আষাঢ় শেষে শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি, বাংলা বর্ষাকালের ভরা সময়। অথচ দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় এখনো উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি। হালকা দু-এক ফোঁটা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ছাড়া ভারি বৃষ্টির দেখা নেই। ফলে আমন ধানের চারা রোপণের ভরা মৌসুমেও খেতে পানি দিতে হিমশিম খাচ্ছেন কৃষকেরা।
বৃষ্টির অভাবে কেউ কেউ সেচের মাধ্যমে জমি প্রস্তুত করছেন, কেউ ডোবা-নালা থেকে পানি তুলে কোনোমতে চারা রোপণের চেষ্টা করছেন। এতে ব্যয় বেড়ে গেছে দ্বিগুণেরও বেশি। চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন কৃষকেরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি রোপা আমন মৌসুমে ফুলবাড়ীর সাতটি ইউনিয়ন ও পৌরসভা মিলিয়ে ১৮ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্য ৫৬ হাজার ৭১৮ টন। কিন্তু বৃষ্টির স্বল্পতায় নির্ধারিত সময়মতো রোপণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের কৃষক শাহিনুর ইসলাম বলেন, ‘এক একর জমিতে ধান লাগাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পানির অভাবে সেচ দিতে হচ্ছে। এতে ১৬ হাজার টাকার মতো খরচ হবে।’
আলাদীপুর ইউনিয়নের কৃষক আমিনুল ইসলাম জানান, ‘সাড়ে তিন একর জমির মধ্যে দুই একরে শ্যালোমেশিনে পানি তুলে চারা রোপণের পরিকল্পনা করেছি। তবে কিছু জাত আছে যেগুলো দেরি করে লাগালে ফলন কমে যাবে, তাই সময়ের মধ্যেই লাগাতে হবে।’
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, ‘উপজেলায় ১১৩টি গভীর নলকূপের মধ্যে ৫৯টি সচল রয়েছে। এগুলো থেকে কৃষকদের ঘণ্টাপ্রতি ১৩০ টাকায় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। কিছু এলাকায় ট্রান্সফরমার চুরির কারণে কিছু নলকূপ বন্ধ রয়েছে, তবে দ্রুত সেগুলো চালু করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, চলতি মাসের ২৫ জুলাইয়ের পর বৃষ্টিপাত বাড়তে পারে। এর আগে ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা খুবই কম।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. শাহানুর রহমান বলেন, ‘বৃষ্টি কম হলেও এখনো আমন চাষাবাদের যথেষ্ট সময় আছে। সাধারণত ২০ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত আমন রোপণ করা যায়। এ ছাড়া আমাদের অঞ্চলে ব্রি-৩৪ জাতের সুগন্ধি ধানের চাষ হয়, যেটির লাগানোর সময় এখনো রয়েছে।’
তবে প্রকৃতির এমন বৈরী আচরণে কৃষকরা আতঙ্কে রয়েছেন, সময়ের মধ্যে আমন রোপণ না করতে পারলে ফলন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা করছেন তারা।