দুটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকাজুড়ে গতকাল বুধবার সকাল থেকেই ছিল তীব্র যানজট। শাহবাগ, পল্টন, মতিঝিল, বিজয় সরণি, ফার্মগেটসহ প্রতিটি সড়কে ছিল যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। যানজটের কারণে বিপাকে পড়েন সাধারণ যাত্রী, কর্মস্থলে যাওয়া মানুষ থেকে হাসপাতালগামী রোগীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে যান চলাচল প্রায় থমকে ছিল। তীব্র যানজটে স্থবির ছিল যানবাহনগুলো। শাহবাগ, পল্টন ও মতিঝিলের রাস্তাগুলোতে যানবাহন যেন নড়ছিলই না। নয়াপল্টনে বিএনপি ও শাহবাগে জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্ট হয় ঢাকাজুড়ে। গতকাল সকালে অফিস সময়ে বিজয় সরণি থেকে ফার্মগেটমুখী সড়কে সাধারণত যতটা যানজট থাকে, গতকাল বুধবার সকালে তা ছিল ভয়াবহ রকমের। বিজয় সরণি থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত শুধু গাড়ি আর গাড়ি। ফার্মগেট পুলিশ বক্সের এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বলেন, এই জ্যাম শাহবাগ পর্যন্ত। সেখানে একটি রাজনৈতিক সমাবেশ হচ্ছে, সে জন্য পুরো এলাকায় জ্যাম।
কারওয়ান বাজার থেকে এলিভিটেড এক্সপ্রেসওয়ের যতদূর চোখ যায়, শুধু গাড়ি আর গাড়ির সারি ছিল। ওভার ব্রিজ থেকে দেখা যায়, আটকে থাকা বাসগুলো থেকে নেমে অনেকেই হাঁটা শুরু করেন তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে।
এদিকে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে নয়াপল্টনে আয়োজিত বিএনপির ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ ঘিরে গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীতে নেতাকর্মীদের ঢল নামতে শুরু করে। গতকাল সকাল থেকে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, কুমিল্লাসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী বাসে করে রাজধানীতে প্রবেশ করতে থাকেন। এতে ঢাকার প্রবেশপথগুলোতেও যানজট তৈরি হয়। সমাবেশের মূল কেন্দ্র নয়াপল্টন, তবে এর প্রভাব পড়ে আশপাশের এলাকাগুলোতেও। প্রেসক্লাব মোড়, জিরো পয়েন্ট, দৈনিক বাংলা মোড়, বিজয়নগর, নাইটিঙ্গেল ও মতিঝিলে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট।
অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা আজহারুল ইসলামের মুক্তির পর হঠাৎ করে শাহবাগ এলাকায় দলটির নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার পর থেকে তাদের অবস্থানকে কেন্দ্র করে শাহবাগ মোড় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় সৃষ্টি হয় ব্যাপক যানজট। শাহবাগ এলাকায় দায়িত্বরত এক ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, জামায়াতের নেতাকর্মীরা হঠাৎ করে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেওয়ায় মূল সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ যানজট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে পল্টন ও রমনা এলাকায়।
মিরপুর-১১ থেকে মারুফ হোসেন তার অসুস্থ শিশুকে নিয়ে যাচ্ছিলেন ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে। তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, সকাল ১০টায় হাসপাতালে যাবার জন্য সিএনজি করে ছেলেকে নিয়ে বের হয়েছি। ১ ঘণ্টা ফার্মগেটে আটকে আছি, জানি না কখন হাসপাতালে যেতে পারব। শুনেছি সভা হচ্ছে রাস্তার ওপর। সাধারণ জনগণের ভোগান্তি ও কষ্ট দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে সব ধরনের সভা-আন্দোলন বন্ধ করতে হবে বলে দাবি জানান তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, গতকাল সকাল ১০টার পর থেকে মতিঝিল এলাকায় একেবারে স্থবির পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কর্মব্যস্ত এ এলাকায় হাজারো মানুষ অফিসে যেতে গিয়ে পড়েন চরম দুর্ভোগে। যানজটের কারণে অনেকে হেঁটে বিকল্প রাস্তায় গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন।
শান্তিনগর এলাকায় আটকে থাকা যাত্রী মেহেদী সিকদার বলেন, সকাল ১০টায় উত্তরা থেকে বের হয়েছি, দুপুর ১টা বাজে এখন পর্যন্ত মতিঝিল পৌঁছাতে পারিনি। শান্তিনগরেই আটকে আছি। প্রচণ্ড গরমে এ যানজট একেবারেই অসহনীয়।
নাইটিঙ্গেল মোড়ে যানজটে আটকে থাকা সিএনজি চালক মামুন শেখ বলেন, আজ (গতকাল) খুব খারাপ দিন গেছে। সিএনজির জমার টাকাটাই উঠাতে পারব না। এখন পর্যন্ত মাত্র একটা ট্রিপ মেরেছি। যানজটের কারণে কাকরাইল-নাইটিঙ্গেল এলাকা থেকে বের হতে পারছি না।
বেসরকারি চাকরিজীবী বিমল পার্থ আটকে আছেন বিজয় সরণি এলাকায়। তিনি বলেন, সকালে শাহবাগে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম। এখন বিজয় সরণি এসে দেখছি সিএনজিও নড়ছে না, বাস তো একেবারেই বন্ধ।
রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর আসাদগেট, আড়ং, ধানমন্ডি ২৭, ধানমন্ডি ৩২, কলাবাগান, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, শান্তিনগর, কাকরাইল, নাইটেঙ্গেল মোড়, গুলিস্তান, ওয়ারী, সায়দাবাদ, যাত্রাবাড়ী, কুড়িল, নতুনবাজার, বাড্ডা, প্রগতি সরণি, রামপুরা, মিন্টুরোড, গুলশান-১, গুলশান-২ এলাকার সড়কগুলোয় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এসব এলাকায় প্রধান সড়কের এক একটি সিগনাল পার হতে যানবাহনগুলোকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে।
যানজটের বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার বলেন, রাজধানীতে ঢোকার সব কয়টি স্থানে আজ (গতকাল) অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ। আর এটা সামলাতে ডিএমপির উপকমিশনার থেকে শুরু করে পরিদর্শকদের সবাই মাঠে আছেন। যানজট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে।
ডিএমপি ট্রাফিক রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, শাহবাগ ও আশপাশের এলাকায় যান চলাচলে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা মাঠে আছি।
ট্রাফিক সূত্র জানা যায়, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত যানজট পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা ছিল না। সমাবেশ শেষ হবার কমপক্ষে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা যানজট থাকবে বলেও জানান তারা।
মো. শাহরিয়ার সোহাগ বেসরকারি চাকরিজীবী রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে রাস্তা বন্ধ করা ঠিক নয়। এতে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের চলাচল ব্যাহত হয়, একইসাথে কর্মঘণ্টা ও অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি এড়ানোর জন্য কর্মসূচি গ্রহণে সতর্কতার আহ্বান গ্রহণ করবে রাজনৈতিক দলগুলো এই প্রত্যাশা আমাদের।