রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২৫, ০৬:০০ এএম

দুর্নীতির মিয়া ভাই রশীদ মিয়া

স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২৫, ০৬:০০ এএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

দুর্নীতির মিয়া ভাই প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ মিয়া। ছিলেন আওয়ামী লীগ আমলে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের নেতা। ক্ষমতার অপব্যবহার করে সারাজীবন করেছেন দুর্নীতি। গড়েছেন টাকার পাহাড়। রাজধানী ও গ্রামের বাড়ি মিলিয়ে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা সম্পত্তির মালিক বনেছেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এই দুর্নীতিবাজের শাস্তি হওয়ার কথা থাকলেও সবকিছু ‘ম্যানেজ’ করে হয়েছেন পুরস্কৃত।

জ্যেষ্ঠতা ডিঙিয়ে বাগিয়ে নিয়েছেন প্রধান প্রকৌশলীর পদ। ‘দুর্নীতির মিয়া ভাই’ হিসেবে পরিচিতি প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ মিয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই বানানো হয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব)। আর এর পেছনে জড়িত রয়েছেন বর্তমান সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একজনের প্রচ্ছন্ন সম্মতি। এই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দায়িত্ব গ্রহণের পরেই এলজিইডির প্রধান কার্যালয় থেকে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এখন নিজের স্ত্রী ফাতিমা যাকিয়াহ্’র নামে চালাচ্ছেন হাজার কোটি টাকার টেন্ডারবাণিজ্য। নিয়োগ-পদোন্নতিতেও কামাচ্ছেন অবৈধ টাকা। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তার বিরুদ্ধে জমেছে অভিযোগের পাহাড়। কিন্তু একের পর এক দুদকের তলবেরও তোয়াক্কা করেন না তিনি। 

জানা যায়, আওয়ামী লীগ আমলের এই প্রভাবশালী কর্মকর্তা ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তৎকালীন সরকারের আমলেই দুদকে ৩০০ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে মামলা হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে তার সাজা হওয়ার কথা থাকলেও হয়ে উঠেন আরও প্রভাবশালী। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী থেকে পদোন্নতি, জ্যেষ্ঠতা ‘থোড়াই কেয়ার’ করে এক উপদেষ্টার বরাতে হয়ে যান প্রধান প্রকৌশলী। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৮ সাল থেকে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান আবদুর রশিদ মিয়া। ২০১৯ সালে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি পান। এসব পদে থেকেই তিনি প্রায় ৩০০ কোটির সম্পদ গড়ে তোলেন। এমন অভিযোগ উঠলে তদন্তে নামে দুদক। এখানেও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে চার দফায় দুদক তলব করলেও হাজির হননি আবদুর রশিদ মিয়া। 

দুদক সূত্রে জানা যায়, আব্দুর রশীদ মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে এলজিইডির প্রশাসন ও ট্রেনিং বিভাগে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত বিপুল পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মালিকানা অর্জনের। এর আগে অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে দায়িত্ব পালনকালে তিনি বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা কামিয়েছেন এবং এ টাকায় যেসব সম্পদ গড়েছেন, সেগুলোর অধিকাংশই তার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও নিকটাত্মীয়দের নামে। এ ছাড়া এলজিইডিতে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে এক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ করার ক্ষেত্রে প্রার্থীপ্রতি তিনি কমপক্ষে ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। 

অনুসন্ধানসংশ্লিষ্ট দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে এসব অভিযোগের মধ্যে বেশকিছুরই সত্যতা পাওয়া গেছে। তার সম্পদের তথ্য যাচাই-বাছাই করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ২০২৩ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাকে তিনবার তলব করা হয়েছে। কিন্তু তিনি কখনো হাজির হননি। প্রথমবার অসুস্থতা, দ্বিতীয়বার বিদেশ সফর, তৃতীয়বার অফিসের ব্যস্ততা এমন অজুহাত দেখানো হয়।

সম্পদের যত পাহাড় :

চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি আব্দুর রশীদ মিয়াকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ছয় মাসের জন্য প্রধান প্রকৌশলী পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান সরকারের একটি অদৃশ্য শক্তি বিপুল অর্থের বিনিময়ে তাকে এই পদে বসিয়েছে। যদিও পূর্ণাঙ্গভাবে তাকে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা চলছিল। গুলশান-উত্তরার একটি অফিসে এ বিষয়ে সমঝোতা হয় এবং ‘ব্যাবসায়িক দেনা-পাওনার’ একটি স্ট্যাম্প দলিলও প্রস্তুত করা হয়, যেখানে একজন বিনিয়োগকারী যুক্ত ছিলেন। সেই স্ট্যাম্পে সাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর করেন আব্দুর রশীদ মিয়া।

