সদ্য বিদায়ি অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) দেশে মূলধনি যন্ত্রের আমদানি কমেছে ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য বা ব্যালান্স অব পেমেন্টের (বিওপি) হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় উদ্যোক্তারা বিনিয়োগমুখী হচ্ছেন না। প্রতিফলন হিসেবে দেশে মূলধনি যন্ত্রের আমদানি কমেছে। এর প্রভাবে সামগ্রিকভাবে চাহিদা কমেছে ডলারের। ফলে ডলারের দাম কমে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের জুলাই থেকে মে এই ১১ মাসে মূলধনি যন্ত্র আমদানি হয়েছে ২৬২ কোটি ২৪ লাখ ডলারের। এর আগের অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ৩২৫ কোটি ৯৫ লাখ ডলারের। এ হিসেবে অর্থমূল্য বিবেচনায় এক বছরের ব্যবধানে মূলধনি যন্ত্রের আমদানি কমেছে ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের উইকলি সিলেকটেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরসে এখনো গত অর্থবছরের ১১ মাসের তথ্য হালনাগাদ হয়নি। ১০ মাসের (জুলাই থেকে এপ্রিল) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মূলধনি যন্ত্রের এলসি ওপেনিং বা আমদানির লক্ষ্যে ঋণপত্র খোলা কমে যাওয়ার পাশাপাশি ঋণপত্র নিষ্পত্তিতেও ঋণাত্মক বা নেতিবাচক পরিস্থিতি উঠে এসেছে। দেখা যাচ্ছে ১০ মাসে মূলধনি যন্ত্রের এলসি ওপেনিং কমেছে ২৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ। নিষ্পত্তি কমেছে ২৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের বোর্ড অব গভনর্সের সদস্য সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মূলধনি যন্ত্রের আমদানি আগে থেকেই কমছিল। এটা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গিয়েছিল। এখন বরং কমার সেই হার কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। ডলারের দাম কমে যাওয়ার পেছনেও এটা অন্যতম কারণ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে কিছুটা উন্নতি হয়েছে, তারপরও এখানে-সেখানে রাজনৈতিক কিছু ঘটনা ঘটছে। সামগ্রিকভাবে আস্থার ঘাটতি এখনো রয়ে গেছে। নির্বাচনের অপেক্ষাও রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে নির্বাচন হয়ে গেলে হয়তো কিছুটা স্ট্যাবিলিটি আসবে। তখন বিনিয়োগ হবে। মূলধনি যন্ত্রের আমদানিও বাড়বে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, দেশে আমদানি হওয়া ক্যাপিটাল মেশিনারি বা মূলধনি যন্ত্রের উল্লেখযোগ্য খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে টেক্সটাইল, লেদার/ট্যানারি, জুট, গার্মেন্ট, ফার্মাসিউটিক্যাল ও প্যাকিং। ১০ মাসে টেক্সটাইল মেশিনারি আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা কমেছে ২২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। এ খাতে ঋণপত্র নিষ্পত্তি কমেছে ২৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। লেদার/ট্যানারি খাতে ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা কমেছে ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ। আর ঋণপত্র নিষ্পত্তি কমেছে দশমিক ৫৩ শতাংশ। জুট ইন্ডাস্ট্রির মেশিনারি আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা কমেছে ৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এ খাতে ঋণপত্র নিষ্পত্তি কমেছে ১৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এ ছাড়া ফার্মাসিউটিক্যাল ও প্যাকিং ইন্ডাস্ট্রির মূলধনি যন্ত্র আমদানিও কমেছে।