ঢাকা রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫

আয়রন ডোম ভেদ করে ইসরায়েলে আঘাত হানল যে ক্ষেপণাস্ত্র

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ১৪, ২০২৫, ০৮:২৭ পিএম
ইরানের নতুন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কাসিম বশির। ছবি- সংগৃহীত

ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার দূর থেকে এই হামলা করা হয়। এই হামলায় ব্যবহার হয়েছে ইরানের নতুন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘কাসিম বশির’। যা ইসরায়েলের নিশ্ছিদ্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’ ও যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ‘থাড’ সিস্টেমকে অতিক্রম করে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।

শনিবার (১৪ জুন) এই হামলা চালানো হয়। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, তেল আবিবে ‘সফল’ হামলা চালিয়েছে তেহরান।

ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’ মূলত তিন ধাপে কাজ করে- প্রথমে রাডারের মাধ্যমে শত্রু ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করা হয়, এরপর দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার প্রস্তুতি নেওয়া হয়, এরপর ‘ইন্টারসেপ্টর’ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে শত্রুপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্রকে আকাশেই ধ্বংস করা হয়।

তবে শুক্রবার গভীর রাতে এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়েই ইরান তেল আভিভে কাসিম বশির ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আঘাত হানে বলে গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।

গত মে মাসে ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ড অ্যারোস্পেস ফোর্স’-এর হাতে এই ক্ষেপণাস্ত্র হস্তান্তর করেন।

এটি ইরানের দীর্ঘদিন ব্যবহৃত হজ কাসিম ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নত সংস্করণ। কঠিন জ্বালানিচালিত এই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার।

হস্তান্তরের সময় ইরানি মন্ত্রী দাবি করেছিলেন, এটি ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ভেদ করতে সক্ষম।

মুসলিম রাষ্ট্র ইরান ও ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি কোনো সীমান্ত নেই। ইরান থেকে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রকে ইরাক, সিরিয়া বা জর্ডনের আকাশসীমা পেরিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করতে হয়।

সাধারণত মার্কিন সেনারা ইরাকে অবস্থান করে এ ধরনের হামলার আগাম তথ্য ইসরায়েলকে জানায় এবং মাঝপথে ইন্টারসেপ্ট করার চেষ্টা করে। এবারও জর্ডন তার নিজস্ব আকাশ প্রতিরক্ষায় কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে।

তবুও কাসিম বশিরের উচ্চ গতি ও উন্নত প্রযুক্তির কারণে রাডার ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফাঁকি দিয়ে এটি ইসরায়েলি ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম হয়।

 

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া সুন্নি কট্টরপন্থী নেতা মোহাম্মদ জোলানি ও তার অনুগত সরকারও ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রকে আকাশসীমা ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে, যা ইরানের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে।

তবুও এই পরিস্থিতিতে কাসিম বশিরের সফল আঘাতকে তেহরানের পক্ষে একটি “সামরিক সাফল্য” হিসেবে বিবেচনা করছেন বিশ্লেষকরা।

এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। ইসরায়েলের সর্বাধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে ইরান যেভাবে তেল আভিভে আঘাত হেনেছে, তা পশ্চিম এশিয়ায় সম্ভাব্য একটি নতুন সামরিক উত্তেজনার ইঙ্গিত বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।