ঢাকা রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫

ইরানের ভেতরে যে কৌশলে হামলা চালায় মোসাদ 

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ১৪, ২০২৫, ১১:৫৭ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

ইরানে হামলা চালাতে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো যখন দেশটির পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করে আকাশে উড়ছিল, ঠিক তখন ইরানের ভেতরে লুকিয়ে থাকা গোপন কমান্ডো দল অস্ত্র সজ্জিত ড্রোন ও যানবাহনে লুকিয়ে রাখা বিস্ফোরক নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল তাদের গোপন লক্ষ্যবস্তুগুলোর দিকে।

তাদের লক্ষ্যবস্তু ছিল ইরানের সামরিক কমান্ডার, পরমাণু বিজ্ঞানী ও অভিজাত বিপ্লবী গার্ড কোরের শীর্ষ নেতারা। ইরানের এই লোকগুলো তখনও তাদের বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। তারা জানতেন না কী অপেক্ষা করছে তাদের সামনে। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে এমন করেই বর্ণনা দেওয়া হয়েছে ইরানে ইসরায়েলি হামলার।

শুক্রবার (১৩ জুন) দিনের আলো ফোটার আগেই ইসরায়েলি হামলায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছের লোক ও দেশটির পারমাণবিক গবেষণার মূল ব্যক্তিত্বরা প্রাণ হারান।

ইসরায়েলি ও পশ্চিমা নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বর্ণনা অনুসারে বিস্ফোরকবাহী ড্রোন বা অন্যান্য আধুনিক ডিভাইসের বিস্ফোরণে তেহরানের কেন্দ্রস্থলে সুউচ্চ অ্যাপার্টমেন্টে বিশাল বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয় সেসময়।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানান, ইসরায়েল সরকার ‘রাইজিং লায়ন’ নামের এই গোপন অভিযানের জন্য ইরানের ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে নিষ্ক্রিয় হয়ে লুকিয়ে থাকা গোয়েন্দা দল, আগে থেকে মজুদ করা অস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জামের ওপর নির্ভর করেছিল। এবং সঠিক সময়ে অভিযানের লক্ষ্যে তাদের সক্রিয় হয়ে ওঠার জন্যও নির্ভর করেছিল।

এ বিষয়ে ইসরায়েলের একজন পদস্থ নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনায় প্রথম ধাপ ছিল বিপ্লবী গার্ড কোরের শীর্ষ কর্মকর্তা ও ইরানের শাসক গোষ্ঠীর সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ব্যক্তিদের হত্যা করা। এবং এই লোকগুলো কোথায় ছিল তা আগে থেকেই জানতো মোসাদের ‘রোপন’ করা গোপন কমান্ডো দলের সদস্যরা।

অভিযানের সাফল্য তুলে ধরতে উন্মুখ ইসরায়েলের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পরবর্তী ঘণ্টায় ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক সাইটগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা এই অভিযানের প্রসার ঘটিয়ে তাতে নতুন মাত্রা দিয়েছিল।

ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলছেন, এই হামলাগুলো পরিচালিত হয়েছে দেশটির বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সম্মিলিত প্রয়াসে। এর জন্য দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি, সাহসী ও অত্যাধুনিক পরিকল্পনার পাশাপাশি ‘কৌশলগত প্রতারণারও’ প্রয়োজন ছিল।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানান, অভিযানের চূড়ান্ত ধাপগুলো সম্পন্ন হয়েছিল ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক আলোচনা পুনরুজ্জীবিত হওয়ার মধ্যেই। এ সময় মোসাদ এজেন্টরা ইরানের অভ্যন্তরে প্রচুর বিশেষ অস্ত্র পাচার করে, সেগুলো নির্দিষ্ট জায়গায় স্থাপন করে এবং সেগুলো সঠিক সময়ে সঠিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার জন্য তৈরি রাখে।