ঢাকা বুধবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৫

অভাব-অনাহারে দিন কাটছে মৃৎশিল্পীদের

আহাদ তালুকদার, আগৈলঝাড়া
প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২৫, ০১:২৩ এএম
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় মাটির সামগ্রী তৈরিতে ব্যস্ত এক কারিগর

বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য মাটির তৈরি সামগ্রীর চাহিদা কমতে থাকায় প্রাচীন এই শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। আধুনিক জিনিসপত্রের ভিড়, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকা এবং মাটির দাম বৃদ্ধিসহ নানা সংকটে এ শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে বলে জানিয়েছেন মৃৎশিল্পীরা।

মৃৎশিল্প বাঙালির হাজার বছরের পুরোনো ঐতিহ্য হলেও কালের বিবর্তনে কমে যাচ্ছে এই শিল্পের প্রসার। অনেকে এ পেশায় থাকলেও মাটির সামগ্রীর চাহিদা না থাকায় অভাব-অনটনে সংসার চালাতে পারছেন না তারা। এক-আধাবেলা খেয়ে দিনানিপাত করছেন অনেক মৃৎশিল্পী। একসময়ের কর্মব্যস্ত কুমারপাড়ায় এখন শুনশান নীরবতা।

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার টরকী বন্দর এলাকার পালপাড়ার অসংখ্য পরিবার এ পেশার সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। জেলার অন্য এলাকার মাটি বেলে ও দোআঁশ হওয়ায় আগৈলঝাড়া ও উজিরপুর থেকে মাটি সংগ্রহ করে এসব সামগ্রী তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকতেন মৃৎশিল্পীরা। কিন্তু বর্তমানে প্রায় ৫০টি পরিবারেরও বেশি মানুষ এ পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়েছেন।

টরকী বন্দরের পালপাড়ার মৃৎশিল্পী বিকাশ পাল বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে বংশপরম্পরায় আমরা মাটির জিনিস তৈরি করে আসছি। কিন্তু আমাদের উন্নয়নে বা আর্থিক সহায়তায় সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সরকারি ও বিভিন্ন এনজিও বা সমিতি থেকে সহযোগিতা পেলে হয়তো বাপ-দাদার আমলের স্মৃতি ধরে রাখা সম্ভব হতো।’

রগু পাল বলেন, ‘এ শিল্পের জন্য আড়াই শতক (১ কাঠা) মাটি কিনতে লাগে ৫০ হাজার টাকা। তার পরেও এই মাটি অনেকেই দিতে চায় না। মাটি না পেলে তো জিনিসপত্র বানানো যাবে না।’

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নানামুখী সংকটের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প। ফলে এর ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। স্টিল, চিনা মাটি, মেলামাইন ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্র বাজারে আসার পর মানুষ আর মাটির তৈরি হাঁড়ি, থালা, গ্লাস, মসলা বাটার পাত্র, মাটির ব্যাংক ও খেলনাসামগ্রী ইত্যাদি ব্যবহার করছেন না। এখন শুধু গবাদি পশুর খাবারের জন্য গামলা (নান্দা), কলস, মাটির ব্যাংক, মাটির পাতিল ও সংখ্যালঘুদের পূজা-পার্বণের জন্য নির্মিত কিছু সামগ্রীর চাহিদা রয়েছে। গ্রামাঞ্চলের অনেক মানুষ অবশ্য এখনো দৈনন্দিন প্রয়োজনে কিছু মাটির তৈরি পাত্র ব্যবহার করেন।

গিতা বালা নামে এক নারী মৃৎশিল্পী জানান, প্রথমে মাটি তৈরি করে তারপর বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরি করতে হয়। মাটির তৈরি এসব সামগ্রী শুকানো, রঙ করাসহ পুরোপুরি প্রস্তুত করতে ৭ দিন সময় লাগে। পরে এসব সামগ্রী বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হয় দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

মাহিলারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান (ইউপি) সৈকত গুহ পিকলু জানান, চাহিদা কমতে থাকায় এবং দূরের এলাকা থেকে বেশি দামে মাটি কিনতে হয় বলে মৃৎশিল্পীরা দিন দিন এই পেশায় আগ্রহ হারাচ্ছেন। তবে কিছু পরিবার বংশপরম্পরার কারণে এখনো এ শিল্প ধরে রেখেছেন। সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হলে বাঙালির ঐতিহ্যময় এ শিল্প বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।