ঢাকা মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা উধাও

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫, ০৭:২৭ এএম
ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা উধাও

সম্প্রতি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের একাধিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী একই ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। হঠাৎ করেই তাদের ফোনে ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) মেসেজ আসার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ব্যাংক কার্ড থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা গায়েব হয়ে যায়। অথচ কোনো ব্যবহারকারীই ওটিপি শেয়ার করেননি, কিংবা সন্দেহজনক ওয়েবসাইট/অ্যাপ ব্যবহার করেননি। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক এই ঘটনায় দায় স্বীকার না করে সরাসরি বলেছে, ব্যাংকের সিস্টেমসমূহ, যার মধ্যে ইন্টারনেট ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত, কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। একইসঙ্গে এ ঘটনায় মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসে (যেমন বিকাশ, নগদ) ডিজিটাল লেনদেনের ওপর দায় চাপিয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। 

হাসিন হায়দার নামে একজন ভুক্তভোগী জানান, গত ২৬ আগস্ট রাত ৭:৪৩ মিনিটে আমার ফোনে দুটি ওটিপি আসে। আমি কোনো ওয়েবসাইটে লগইন করিনি, কেউ ওটিপি চাইনি। কয়েক সেকেন্ড পরেই দেখি ৫০,০০০ টাকা আমার কার্ড থেকে বিকাশে ট্রান্সফার হয়ে গেছে। এটা কীভাবে সম্ভব? ঘটনার পরপরই গ্রাহক হাসিন হায়দার কার্ড ব্লক করার চেষ্টা করলেও ব্যাংকের হেল্পলাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। একজন গ্রাহক জানান, জরুরি অবস্থায় কার্ড ব্লক করার জন্য কোনো সরাসরি অপশন নেই। কল সেন্টারের একেকজন একেক ধরনের তথ্য দিচ্ছে। কেউ বলছে স্টেটমেন্ট না আসা পর্যন্ত অভিযোগ নেওয়া যাবে না, আবার কেউ বলছে এখনই নেওয়া যাবে। তবে শেষ পর্যন্ত আমার অভিযোগটি তারা গ্রহণ করেছে। আমার কমপ্লেইন কেস নাম্বার ২০২৫০৮২৬৯৭৮৫৪৩। এটা সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খল। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক প্রথম থেকেই দায় স্বীকার না করে সরাসরি বলেছে, ওটিপি ব্যবহার হয়েছে, তাই ব্যাংকের কিছু করার নেই।

অন্যদিকে, সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, ওটিপি গ্রাহকের ফোনে পৌঁছানোর পর যদি সেকেন্ডের মধ্যে ট্রানজেকশন সম্পন্ন হয়, তবে ব্যাংকের সিস্টেম বা কোনো অভ্যন্তরীণ অসৎ কর্মীর সম্পৃক্ততা থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোতে ‘তবৎড় খরধনরষরঃু চড়ষরপু’ থাকে, যেখানে গ্রাহক ওটিপি বা কার্ড ডেটা শেয়ার না করলে ব্যাংক পুরো দায় নেয়। বাংলাদেশেও একই নিয়ম কার্যকর করা জরুরি। ভুক্তভোগীরা বিষয়টি ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে রিপোর্ট করেছেন। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এরই মধ্যে ফেসবুক ও লিংকডইনে অনেক গ্রাহক একই ধরনের প্রতারণার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন।’ ভুক্তভোগীরা বলছেন, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের নিরাপত্তা দুর্বলতাগুলো তদন্ত করে দেখা হোক। গ্রাহকের টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে কার্ড ব্লক করার বিকল্প ব্যবস্থা (মোবাইল অ্যাপ/ইন্টারনেট ব্যাংকিং) চালু করতে হবে এবং বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের ভোক্তা সুরক্ষা নীতি কার্যকর করতে হবে।

রূপালী বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে গতকাল রোববার ই-মেইল পাঠানো হয় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের কাছে। জবাবে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ওয়েলথ অ্যান্ড রিটেইল ব্যাংকিং প্রধান লুৎফুল হাবিব জনান, ‘আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অন্যান্য মাধ্যমে প্রকাশিত কিছু সাম্প্রতিক কথিত প্রতারণার রিপোর্ট সম্পর্কে অবগত, যেগুলো মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসে (যেমন বিকাশ, নগদ) ডিজিটাল লেনদেনের সাথে সম্পর্কিত। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড-এ আমাদের গ্রাহকদের আস্থা ও আর্থিক নিরাপত্তা রক্ষা করাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। আমাদের প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, রিপোর্ট হওয়া এসব লেনদেন বহিরাগত সিস্টেম থেকে এসেছে এবং ওটিপি (ঙঞচ) দিয়ে যাচাই করা হয়েছে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সিস্টেমসমূহ, যার মধ্যে আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত, কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। আমরা আমাদের কার্ডধারীদের সতর্ক করেছি যেন তারা তাদের এক্সেস এবং এ ধরনের পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রমাণীকরণ ব্যবস্থা সুরক্ষিত রাখেন। এসব ঘটনার তথ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে এবং তারা বিষয়টি নিয়ে আরও তদন্ত করবে। আমরা আমাদের গ্রাহকদের পাশে আছি এবং এ বিষয়ে অতিরিক্ত কোনো তথ্য পাওয়া গেলে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।’