ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রতিষ্ঠার ১০৪ বছরে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের প্রথম ভোট অনুষ্ঠিত হয় ১৯২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে। বিগত ১০০ বছরে ছাত্র সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ৩৭ বার। আর স্বাধীন হওয়ার পর ৫৪ বছরে ঢাবিতে নির্বাচন হয়েছে সবচেয়ে কম, মাত্র ৭ বার। আসন্ন ঢাবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নিয়ে আদালতে রিটসহ নানা জটিলতা সৃষ্টি হলেও সেগুলো কাটিয়ে নির্ধারিত তারিখেই সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে বদ্ধপরিকর ঢাবি প্রশাসন।
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে প্রচারণা যখন সরগরম, তখন হঠাৎই গতকাল সোমবার আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ভোট স্থগিত করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি হাবিবুল গনির নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিট আবেদনের ওপর শুনানিতে গতকাল এ আদেশ দেন। একই সাথে, রিট আবেদনকারীকে শিবির প্যানেলের জিএস প্রার্থী ফরহাদের সব ধরনের প্রমাণসহ নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করতে বলা হয়। অভিযোগ গ্রহণ করে সব পক্ষের শুনানি নিয়ে আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন আদালত।
সম্প্রতি ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ফরহাদের প্রার্থিতার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে একটি রিট করা হয়। বাম জোট মনোনীত প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী বি এম ফাহমিদা আলম এ রিট করেন। রিটের আবেদনে বলা হয়, এস এম ফরহাদ আগে ছাত্রলীগের কমিটিতে ছিলেন। এরপরও তিনি কীভাবে ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্যানেলে প্রার্থী হলেনÑ এমন প্রশ্ন তুলে তার প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করা হয়।
পরবর্তী সময়ে গতকালই নির্বাচন স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে ঢাবি কর্তৃপক্ষের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বিকেলে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এ আদেশ দেন। আদালতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন মোহাম্মদ শিশির মনির। শিশির মনির জানান, হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত। এর ফলে ডাকসু নির্বাচন আয়োজনে কোনো বাধা নেই।
বিক্ষোভ মিছিল পরিণত আনন্দ মিছিলে: হাইকোর্ট ডাকসু নির্বাচন স্থগিত করেছেনÑ এমন খবর ছড়িয়ে পড়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন ঢাবি শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকেল সোয়া ৪টায় বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আসেন। বিকেল সাড়ে ৪টার মধ্যে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে হাজারো শিক্ষার্থী অবস্থান নেন। তাঁরা ‘হাইকোর্ট না ডাকসু, ডাকসু ডাকসু’, ‘ডাকসু আমার অধিকার, রুখে দেওয়ার সাধ্য কার’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে থাকেন। তবে গতকালই বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে খবর আসে, ডাকসু নির্বাচন স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় চেম্বার আদালত স্থগিত করেছেন। এর পরই উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তাঁরা বিজয়সূচক ‘ভি’ চিহ্ন দেখিয়ে ‘ডাকসু ডাকসু’, ‘৯ তারিখ ৯ তারিখ’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে থাকেন।
তপশিল অনুযায়ী, ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের কথা রয়েছে। এই নির্বাচনের জন্য ইতিমধ্যে ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ আলাদা প্যানেল দিয়েছে। বামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলো দুটি প্যানেল দিয়েছে। পূর্ণ ও আংশিক মিলিয়ে মোট প্যানেল ১০টি।
এদিকে ডাকসু নির্বাচনে জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের শুনানি হয় গতকাল। হাইকোর্টের বিচারপতি হাবিবুল গনি ও বিচারপতি এস কে তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানি হয়। গতকাল হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের বিচারকরা এজলাসে ওঠেন। আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া শুনানি করেন। এর জেরে, এস এম ফরহাদ নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে লেখেন, ডাকসুকে নিয়ে নানামুখী গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়া হবে। তিনি আরও লেখেন, ৯ সেপ্টেম্বরই ডাকসু হতে হবে। যারা ডাকসু পেছানোর ষড়যন্ত্রে জড়িত, তাদের শিক্ষার্থীরা ৯ সেপ্টেম্বর লাল কার্ড দেখাবে।
এদিকে, ডাকসু নির্বাচন উপলক্ষে ছাত্রদলের দাবির মুখে ৪ দিনের পরিবর্তে ৩ দিন ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখে ফের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মুনসী শামস উদ্দিন আহমদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে ছুটি ১ দিন কমানোর এই তথ্য জানানো হয়। বিবৃতিতে জানানো হয়, আগামী ৭ সেপ্টেম্বর রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা চলবে। ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর সোমবার থেকে ১০ সেপ্টেম্বর বুধবার পর্যন্ত সব ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। এর আগে গত ৩০ আগস্ট এক বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৭ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪ দিন ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করলে ছাত্রদল ও বাম সংগঠনগুলো প্রতিবাদ জানিয়ে ৩ দিন বন্ধ ঘোষণার দাবি জানায়।