স্বাদ, পুষ্টিগুণে দেশি ফলের ভালো বিকল্প এখনো কেবল দেশি ফলই। এটি হয়তো দেশে থেকে অনেকে বুঝতে পারেন না। সে কারণে আনারস না কিনে আপেল কেনেন। পেওলার পরিবর্তে চেরি। দেশি ফলের গুরুত্বটা ঠিকই বুঝতে পারেন প্রবাসীরা। বারো মাসই দেশের মৌসুমি ফলের অপেক্ষায় থাকেন তারা। বিদেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দোকানে খোঁজখবর রাখেন। অতিমারি করোনার পর এই প্রবণতা অনেক বেড়েছে। তথ্য-উপাত্তও সে কথাই বলছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরাই দেশ থেকে রপ্তানি করা ফলমূলের প্রধান ভোক্তা। বিদেশিরাও বাংলাদেশের সুস্বাদু ফল খেতে পছন্দ করেন।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ তথ্য-উপাত্তে দেখা যায়, গত নভেম্বরে বিভিন্ন ধরনের ফলমূলে রপ্তানি বেড়েছে ১৩৪ শতাংশ। অবশ্য রপ্তানি পরিমাণে খুব বেশি নয়। ১ কোটি ১৩ লাখ ডলারের মতো। টাকায় যা ১৪০ কোটির মতো। গত বছরের নভেম্বরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪৯ লাখ ডলারের কিছু বেশি। অক্টোবর মাসের চেয়ে অবশ্য নভেম্বর রপ্তানি কম হয়েছে ৪১ শতাংশ। অন্যদিকে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত গত পাচ মাসে গড়ে রপ্তানি বেড়েছে ১৩১ শতাংশ। এই পাচ মাসে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল রপ্তানি থেকে আয় এসেছে ৬ কোটি ৪১ লাখ ডলার, অর্থাৎ ৭৮২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল দুই কোটি ৬২ লাখ ডলার। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রপ্তানির এ পরিমাণ ছিল ছয় কোটি ৭৫ লাখ ডলার।
কৃষিপণ্য ক্যাটাগরির আওতায় ফল রপ্তানি হয়ে থাকে। এই ক্যাটাগরিতে ১০ ধরনের কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে পাঁচ মাসে ছয় ধরনের পণ্যের রপ্তানিই কমেছে। ফলমূলের রেকর্ড ১৩১ শতাংশ রপ্তানির পরও কৃষিপণ্যের গড় রপ্তানি ইতিবাচক নয়। ইপিবির তথ্য-উপাত্তে দেখা যায়, ১০ উপখাত মিলে গত পাঁচ মাসে কৃষিপণ্যের রপ্তানি আয় কমেছে প্রায় ২ শতাংশ।
জানতে চাইলে ফল রপ্তানিকারক সানসারইজ ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী আব্দুল কিয়াম বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা বাংলাদেশের ফলের প্রধান ভোক্তা। বিভিন্ন দেশে স্থানীয় বাংলাদেশি দোকানগুলোতে সব সময় মৌসুমি ফলের অপেক্ষায় থাকেন তারা। বিশেষ করে বয়স্কদের এই প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এ কারণে বাংলাদেশি চাহিদা ভালো। তবে প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মান অর্জন করতে না পারা দীর্ঘদিন ফল রপ্তানিতে একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই জটিলতা কেটেছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় শ্যামপুরে একটি সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউস এবং একটি পরীক্ষাগার হয়েছে। এখান থেকে ফল ও সবজি রপ্তানির বিভিন্ন প্রক্রিয়াকরণ, যেমনÑ ধৌতকরণ, শীতলীকরণ, শুকানো ও মোড়কজাতকরণের সুবিধা দেওয়া হয়। ফলে রপ্তানিতে পণ্যের মান এবং প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে। এতে ইউরোপের মতো দেশেও রপ্তানিতে এখন আর সমস্যায় পড়তে হয় না। মূলত এ কারণেই ফলের রপ্তানি বেড়েছে। আগামীতে রপ্তানি আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
জানা গেছে, আম, কাঁঠাল, লিচু, মাল্টা, আনারস, পেয়ারা, ড্রাগন, লেবু, নারিকেল, আমড়া, জলপাইসহ ৩০ থেকে ৩৫ ধরনের ফল রয়েছে রপ্তানি তালিকায়। মধ্যপ্রাচ্যই ফলের প্রধান রপ্তানি বাজার। তবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, জাপান, কানাডাসহ ৪০টি দেশে রপ্তানি হয় বাংলাদেশের ফল। রপ্তানিকারকরা বলছেন, রপ্তানির জন্য ভালো মানের ফল উৎপাদনে উত্তম কৃষিচর্চা অনুসরণ, জমি থেকে ফল সংগ্রহ, আন্তর্জাতিক মানে প্যাকেজিং, সংরক্ষণ এসব প্রক্রিয়া জটিল। সাধারণ চাষির পক্ষে এ প্রক্রিয়াগুলোতে আন্তর্জাতিক মান ঠিক রাখা প্রায়ই সম্ভব হয় না। এ ছাড়া আকাশপথে পরিবহনে সময়মতো বিমান শিডিউল পাওয়া, অতিরিক্ত পরিবহন ব্যয়, মান সনদ প্রাপ্তি ও রপ্তানির প্রায় সব পর্যায়ে নানা দাপ্তরিক জটিলতা রয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে রপ্তানি আরও অনেক বাড়ানো সম্ভব।

