শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মাইনুল হক ভূঁইয়া

প্রকাশিত: জুলাই ১৮, ২০২৫, ০৬:১১ এএম

তিন হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে জাবেদ করিম এখন জাতীয়তাবাদী! 

মাইনুল হক ভূঁইয়া

প্রকাশিত: জুলাই ১৮, ২০২৫, ০৬:১১ এএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে এখন জাতীয়তাবাদী সেজেছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা, ডিজাইন ও গবেষণা ইউনিট) জাবেদ করিম। শুধু ‘বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্র’ নামের প্রকল্প থেকেই শতকোটি টাকা লোপাট করেছেন তিনি।

অভিযোগ রয়েছে, তিনি বিদেশে পাচার করেছেন কম করে হলেও হাজার কোটি টাকা। গড়ে তুলেছেন কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদের পাহাড়। পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সহকারী একান্ত সচিব জাহিদ হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে মিলেমিশে তিনি দেদার আর্থিক লুটপাট চালান। তখন তিনি ছিলেন সড়ক ও সেতু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে। লুটপাটের আধিক্য এতই ছিল যে, সেই সময়ে কোনো সড়ক কিংবা সেতু নির্মিত হয়নি, রক্ষণাবেক্ষণও হয়নি।

এ ছাড়া মন্ত্রীর এপিএসের আস্কারায় তিনি ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন- কাউকেই পাত্তা দিতেন না। বিভিন্ন প্রকল্পে পরিচালক নিয়োগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন জেলায় নির্বাহী প্রকৌশলী পদায়নেও তার প্রত্যক্ষ প্রভাব ছিল। চাউর রয়েছে, এসব নিয়োগ ও পদায়নে তাকে পদভেদে ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকারও বেশি দিতে হতো। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত জুলাই আন্দোলনের সময় তিনি আওয়ামী লীগের তহবিলে মোটা অংকের টাকা অনুদান দিয়েছেন। তখন গণভবনে তার ছিল অবাধ যাতায়াত।

দুর্নীতিতে জাবেদ করিম হাত মকশো করেন মুন্সীগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী থাকাকালে। শোনা যায়, মুন্সীগঞ্জে সেই সময় ‘মি. টু পার্সেন্ট’ হিসেবে তার খ্যাতি ছিল। তাকে টু পার্সেন্ট না দিলে কোনো ঠিকাদারের কাজই মিলত না। সেই জেলায় তখন শতকোটি টাকার উন্নয়নকাজ বাস্তবায়িত হয়। এরপর বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্র প্রকল্পের পরিচালক হয়ে তিনি নামকাওয়াস্তে কিছু কাজ করে সেই প্রকল্পের শতকোটি টাকা লোপাট করেন।

কিন্তু তার বিরুদ্ধে কখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কারণ বরাবরই তিনি ছিলেন আওয়ামী শাসক শ্রেণির প্রিয়পাত্র। জাবেদ করিমের ভাগ্যের চাকা সমানে ঘুরতে থাকে এলজিইডির সদর দপ্তর আগারগাঁওয়ে যোগদানের পর থেকে। তখন থেকেই তার আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা ছিলেন ফ্যাসিস্ট সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে মো. তাজুল ইসলাম স্থানীয় সরকার মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেলে জাবেদ করিম যেন আলাদীনের চেরাগ হাতে পেয়ে যান।

মন্ত্রীর এপিএস জাহিদ হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে যোগসাজশে তিনি লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেন। আগস্ট অভ্যুত্থানের আগে পর্যন্ত তার এই লুটপাটের মহড়া চলে। এর মধ্যেই তিনি কম করে হলেও ৩ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য খুলে বসেন। নামে-বেনামে দেশে গড়ে তোলেন সম্পদের বিশাল সাম্রাজ্য। এতদিন এই সাম্রাজ্য আড়ালে থাকলেও সম্প্রতি স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বরাবর দেওয়া এক অভিযোগপত্রের পর বিষয়টি জোরেশোরে সামনে আসতে শুরু করে। দরখাস্তকারী উত্তরার মো. আরমান হোসেন জাবেদ করিমের সম্পদের দীর্ঘ ফিরিস্তি তুলে ধরেন।

