রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠকের পর পাল্টে যেতে শুরু করছে ইউক্রেন যুদ্ধের পরিস্থিতি। শনিবার (২৩ আগস্ট) সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভেতরে হামলা চালানোয় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর পেন্টাগন। এমনকি পেন্টাগনের পক্ষ থেকে কিয়েভকে এও বলা হয়েছে, যদি ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা করতে চায়, তাহলে সেক্ষেত্রে যেন মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করা না হয়।
প্রসঙ্গত, গত বছর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মেয়াদের শেষদিকে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে হলে অবশ্যই মার্কিন সামরিক কমান্ডের অনুমতি নিতে হবে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে।
পেন্টাগনের বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত তিন-চার মাসে বেশ কয়েকবার রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের ভেতরে হামলার জন্য এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এবং মার্কিন সামরিক কমান্ড কোনোবারই অনুমতি দেয়নি।
হোয়াইট হাউসের একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দুটি কারণে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীকে রাশিয়ার ভেতরে হামলা চালানোর অনুমতি দিচ্ছে না প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন। প্রথমত, ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে সংঘাতের মাত্রা হ্রাসের পক্ষপাতী এবং দ্বিতীয়ত, ট্রাম্প প্রশাসন বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। এ অবস্থায় যদি ইউক্রেন রুশ ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে হামলা শুরু করে, তাহলে যুদ্ধাবসানের যাবতীয় প্রচেষ্টা ভেস্তে যাবে।
কৃষ্ণসাগরের ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়া এবং পশ্চিমা বিশ্বের সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য ইউক্রেনের আবেদনকে ঘিরে কয়েক বছর টানাপোড়েন চলার পর ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী, যা এখনো চলছে। গত সাড়ে তিন বছর ধরে চলমান এই যুদ্ধে ইতোমধ্যে উভয়পক্ষের লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পদে আসীন হওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলোর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধাবসানকে অগ্রাধিকার দেবেন তিনি। গত মে মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র তুরস্কের মধ্যস্থতায় ইস্তাম্বুলে শান্তি সংলাপে বসেছেন রাশিয়া ও ইউক্রেনের সরকারি প্রতিনিধিরা।
পাশাপাশি আট মাস ধরে কয়েকবার ফোনালাপের পর গত ১৫ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ট্রাম্প। পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের তিন দিন পর ১৮ আগস্ট হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়েনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন ট্রাম্প।
পুতিন, জেলেনস্কি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেছিলেন, শিগগিরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানের ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন