদাবাদ থেকে উদ্ধার করা ওই বিস্ফোরক পদার্থের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয় নোওগাম পুলিশ স্টেশনে।

দুর্ঘটনাবশত সেখানেই ঘটে গেছে আরেক বিস্ফোরণ।পুলিশের সূত্র বলছে, শুক্রবার রাতে শ্রীনগরের স্থানীয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে এ বিস্ফোরকের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিলেন ফরেনসিক দলের সদস্যরা। কিন্তু ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসগুলো খুব তাড়াহুড়ো করে জোড়া লাগানো হয়েছিল। এগুলা নাড়াচাড়া করতে গিয়ে ফরেনসিক বিভাগ বুঝতে পারেনি, যেকোনো সময় এখান থেকে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলেই বেশ কয়েকজনের প্রাণহানি হয়েছে।