রাজশাহীতে একটি পাঁচতলা ও একটি সাততলা বাড়ি, একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল এলাকায় ২৫ শতাংশ জমির ওপর ফুড গার্ডেন, সিরাজগঞ্জ-বগুড়া মহাসড়কে আরেকটি ফুড গার্ডেন, বগুড়ার শেরপুর পৌরসভায় জমি, হিমছায়াপুর মৌজায় বিশাল বাগানবাড়ি, শাহবন্দেগী ইউনিয়নের খন্দকার তলা মৌজায় ৫ একর জমি, বগুড়ার শেরপুর সেরময়া মৌজায় ১২ বিঘা জমি, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অত্যাধুনিক ডুপ্লেক্স অ্যাপার্টমেন্ট, ঢাকা ও রাজশাহীতে নামে-বেনামে একাধিক ফ্ল্যাট, বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর ও নগদ টাকার মালিক হয়েছেন তিনি। 

এসবের বাইরেও, দুদকের একটি গোপন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধান প্রকৌশলী ও তার পরিবারের নামে রাজধানীর গুলশান, বনানী ও বসুন্ধরায় রয়েছে অন্তত ৮টি ফ্ল্যাট ও ৩টি প্লট। নিজ জেলা শহরে তৈরি করেছেন ৫০ কোটির বেশি ব্যয়ে একটি প্রাসাদোপম বাড়ি। এ ছাড়া দেশের বাইরে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় ব্যাংক হিসাব খোলার তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে, ৩০০ কোটিরও বেশি টাকার সম্পদ তিনি অর্জন করেছেন বেতন ও বৈধ আয়ের বাইরে। এলজিইডির একজন প্রধান প্রকৌশলীর বৈধ বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা মিলিয়ে সর্বোচ্চ বার্ষিক আয় হয় ৩০-৩৫ লাখ টাকা। অথচ আব্দুর রশীদ মিয়ার পক্ষে এত বিপুল সম্পদ অর্জন করা কীভাবে সম্ভব। এখন নতুনভাবে তিনি জড়িয়েছেন টেন্ডার বাণিজ্যে। নিজের স্ত্রীর নামে চালাচ্ছেন এই বাণিজ্য। 

টেন্ডার সাম্রাজ্যে স্ত্রীর নাম :

দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তার স্ত্রী ফাতিমা যাকিয়াহ ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের নামে রয়েছে ১২টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। শুধু ২০২১-২২ অর্থবছরেই এই প্রতিষ্ঠানগুলো পেয়েছে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প কাজ। তুলনামূলকভাবে দেখা গেছে, ওই সময় অন্যান্য প্রতিযোগী ঠিকাদারদের হাতে কাজ গেছে ৩০-৪০ শতাংশ কম। 

এক সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, টেন্ডার আহ্বানের আগে থেকেই ঠিক করা থাকত কারা কাজ পাবে। প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র কার্যত ছিল কাগুজে প্রক্রিয়া। রূপালী বাংলাদেশের হাতে আসা একটি চিঠিতে দেখা যায়, চাঞ্চল্যকরভাবে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে স্ত্রীর ব্যবসার জন্য ৭০ কোটি টাকা লোন চেয়ে সুপারিশ করেন তিনি। গত এপ্রিল মাসে আরেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে স্ত্রীর নামে ৪০ কোটি টাকা নিয়েছেন রশিদ মিয়া। 

দুদকের তলবে দেন না সাড়া :

এতসব অভিযোগ থাকলেও অনুসন্ধানের জন্য তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য দুদক থেকে বারবার তলব করা হলেও হাজির হচ্ছেন না তিনি। শুধু তাই নয়, তার কাছে অভিযোগসংশ্লিষ্ট নথিপত্র চেয়েও পাচ্ছে না কমিশন। দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, আব্দুর রশীদ মিয়া অনুসন্ধানের শুরু থেকেই চরম অসহযোগিতা করছেন। ফলে অনুসন্ধান কার্যক্রম এগুচ্ছে না। 

দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আকতার হোসেন রূপালী বাংলাদেশকে জানান, সংশ্লিষ্ট নথিপত্রসহ আব্দুর রশীদ মিয়াকে দুদকে হাজির হতে তার কর্মস্থল আগারগাঁওয়ের এলজিইডি ভবনের ঠিকানায় কয়েকবার নোটিশ পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় শেরেবাংলা নগর থানার ওসির মাধ্যমেও নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছেও দুদক থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারণ সেখানে এ প্রকৌশলীর গ্রামের বাড়ি। চিঠিতে আব্দুর রশীদ মিয়ার নামে, তার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও নিকটাত্মীয়দের নামে স্থানীয় পর্যায়ে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ থাকলে সেসবের তথ্য জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু তার কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। 

দুর্নীতির কারণে উন্নয়ন ব্যাহত :

এলজিইডির প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতির সরাসরি প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের ওপর। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সমাপ্ত হওয়া ৫৭টি সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে ১৪টি প্রকল্প ৬ মাসের মধ্যেই ভেঙে গেছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশের অন্যতম বৃহৎ উন্নয়ন সংস্থা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবছর প্রায় ৩৫-৪০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। এই বিপুল বাজেটের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত দেশের সড়ক, সেতু, কালভার্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস ভবন ও গ্রামীণ অবকাঠামো।

