ফুল হলো সৌন্দর্যের প্রতীক। ফুল দেখলেই একধরনের শান্তি লাগে। গোলাপের পাপড়ির ভাঁজে যেমন লুকিয়ে থাকে স্নিগ্ধ কোমলতা, তেমনি বেলির সুবাসে খুঁজে পাওয়া যায় প্রশান্তি। ফুল শুধু নয়নে নয়, মনেও দেয় প্রশান্তির ছোঁয়া। রূপচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন হলো ফুলের আরেকটি আশ্চর্য ক্ষমতা। ত্বকের যত্নে ফুলের উপকারিতা অনেক। বিশেষ করে যারা প্রাকৃতিক উপায়ে স্কিন কেয়ার করতে চান, তাদের জন্য ফুলের ব্যবহার হতে পারে সহজ ও কার্যকর সমাধান। আদিকাল থেকেই রূপচর্চায় ফুলের ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রাচীন মিসরীয়, ভারতীয় ও চীনা সংস্কৃতিতে এর নিদর্শন রয়েছে। আধুনিক স্কিন কেয়ারে আমরা যেখানে কেমিক্যাল খুঁজি, সেখানে প্রকৃতি নিজেই আমাদের দিয়েছে ফুলের মতো এক দারুণ উপহার; যা সৌন্দর্য বাড়ায় ত্বকের গভীরে গিয়ে। চলুন জানা যাক, হাতের কাছে পাওয়া কিছু পরিচিত ফুল দিয়ে কীভাবে ত্বকের যত নেওয়া যায়। বিস্তারিত জানাচ্ছেন মির্জা হাসান মাহমুদ
গোলাপ
গোলাপকে সাধারণত ভালোবাসার চিহ্ন ভাবা হয়। তবে গোলাপ কিন্তু রূপচর্চার জন্যেও দারুণ এক উপাদান। ত্বকের পরিচর্যায় গোলাপজল অনেকের কাছেই খুব পরিচিত। গোলাপজল ত্বকের ব্যালান্স ঠিক রাখতে সাহায্য করে, ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে এবং ত্বককে আর্দ্র রাখে। গরমে বা রোদে বাইরে বের হওয়ার আগে মুখে গোলাপজল স্প্রে করলে বেশ আরাম লাগে। কয়েকটি তাজা গোলাপের পাপড়ি ফুটন্ত পানিতে দিয়ে ঢেকে রাখুন ১০ মিনিট। ঠান্ডা হলে ছেঁকে নিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন। একটি স্প্রে বোতলে ভরে দিনে ২-৩ বার মুখে স্প্রে করুন। এটি ত্বক সতেজ রাখতে সাহায্য করবে। সপ্তাহে দু’বার গোলাপজল ও চন্দনগুঁড়া মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখলে ত্বক উজ্জ্বল হয় এবং ব্রণ কমে। চাইলে গোলাপজলের সঙ্গে মুলতানি মাটি মিশিয়ে ফেসপ্যাক
বানিয়ে নেওয়া যায়।
গাঁদা
গাঁদা ফুলে থাকে অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান, যা ত্বকে ব্রণ বা র?্যাশের প্রবণতা কমাতে সাহায্য করে। যাদের মুখে ঘনঘন ব্রণ হয় বা চুলকানি দেখা দেয়, তারা গাঁদা ফুল ব্যবহার করে দেখতে পারেন। গাঁদা ফুল বেটে তার সঙ্গে এক চা চামচ মধু ও এক চা চামচ দই মিশিয়ে প্যাক বানান। মুখে লাগিয়ে
১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি সংক্রমণ প্রতিরোধ করে এবং ত্বককে ঠান্ডা করে।
জবা
জবা ফুল চুলের যতেœ বহুল ব্যবহৃত হলেও, এর রস ত্বকের জন্যেও খুব উপকারী। এতে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় ত্বকে বয়সের ছাপ পড়া কমায় এবং ত্বক টানটান রাখতে সাহায্য করে। জবা ফুল পেস্ট করে তাতে কিছুটা মুলতানি মাটি ও গোলাপজল মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করুন। এটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রাখুন। এই প্যাক আপনার ত্বককে করবে টানটান এবং বাড়াবে ত্বকের উজ্জ্বলতা।
বেলি
বেলি ফুলের সুবাস যেমন মন শান্ত করে, তেমনি এর নির্যাস ত্বককে করে মসৃণ। বেলি ফুলে রয়েছে প্রাকৃতিক তেলজাতীয় উপাদান যা ত্বকে হালকা ময়েশ্চারাইজিং দেয়। শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের জন্য এটি বেশ কার্যকর। বেলি ফুল বেটে নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে হালকা গরম করে নিন। এই তেল রাতে ঘুমানোর আগে ত্বকে ম্যাসাজ করুন। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক কোমল হবে এবং ত্বকের ফাটাভাব কমবে।
পদ্ম
ক্লেনজার, টোনার ও ময়েশ্চারাইজার; এই ত্রিমুখী ভূমিকা পালন করতে পারে পদ্ম ফুলের রস। ত্বকের রং উজ্জ্বল করতেও পদ্ম ফুলের জুড়ি নেই। পদ্ম ফুলের পাপড়ি বেটে রস ছেঁকে নিন। ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে এই রসে তুলো ভিজিয়ে ত্বকে লাগান। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। পদ্ম পাপড়ি চটকে নিয়ে চালের গুঁড়ার সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করুন। এটা স্ক্রাবার হিসেবে খুবই ভালো।
কাঁঠালি চাঁপা
দিনে গরম পড়লে অতিরিক্ত ঘাম ও ধুলাবালিতে ত্বক হয়ে পড়ে মলিন; বিশেষ করে যারা বাইরে বেশি থাকেন। এমন মলিন ত্বকে কাঁঠালি চাঁপার নির্যাস এনে দিতে পারে সতেজতা। কয়েকটি কাঁঠালি চাঁপা ফুল পেস্ট করে সঙ্গে শসার রস ও সামান্য বেসন মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করুন। এই প্যাক ত্বকে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি স্কিন টোন ইভেন করে এবং ক্লান্ত ভাব দূর করে। এ ছাড়া রোদে পুড়ে গেলে বা স্কিন জ্বালাপোড়া করলে কাঁঠালি চাঁপার পেস্ট ব্যবহার করলে আরাম পাওয়া যায়।
অপরাজিতা
অপরাজিতা ফুল অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এটি স্কিনের টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে এবং এক ধরনের ন্যাচারাল ডিটক্স হিসেবে কাজ করে। ২-৩টি অপরাজিতা ফুল পানিতে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে মুখ ধুতে পারেন। চাইলে পেস্ট করে মুখে লাগিয়েও রাখতে পারেন।
বিশেষ সতর্কতা
ফুল ব্যবহারের আগে নিশ্চিত হয়ে নিন আপনি এতে অ্যালার্জিক কি না। সবসময় তাজা ও রাসায়নিকমুক্ত ফুল ব্যবহার করুন। বাজার থেকে আনা ফুল অনেক সময় প্রিজারভেটিভে ভেজানো থাকে। যেকোনো কিছু মুখে লাগানোর আগে হাতের ওপর একটু লাগিয়ে পরীক্ষা করে নেওয়া ভালো। ফুলভিত্তিক ফেসপ্যাক বা টোনার নিয়মিত ব্যবহার করলেই ফল পাওয়া যাবে, একদিনেই পার্থক্য আশা করবেন না। ফেসপ্যাক বা টোনার ব্যবহারের আগে মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।