ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

রহস্য আর রোমাঞ্চে ঘেরা যাত্রা

মির্জা হাসান মাহমুদ
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫, ০১:১২ এএম

সবাই জানে সমুদ্র মানেই রহস্য। আর এটাও জানে রহস্য মানেই রোমাঞ্চ। দূর সমুদ্রের অজানা প্রাণীদের নিয়ে মানুষের কৌতূহল বহু পুরোনো। নেটফ্লিক্সের অ্যানিমেটেড সিনেমা ‘দ্য সি বিস্ট’ সেই কৌতূহলকে আরও রঙিন করে তুলেছে এক অসাধারণ গল্পে। তোমাদেরও নিশ্চয় রয়েছে সমুদ্র নিয়ে এমন কৌতূহল! যদি থেকে থাকে, তবে চলো আজকে একটি সিনেমার গল্প বলি। আগেই বলে নিই, এই সিনেমাটি কিন্তু শিশুদের পাশাপাশি বড়দের মনও ছুঁয়ে যায়। তাই যে কেউ এটি দেখতে পারে। সিনেমায় গল্পের শুরুতেই আমরা পরিচিত হই এক সাহসী সমুদ্রযোদ্ধার সঙ্গে; যার নাম জেকব হল্যান্ড।

যে সময়ের কথা গল্পে বলা হয়েছে, সেই সময় সমুদ্রে বিশাল বিশাল দানব বাস করত। গল্পের নায়ক জেকব সমুদ্রের ভয়ংকর সেই দানব শিকার করে জীবন কাটায়। তার মতো দানব শিকারিরা তখনকার সময়ে ছিল একেকজন বীর। শহরের মানুষ তাদের দারুণ সম্মান করত, কারণ সাগরের দানব থেকে নাকি তারা মানুষকে বাঁচাত। কিন্তু গল্প একসময় ঘুরে যায়। একদিন মেইসি নামের ছোট্ট একটি মেয়ে গোপনে জেকবের জাহাজে উঠে পড়ে। মেইসি অনেক সাহসী। সে বুদ্ধিমানও বটে। তার চরিত্র দুষ্টুমিতে ভরা। সে বিশ্বাস করে, সমুদ্রের দানবরা আসলে খারাপ নয়। মানুষের ভুল ধারণার কারণে তাদের দানব বলা হয়। তার এই বিশ্বাস থেকেই সিনেমায় শুরু হয় দারুণ এক দ্বন্দ্ব। কে আসল দানব? সমুদ্রের প্রাণী, নাকি মানুষ নিজেরাই?

সিনেমার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো লাল রঙের বিশাল একটি সমুদ্রদানব; যাকে রেড বিস্ট নামে ডাকা হয়। সিনেমায় প্রথমে তাকে ভয়ানক চরিত্রে উপস্থাপন করা হলেও ধীরে ধীরে বোঝা যায় সে আসলে কারো ক্ষতি করতে চায় না। জেকব ও মেইসি যখন রেড বিস্টের সত্যিকারের রূপ দেখে, তখন তাদের বিশ্বাস ও জীবনদর্শন পুরো বদলে যায়। এখানেই সিনেমাটির মূল শিক্ষা।

এই সিনেমা থেকে আমরা শিখতে পারি, কাউকে না জেনে তাকে দোষী ভাবা উচিত নয়। ২০২২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত দ্য সি বিস্ট সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন ক্রিস উইলিয়ামস। তিনি আগে ডিজনির জনপ্রিয় অ্যানিমেশন ‘বিগ হিরো ৬’ এবং ‘মোয়ানা’-এর সহ-পরিচালক ছিলেন। তার হাত ধরে এই সিনেমাটিতেও আমরা পাই দুর্দান্ত অ্যানিমেশন, গভীর আবেগ ও রোমাঞ্চকর কাহিনি।

নেটফ্লিক্স দীর্ঘদিন ধরে নিজস্ব অ্যানিমেশন সিনেমায় রাজত্ব কায়েমের চেষ্টা করছে। দ্য সি বিস্ট সেই প্রচেষ্টার বড় সাফল্য। মুক্তির পরপরই এটি শিশুদের মধ্যে ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং সমালোচকদের কাছ থেকেও প্রশংসা পায়। এমনকি এটি অস্কারে সেরা অ্যানিমেটেড ফিচার বিভাগেও মনোনয়ন পেয়েছিল। সিনেমাটির চিত্রনাট্য যেমন রোমাঞ্চকর, তেমনই হৃদয় ছোঁয়া বার্তাও দেয়। বন্ধুত্ব, সাহস, ভালোবাসা এবং পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব মিলে সিনেমাটিতে তৈরি হয়েছে সুন্দর একটি জগৎ। অ্যানিমেশনের মান এত সুন্দর যে, মনে হয় সত্যিই বিশাল সমুদ্রে ভেসে চলা এক জাহাজে বসে আছি। সব কিছুই জীবন্ত মনে হয়। রঙের ব্যবহারও চোখে লেগে থাকে অনেকক্ষণ। ‘দ্য সি বিস্ট’ শিশুদের কল্পনার দুনিয়া আরও সমৃদ্ধ করে। যারা জলদস্যুর গল্প, সমুদ্রের অভিযান বা অজানা প্রাণীর কাহিনি পছন্দ করে, তাদের জন্য এই সিনেমা দারুণ উপভোগ্য হবে।