কিন্তু এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে আছেন যিনি জ্যেষ্ঠতার নিয়ম ভেঙে ক্ষমতাধর লবির জোরে নিয়োগ পেয়েছেন। আর তার বিরুদ্ধে রয়েছে ৩০০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ, হাজার কোটি টাকার টেন্ডারবাণিজ্য এবং দুর্নীতির অভিযোগ। প্রকৌশলীদের ক্যাডার সার্ভিস রুল অনুযায়ী, প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগে অভিজ্ঞতা, জ্যেষ্ঠতা এবং দক্ষতা মূল মানদ-। কিন্তু বর্তমান প্রধান প্রকৌশলীর ক্ষেত্রে অন্তত পাঁচজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে পাশ কাটিয়ে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সরকারি নথি অনুযায়ী, ২০২০ সালে পদোন্নতির সময় অন্তত তিনজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী তার চেয়ে বেশি অভিজ্ঞ ছিলেন। 

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবকাঠামো খাতে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় অপচয় বা দুর্নীতির কারণে নষ্ট হয়। এলজিইডির মতো বড় বাজেটের প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির প্রভাব আরও ভয়াবহ। তুলনায় দেখা গেছে, ভারতীয় পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টে (পিডব্লিউডি) প্রকল্প অপচয় মাত্র ১৫-২০ শতাংশ, নেপালে ১৮ শতাংশ, বাংলাদেশে এলজিইডি সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে অপচয়ের হার ৪০ শতাংশের কাছাকাছি। 

সুশাসন না থাকলে কীভাবে উন্নয়ন খাতের বিপুল অর্থ অপচয় হয় মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান চৌধুরী রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, একটি দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন নির্ভর করে প্রকৌশলীদের হাতে। তারাই যদি দুর্নীতিগ্রস্ত হয় তাহলে উন্নয়ন হবে কীভাবে? গত ১৫ বছরের চিত্র বাদ দিয়ে যদি আমরা ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পরের চিত্রও দেখতে পাই তাতেও খুব বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন এসেছে বলে মনে হয় না। দুর্নীতিবাজদের শাস্তি না দিয়ে বরং তাদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে। একটি নির্দলীয় সরকারের কাছে যা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। এক্ষেত্রে দুদককেও কঠোর হতে হবে। কর্মকর্তা যদি তলবে না আসে তাহলে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল স্বচ্ছতা সব ঠিকাদারি কাজ অনলাইনে উন্মুক্ত করতে হবে। অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা শক্তিশালী করা প্রতিটি প্রকল্পে স্বাধীন তদারকি থাকতে হবে। জনগণের অংশগ্রহণমূলক নজরদারি উন্নয়ন প্রকল্পে স্থানীয় কমিউনিটির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। যদি জবাবদিহি নিশ্চিত না হয়, তবে দেশের উন্নয়ন খাত আরও বড় ধাক্কা খাবে, আর এর খেসারত দেবে সাধারণ মানুষ যাদের টাকায় চলছে এই অবকাঠামো প্রকল্পগুলো। 

সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য:

এসব বিষয়ে জ্যেষ্ঠতার তালিকায় ১ম অবস্থানে থেকেও বাদ পড়া অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মুজাক্কা জাহের বলেন, রশিদ মিয়া আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী হয়েও কীভাবে প্রধান প্রকৌশলী হয়েছেন তার জবাব মন্ত্রণালয়ই দিতে পারবে। এ নিয়ে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূইয়ার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে রাজি হননি তিনি। তবে তিনি একটি গণমাধ্যমকে জানান, চাকরির মেয়াদ বিবেচনায় একটি তালিকা করে মন্ত্রণালয়ের বোর্ড। যেখানে তালিকার তৃতীয়জনকে বানানো হয় প্রধান প্রকৌশলী। কিন্তু সেই তালিকায় দেখা যায়, ৩ নম্বরে থাকা ব্যক্তির নাম এনামূল হক। 

কোনোভাবেই পাওয়া যায়নি রশিদের বক্তব্য :

এসব অভিযোগের বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী আবদুর রশিদ মিয়ার সঙ্গে কথা বলতে গেলে গেটেই আটকে দেওয়া হয় সাংবাদিকদের। ভিন্ন পরিচয়ে কয়েকবার তার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হতে হয় প্রতিবেদককে। ওয়েবসাইটে দেওয়া নাম্বারে ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ব্যক্তিগত নাম্বার ব্যক্তিগতই রাখতে নাকি অভ্যস্থ তিনি।

তাই তার বক্তব্য পাওয়া না গেলেও তার অধীনস্থ কর্মকর্তারা বলছেন, দুর্নীতিতে সিদ্ধহস্ত স্বৈরাচারের ঘনিষ্ট আব্দুর রশীদ মিয়া কীভাবে এখনো বহাল তবিয়তে? কার ছত্রছায়ায় এখনো খুল্লামখুল্লা দুর্নীতি করে যাচ্ছেন সেটাই বড় প্রশ্ন। বদলি এবং চাকরি হারানোর আতংকে কেউ কোনো উচ্চবাচ্যও করতে পারেন না। ফলে দিনের পর দিন মুখ বুঝে সয়ে যাচ্ছেন সব। 
 

Link copied!