গত সপ্তাহজুড়ে দেশের শেয়ারবাজারে টানা দরপতন হয়েছে। এতে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে তার ২১ গুণ বেশির। এমন দরপতনের ফলে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা কমে গেছে। সেই সঙ্গে মূল্য সূচকের বড় পতন হয়েছে। পাশাপাশি দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাত্র ১৭টির স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৬৩টির আর তিনটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ, দাম বাড়ার তুলনায় দাম কমার তালিকায় ২১ দশমিক ৩৫ গুণ বেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
দরপতনের তালিকা এমন বড় হওয়ায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা, যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৬ লাখ ৯০ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ, সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ১৬ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে ৮ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা এবং তার আগের সপ্তাহে কমে ৫ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ, তিন সপ্তাহের পতনে বাজার মূলধন ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি কমে গেছে।
বাজার মূলধন কমার পাশাপাশি ডিএসইতে প্রধান মূল্য সূচকও কমেছে। ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স সপ্তাহজুড়ে কমেছে ২৬৫ দশমিক ২৫ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১৫৪ দশমিক ২৮ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ এবং তার আগের সপ্তাহে কমে ২৭ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট বা দশমিক ৫৪ শতাংশ। অর্থাৎ, তিন সপ্তাহের পতনে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ৪৪৭ পয়েন্ট কমে গেছে।
অপর দুই সূচকের মধ্যে ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে কমেছে ৬২ দশমিক ২৬ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৪৩ দশমিক ৪২ পয়েন্ট বা ৪ দশমিক শূন্য শতাংশ এবং তার আগের সপ্তাহে কমে ৫ দশমিক ৯২ পয়েন্ট বা দশমিক ৫৪ শতাংশ। আর বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে কমেছে ৮৯ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট বা ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৪৭ দশমিক ১৪ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং তার আগের সপ্তাহে কমে ১০ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট বা দশমিক ৫২ শতাংশ।
এদিকে, গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেনের গতিও কমেছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩৫৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৪৮৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ, প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ১৩০ কোটি ৯ লাখ টাকা বা ২৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে সামিট এলায়েন্স পোর্টের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ১৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ১১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশন। এ ছাড়া লেনদেনের শীর্ষদশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছেÑ বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ডমিনেজ স্টিল বিল্ডিং, মনোস্পুল পেপার, খান ব্রদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ এবং রানার অটোমোবাইল।
এদিকে চলতি মাসের ৬ নভেম্বর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) শীর্ষ বাজার মূলধনের তালিকা পর্যালোচনায় দেখা যায়, শীর্ষ ১০ কোম্পানির সম্মিলিত বাজার মূলধনে কমেছে ২১৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।
এর মধ্যে শীর্ষ চার বহুজাতিক কোম্পানির ক্ষতিই ছিল সবচেয়ে বেশি। এসব কোম্পানি হলোÑ গ্রামীণফোন-জিপি, রবি আজিয়াটা, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো এবং বার্জার পেইন্টস। কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় লোকসান হয়েছে রবি আজিয়াটার, যা এক সপ্তাহে হারিয়েছে ১০৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকার বাজার মূলধন। সপ্তাহের শুরুতে কোম্পানিটির শেয়ার ছিল ২৯ টাকা, যা বিদায়ি সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে নেমে আসে ২৭ টাকায়। এরপর রয়েছে গ্রামীণফোন, যার বাজার মূলধন কমেছে ৭৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা। একই সময়ে এর শেয়ারদর ২৮২ টাকা ৮০ পয়সা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২৭৭ টাকা ২০ পয়সায়। ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো এক সপ্তাহে হারিয়েছে ৩৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকার বাজার মূলধন। ৬ নভেম্বর কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছিল ২৪৭ টাকা ৫০ পয়সায়, যা ১৩ নভেম্বর নেমে আসে ২৪০ টাকা ৪০ পয়সায়। অন্যদিকে, বার্জার পেইন্টস সপ্তাহজুড়ে হারিয়েছে ৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকার বাজার মূলধন। আগের সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে শেয়ারদর ছিল ১৪১৯ টাকা ৫০ পয়সা, যা বিদায়ি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার নেমে এসেছে ১৪০১ টাকা ২০ পয়সায়।