জাবেদ করিমের যত সম্পদ: দরখাস্তকারীর ফিরিস্তিতে দেখা যায়- গুলশান, বনানী, উত্তরা ও মিরপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে জাবেদ করিমের রয়েছে অসংখ্য বাড়ি, ফ্ল্যাট ও প্লট। গুলশান-১ নম্বরের ১৩০ নম্বর সড়কের ১১/বি হোল্ডিংয়ে আশক্য আমারিওয়ে ডেভেলপার্সের এলটিডির পাশে ৩০ কাঠা জমির ওপরে রয়েছে তার একটি বিশাল গ্যারেজ। গ্যারেজটির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় দেড়শ কোটি টাকা। বনানীর ২৫/এ সড়কের ৫৫ নম্বর আলিশান বাড়িটির মালিক তিনি। এই বাড়ি নির্মাণে তার ব্যয় হয়েছে প্রায় শতকোটি টাকা।

প্রগতি সরণির শহিদ আব্দুল আজিজ সড়কের ৪৮ নম্বর প্লটটির মালিকও তিনি। প্লটটির আয়তন ৩০ কাঠা। প্রায় শতকোটি টাকা দিয়ে তিনি প্লটি কেনেন। সেখানে ‘পেইন টেকিং অটোমোবাইলস’ নামের একটি গ্যারেজ ভাড়া দিয়েছেন তিনি। পূর্বাচলের ৩ নম্বর সড়কের ৬৫ নম্বর প্লটটি তিনি ১০ কোটি ৬৫ লাখ টাকায় কেনেন স্ত্রীর নামে। উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর সড়কের ৩৬ নম্বর বাড়িতে ৩২০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে তার। ফ্ল্যাটটি কিনতে তার খরচ হয়েছে ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা।

আফতাবনগরে ২ নম্বর সড়কের ৯৮ নম্বর প্লটটি তিনি ১০ কোটি ৬০ লাখ টাকায় স্ত্রীর নামে কিনেছেন তিনি। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ডি-ব্লকে ৭ নম্বর সড়কের ৬৯ নম্বর প্লটটি ৪০ কোটি টাকায় কিনে সেখানে তিনি নির্মাণ করেছেন ৮ তলা বাড়ি। দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর ই-ব্লকের ৩ নম্বর সড়কের ৩৩ নম্বর প্লটটি তার ৪ কোটি ৯০ লাখ টাকায় কেনা। কেরানীগঞ্জের ৬ নম্বর সড়কের ১০ নম্বর বাড়িতে তিনি ৩৫০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন ১ কোটি ২০ লাখ টাকায়।

ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পের ৪ নম্বর সড়কের ৮৫ নম্বর প্লটটি তিনি স্ত্রীর নামে কেনেন ২ কোটি ৯০ লাখ টাকায়। ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিয়ে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ৯ নম্বর সড়কের ৩৬ নম্বর বাড়িটিও তিনি কিনেছেন। এ ছাড়া গাজীপুর চৌরাস্তাসংলগ্ন ৭৫ নম্বর বাড়িটিও তার। এটি কিনতে তার খরচ পড়েছে প্রায় ১২ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

পদপদবির অপব্যবহার করে সীমাহীন লুটপাট ও আর্থিক কেলেংকারির মাধ্যমে এই বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুললেও জাবেদ করিম বরাবরই ছিলেন স্পর্শহীন। কারণ তিনি ছিলেন আওয়ামী ক্ষমতার বলয়ে। আশ্চর্যের বিষয়, তাকে নিয়ে দুদক ছিল নিশ্চুপ এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ছিল নির্বিকার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর জাবেদ করিম খোলস পাল্টে জাতীয়তাবাদী সেজে বসেন। এখনো তার ক্ষমতার গণ্ডিতে অবাধ পদচারণা। এমনকি তিনি পদোন্নতির জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত লবিং করে বেড়াচ্ছেন। তার সম্পর্কে এলজিইডির কেউ-ই মুখ খুলতে চান না।

সার্বিক বিষয়ে জানার জন্য গত বুধবার থেকে জাবেদ করিমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার দুটি মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। তার হোয়াটসঅ্যাপে খুঁদেবার্তা দেওয়া হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।

Shera Lather
Link copied!