ভুক্তভোগী, সাক্ষী ও সংশ্লিষ্টদের হুমকি দিয়ে বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতেই দিল্লিতে বসে শেখ হাসিনা নানা বক্তব্য দিচ্ছেন। ট্রাইব্যুনাল এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। শেখ হাসিনাকে দেওয়া আদালত অবমাননায় ৬ মাসের সাজার পূর্ণাঙ্গ রায় পাঠানো হয়েছে পুলিশপ্রধানের কাছে। গতকাল শনিবার রায়ের পর্যবেক্ষণের বিষয়টি প্রসিকিউশন সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ রায়ের অনুলিপি আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম। তিনি বলেন, স্বল্প পৃষ্ঠার রায়টি গত সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারত যাওয়ার পর থেকে একে একে শেখ হাসিনার অডিও ভাইরাল হতে থাকে। এমনই একটি অডিও ছিল ‘২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি’। এই অডিও যে শেখ হাসিনার তা সিআইডির ফরেনসিকে প্রমাণিত হয়েছে। এরপর অডিওর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননার মামলা করে প্রসিকিউশন। গেল ২ জুলাই এ মামলায় শেখ হাসিনার ৬ মাসের কারাদ- দেন ট্রাইব্যুনাল। সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি এসেছে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের কাছে। যেখানে বলা হয়েছে ভুক্তভোগী, সাক্ষী ও তদন্ত কর্মকর্তাদের হুমকি দিতেই শেখ হাসিনার এ হুমকি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম বলেন, যার এক্টিভিস্টরা এখনো এই দেশে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এতে করে যেকোনো মানুষ এই জিনিসটাতে ভয় পাবে। যখনই একজন সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে এসে সাক্ষ্যগ্রহণে ভয় পাবে এটি ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার শামিল বলে ট্রাইব্যুনাল মনে করেছে। আবার যারা এই মামলার সাক্ষী, ভিকটিম তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার ব্যাপারেও ওনার কথোপকথনে দেখা যায়। সবমিলিয়ে ট্রাইব্যুনাল মনে করছেন যে, এই কার্যক্রম দ্বারা ট্রাইব্যুনালের বিচারব্যবস্থাকে তিনি বাধাগ্রস্ত করেছেন।
এ রায়ের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে আইজিপিকে। প্রসিকিউশন বলছে, হেইট স্পিচ যদি ছড়াতে থাকেন শেখ হাসিনা তবে ফের আদালত অবমাননার মামলা মুখোমুখি হতে হবে তাকে।
গাজী এম এইচ তামীম আরও বলেন, আইনে কাউকে তো আর কথা বলতে বাধা দেওয়া যায় না। আইনে যেটা করা যায় সেটা হলো এই টেরিটরির মধ্যে যাতে তার এই ধরনের হেইট স্পিচ প্রচার না করে সেই আদেশ ট্রাইব্যুনাল দিয়েছেন। যদি উনি আবার হেইট স্পিচ ছড়ান তাহলে আমরা আবার আদালতের শরণাপন্ন হব।
জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ। এর মধ্যে পাঁচজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়ে শেখ হাসিনার বিচার চেয়েছেন। ১৭ আগস্ট এ মামলায় আবার সাক্ষ্য নেওয়া হবে।
ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনার সঙ্গে গাইবান্ধার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাকিল আকন্দ বুলবুলের কথিত ফোনালাপ গত বছর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হয়। অডিও ক্লিপে শেখ হাসিনাকে গোবিন্দগঞ্জের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাকিল আকন্দ বুলবুলকে বলতে শোনা যায়, আমার বিরুদ্ধে ২২৭টি মামলা হয়েছে, তাই আমি ২২৭ জনকে হত্যা করার লাইসেন্স পেয়েছি।