ঢাকা শুক্রবার, ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বললেন টিআই চেয়ারম্যান

দেশ থেকে এখনো দুর্নীতি পুরোপুরি বিলীন হয়নি

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৫, ১১:৫৬ পিএম
দুর্নীতি 

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরও দেশ থেকে দুর্নীতি পুরোপুরি বিলীন হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) চেয়ারম্যান ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ। তিনি বলেন, দুর্নীতি এখনো আছে। তবে এটা বেড়েছে নাকি কমেছে, তা এখনই বলা অনেক তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। গতকাল বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) কার্যালয়ে টিআইর চেয়ারম্যানের বাংলাদেশ সফর উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। 

সংবাদ সম্মেলনে দেশের দুর্নীতি পরিস্থিতি নিয়ে টিআই চেয়ারম্যানের পর্যবেক্ষণ জানতে চান সাংবাদিকেরা। জবাবে তিনি বলেন, স্বৈরশাসনের শেষের বছরগুলোতে দুর্নীতি ব্যাপকভাবে বেড়েছিল। গত বছরের আগস্টে শাসনক্ষমতার পরিবর্তনের পরও দুর্নীতি পুরোপুরি শেষ হয়নি।

বাংলাদেশ সফরের কারণ জানতে চাইলে টিআই চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে তার দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশ পরিদর্শন শেষ হচ্ছে এবং এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সফর। বাংলাদেশ সফরের আগে তিনি মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কায় গেছেন। তার এ সফর শুধু প্রতীকী নয়; এর উদ্দেশ্য দুর্নীতিবিরোধী বৈশ্বিক আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ও সংহতি জানানোও।

টিআই চেয়ারম্যান আরও বলেন, যেসব দুর্নীতির মামলায় প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবান ব্যক্তিরাও অন্তর্ভুক্ত, সেসব যথাযথ বিচারিক প্রক্রিয়ায় নিয়ে যেতে হবে এবং একটি চূড়ান্ত পরিণতি দিতে হবে। যেসব দেশ তা করতে পেরেছে, তারাই দুর্নীতি ধারণা সূচকে নিজেদের স্কোর উন্নত করতে সক্ষম হয়েছে।

দেশে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও খুনখারাবির বিষয়ে টিআই চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘যদি সাংবাদিক, নাগরিক সমাজের কর্মী ও মানবাধিকার কর্মীরা হয়রানি, হুমকি কিংবা সহিংসতার মধ্যে থাকেন, তবে ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ বা জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। নাগরিকদের তথ্য জানানো এবং সত্য প্রকাশ করা গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য। তাই সাংবাদিকদের সুরক্ষা দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ সময় বাংলাদেশ সফরের কারণ জানতে চাইলে টিআই চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে তার দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশ পরিদর্শন শেষ হচ্ছে এবং এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সফর। বাংলাদেশ সফরের আগে তিনি মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কায় গেছেন। তার এ সফর শুধু প্রতীকী নয়; এর উদ্দেশ্য দুর্নীতিবিরোধী বৈশ্বিক আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ও সংহতি জানানোও।

জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বছরে প্রায় ১৬ বিলিয়ন (১ হাজার ৬০০ কোটি) ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে। এ অর্থ ফেরাতে টিআই সহযোগিতা করছে জানিয়ে ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ বলেন, পাচার হওয়া অর্থ কোথায় আছে, তা জানা জরুরি। নাগরিক সমাজকে জানতে হবে, অর্থ কোথায় আছে এবং নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলোকে আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হতে হবে; যাতে সেই সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা যায়। 

সম্প্রতি লন্ডনে ১৮৫ মিলিয়ন (১৮ কোটি ৫০ লাখ) পাউন্ড মূল্যের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার উদাহরণ টেনে টিআই চেয়ারম্যান বলেন, এটি সম্ভব হয়েছে টিআই বাংলাদেশ, টিআই যুক্তরাজ্য ও স্পটলাইট অন করাপশনের (যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্বাধীন দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা) যৌথ উদ্যোগে। এখানে নাগরিক সমাজ তার ভূমিকা রেখেছে এবং ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষও ব্যবস্থা নিয়েছে।

বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় এক ট্রিলিয়ন (লাখ কোটি) ডলার চুরি হয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ বলেন, এসব অর্থ প্রতিটি দেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো ও জলবায়ু নীতির জন্য প্রয়োজন ছিল।

বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থে দুর্নীতিবাজ নেতারা বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ি কেনেন জানিয়ে ভ্যালেরিয়াঁ বলেন, তবে সেটিও হিমশৈলীর অংশমাত্র। এ অর্থের বড় অংশ ক্যাপিটাল মার্কেটে যায়, সেখানে মূল্যস্ফীতির হার বাড়ে ও অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যে অর্থ জনগণের কাজে লাগার কথা ছিল, তা পরিণত হচ্ছে নিরর্থক ব্যক্তিগত অর্থে।

এদিকে পাচার করা অর্থ ফেরত আনার চেষ্টার পাশাপাশি টাকা পাচার রোধে প্রচেষ্টা চালানোর পরামর্শ দেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি বলেন, যদি বিদেশে অর্থ পাচার করার কোনো সুযোগ না থাকে, পাচারকারীরা টাকা পাচারের সুযোগ পাবেন না। তাই টাকা দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ বন্ধ করতে হবে। সেটি বন্ধ করার যে হাতিয়ার রয়েছে সেগুলো আরও শাণিত করতে হবে। এ-সংক্রান্ত আইনগুলো আরও জোরালোভাবে প্রয়োগ করতে হবে।