শহুরের জীবনের ব্যস্ততায় হাতের কাছেই এখন সবকিছু চিপস, বার্গার, পিৎজা, কোল্ড ড্রিংকস ফলে অল্প বয়স থেকেই এসব খাবারই শিশুদের কাছে হয়ে উঠছে সবচেয়ে প্রিয়। অন্যদিকে, মাছ, ভাত, ডাল, সবজি বা দুধ দেখলেই তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। মায়েরা অনেকেয় জোর করেও খাওয়াতে পারে না তাদের অভিযোগ এখন একটাই ‘বাচ্চা কিছুই খেতে চায় না’। কিন্তু প্যাকেটজাত খাবার নিয়মিত খেয়ে থাকে। এ অভ্যাসের প্রভাব পড়ছে সরাসরি শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে। কেউ ভুগছে অপুষ্টিতে, আবার কেউ কম বয়সেই স্থূলতার শিকার হচ্ছে। জাংকফুডে থাকা অতিরিক্ত লবণ, চিনি ও তেল শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে, দুর্বল করে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা।
সমাধানের বদলে বাড়ছে জটিলতা
অনেক সময় সময় বাঁচাতে কিংবা সন্তানের আবদার মেটাতে অভিভাবকরাই পুষ্টিকর খাবারের বদলে প্যাকেটজাত খাবার ধরিয়ে দেন হাতে। আবার অনেকে শিশুর কান্নার থামানোর জন্য হাতে দিয়ে দেন প্যাকেটজাত খাবার। প্রথমে তাতে সুবিধা মনে হলেও, দীর্ঘমেয়াদে এর ফল অনেক ভয়াবহ; এর ফলে শিশুদের খাবারের পছন্দ বদলে যায়, তারা ঘরের তৈরি খাবার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ার শুরু হোক ঘর থেকেই
শিশুকে সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে দিতে হলে ছোট থেকেই তৈরি করতে হবে পুষ্টিকর খাবারের প্রতি আগ্রহ। একসঙ্গে একাধিক স্বাস্থ্যকর খাবারের বিকল্প দিন যাতে সে নিজের পছন্দমতো বেছে নিতে পারে। এতে শিশুর মধ্যে ‘নিজের খাবার’ বেছে নেওয়ার আনন্দ তৈরি হবে, এবং ধীরে ধীরে সে নিজে নিজে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলবে।
যেসব শিশু ইতোমধ্যেই জাংকফুডে আসক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের হঠাৎ বদলানো কঠিন। ধীরে ধীরে, প্রতিদিনের খাবারে পুষ্টিকর কিছু উপাদান যোগ করুন। সময় নিয়ে, ভালোভাবে বোঝান, উৎসাহ দিন। শিশুরা অনুকরণ করে থাকে তারা যা দেখে তাই শেখে। তাই পরিবারের সবাই মিলে একই খাবার খেলে শিশুরও আগ্রহ বাড়ে।
উৎসাহ দিন
শিশুকে খাবার খাওয়ার জন্য ভয় দেখানো নয়, বরং উৎসাহিত করা জরুরি। যেমন- ‘প্রতি রাতে এক গ্লাস দুধ টানা এক সপ্তাহ খেলে তোমাকে ঘুরতে নিয়ে যাব।’
এমন ছোট পুরস্কার বা প্রতিশ্রুতি শিশুদের মধ্যে আনন্দ সৃষ্টি করে, আর নতুন কিছু করার ইচ্ছা জাগায়।
পরিবারের দায়িত্ব
শিশুর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা কেবল মায়ের কাজ নয়, পরিবারের সবার। ঘরে প্রতিদিন পুষ্টিকর খাবার রান্না করুন, সবাই মিলে একসঙ্গে টেবিলে বসে খান। খাওয়ার সময় খাবারের গুণাগুণ, রং বা উপকারিতা নিয়ে গল্প করুন। এতে শিশুর মনে খাবার নিয়ে আগ্রহ বাড়বে, শেখার মনোভাবও তৈরি হবে।
খাওয়ার পরিবেশটিও যেন আনন্দদায়ক হয়। শিশুর জন্য আলাদা ছোট চেয়ার, রঙিন প্লেট বা সুন্দর খাবার পরিবেশ তৈরি করতে পারেন। এতে খাবার সময় তার কাছে আরও মজাদার মনে হবে।
জাংকফুডের প্রবেশ ঠেকাতে হবে ঘর থেকেই
সবশেষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ঘরে জাংকফুড রাখা বা কিনে আনা থেকে বিরত থাকুন। শিশুরা চোখে যা দেখে, সেটাই চায়। তাই অস্বাস্থ্যকর কিছু খেতে চাইলে বিকল্প হিসেবে দিন ফল, দই, ঘরে তৈরি স্যান্ডউইচ বা পায়েস। স্কুলের টিফিনেও স্বাস্থ্যকর খাবার দিন, যাতে বাইরে গিয়ে সে জাংকফুডের প্রতি আকৃষ্ট না হয়। শিশুদের শরীর ও মন দুটোই বেড়ে ওঠে খাবারের গুণে। একটু সচেতনতা, কিছু ধৈর্য আর পরিবারে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ এই তিনটিই পারে শিশুকে জাংকফুডের ফাঁদ থেকে মুক্ত রাখতে। মনে রাখুন, পুষ্টিকর খাবারই শিশুর সুস্থ জীবনের ভিত্তি, আর সেই ভিত্তি গড়ে ওঠে আমাদের হাতেই।

