বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫, ১২:৪৩ এএম

২ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫, ১২:৪৩ এএম

২ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ব্যবসা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছে বা মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু ও চাঙা করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোক ২ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ দিয়েছে। এই ঋণের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ১০ বছর। ঋণ নিয়মিত হলে শুরুতে দুই বছর ঋণ পরিশোধে বিরতি সুবিধা পাওয়া যাবে। এই সুবিধা পেতে চাইলে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে আবেদন করতে হবে।

খেলাপি ব্যবসায়ীদের ঋণ পুনঃতপশিল করার সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ গতকাল মঙ্গলবার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ পুনঃতপশিলের আবেদন পাওয়ার পর ছয় মাসের মধ্যে ব্যাংককে তা নিষ্পত্তি করতে হবে। ঋণ পুনঃতপশিলের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। একইভাবে এককালীন ঋণ পরিশোধ করা যাবে। এ ক্ষেত্রে এক বছর সময় পাবেন গ্রাহকেরা। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো অনাপত্তি নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। এর ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে যেসব ব্যবসায়ী চাপে ছিলেন এবং বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, তারা সুবিধা পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

দেশে গত জুন মাসের শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ২৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। দেশে এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ লাখ কোটি টাকার বেশি।

কেন এই সুবিধা

ঋণ নিয়মিত করার সুবিধা দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের আগে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী অনেক ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে স্বাভাবিক ব্যাবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়। এতে ঋণ বা ঋণের কিস্তি পরিশোধে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয় প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের কেউ কেউ ঋণসংশ্লিষ্ট ব্যাংকিং ও আনুষঙ্গিক সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে অব্যাবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গির শিকার হয়ে স্বাভাবিক ব্যাবসায়িক কর্মকা- চালাতে পারেনি। এতে তারা খেলাপি হয়ে পড়ে। অন্যদিকে ব্যাংকের ঋণ আদায় কার্যক্রমে বিরূপ প্রভাব পড়ে, যা সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংক খাতের আর্থিক কাঠামোকে ঝুঁকির সম্মুখীন করেছে।

এমন প্রেক্ষাপটে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের পুনর্গঠন, ব্যাংক খাতে কাক্সিক্ষত গতি ফিরিয়ে আনা এবং দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে গতি ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়। বিভিন্ন কারণে বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থায় বিঘœ থেকে সৃষ্ট অভিঘাত এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে দেশি টাকার বিনিময় হার অপ্রত্যাশিতভাবে কমে যাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানও এই সুবিধার জন্য আবেদন করার যোগ্য হবে। ইতিপূর্বে ঋণ পুনঃতপশিল, পুনর্গঠন ইত্যাদি সুবিধা যেসব প্রতিষ্ঠান পায়নি, তাদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এই নীতিসহায়তা দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ব্যাংকার ও গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বিদ্যমান খেলাপি ঋণের স্থিতির ওপর কমপক্ষে ২ শতাংশ নগদে অর্থ জমা দিতে হবে। তাতে ঋণ নিয়মিত হলে দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ (ঋণ পরিশোধে বিরতি) তা পরিশোধে ১০ বছর সময় পাওয়া যাবে। তবে ইতিপূর্বে ঋণ তিন বা তার চেয়ে বেশিবার পুনঃতপশিল করা হলে অতিরিক্ত ১ শতাংশ অর্থ জমা দিতে হবে। পরবর্তী সময়ে ব্যাংকের নির্ধারিত ঋণ পরিশোধের সূচি অনুযায়ী তিনটি মাসিক কিস্তি বা একটি ত্রৈমাসিক কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, আগে যেসব অর্থ জমা দেওয়া হয়েছে, তা ২ শতাংশ হিসেবে গণ্য হবে না। নতুন করে ২ শতাংশ অর্থ জমা দেওয়ার পর তা নগদায়ন হলে এরপর ছয় মাসের মধ্যে আবেদনটি নিষ্পত্তি করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতার ক্ষতির পরিমাণ ও প্রতিষ্ঠানের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা যথাযথভাবে বিবেচনায় নিয়ে ঋণ পুনঃতপশিল করতে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, এই সুবিধা দেওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে ব্যাংক ও গ্রাহকের সোলেনামার মাধ্যমে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে চলমান মামলার কার্যক্রম স্থগিতের ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনো গ্রাহক সুবিধার কোনো শর্ত ভাঙলে তার পাওয়া সব সুবিধা বাতিল হবে। এমনকি ঋণ আদায়ে ব্যাংক প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে।

নির্দেশনা অনুযায়ী, ৩০০ কোটি বা তার বেশি ঋণের ক্ষেত্রে নীতি সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিয়ে ব্যবসা ও আর্থিক ব্যবস্থাদি পুনর্গঠনের লক্ষ্যে গঠিত নীতি সহায়তাসংক্রান্ত বাছাই কমিটির কাছে আবেদন করতে হবে। জালজালিয়াতি বা অন্য কোনো প্রতারণা বা অনিয়মের মাধ্যমে নেওয়া ঋণ কিংবা ব্যাংক কর্তৃক চূড়ান্তভাবে ঘোষিত ইচ্ছাকৃত খেলাপি গ্রাহকেরা এই ঋণসুবিধা পাবেন না।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান বলেন, দেশের ভালো ব্যবসায়ীদের অনেকেই ভুগছেন। তারা ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছেন। কখন নির্বাচন হবে, এ জন্য অপেক্ষা করছেন। কেউ কেউ পালিয়েছেন, আবার কেউ জেলে আছেন। দেশের জিডিপি ও কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখতে পারেন এমন ব্যবসায়ীদের জন্য এই সুবিধা প্রয়োজন ছিল। এতে তারা ব্যবসায়ে ফিরতে পারবেন বা গতি বাড়াতে পারবেন। অনেক রাজনীতিবিদও এই সুবিধা পাবেন। সামনে নির্বাচন। এ জন্য সবাই ঋণ নিয়মিত করার চেষ্টা করবেন। তারাও সুবিধাটি পাবেন। স্বাভাবিক সময়ে ব্যাংকের জন্য এত ছাড়ে ঋণ নিয়মিত করাটা চাপের হলেও এখনকার পরিস্থিতিতে ঠিক আছে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!