শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রুবেল রহমান

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৫, ০৩:২৫ এএম

ছাত্রদলের বিপর্যয়ে হতভম্ব বিএনপি, খুঁজছে কারণ

রুবেল রহমান

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৫, ০৩:২৫ এএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

জাতীয় নির্বাচনের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে বেশ বিব্রত দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। আওয়ামী লীগের পতনের পর নতুন বাংলাদেশে প্রথম ভোটেই মুখ থুবড়ে পড়েছে বিএনপির ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

প্রথম ভোটেই এমন বিপর্যয় নিয়ে বিব্রত ও হতভম্ব দলটির নীতিনির্ধারকেরা। যদিও ডাকসু নির্বাচনে বিপর্যয়ের কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে বিএনপি। অনেক দিন পর নির্বাচন হওয়ার কারণে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল বলেই মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

তবে ডাকসু নির্বাচনে জয়ীদের অভিনন্দন জানাতে কার্পণ্য করেননি তিনি। যদিও দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে তাদের ভোটেই বিজয়ী হয়েছে ছাত্রশিবির। আর পরাজিত ভিপি পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেছেন, আওয়ামী লীগের ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংকে হার মানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসু নির্বাচনে অতীতে কখনো জয়ের কাছাকাছি যাওয়া, এমনকি প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই আসতে পারেনি ইসলামী ছাত্রশিবির। জামায়াতে ইসলামীর এই সহযোগী সংগঠন এবার ভূমিধস জয় পেয়েছে। এদিকে ডাকসুর শোচনীয় পরাজয়ের পর গতকাল বৃহস্পতিবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন বর্জন করেছে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল।

অনিয়মের অভিযোগ এনে ভোট শেষ হওয়ার এক ঘণ্টার কিছু আগে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল পৌনে ৪টার দিকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় প্যানেলটি। তবে তাদের প্রতিপক্ষরা দাবি করেছে, পরাজয় অনুমান করতে পেরেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে ছাত্রদল। এমন পরিস্থিতি নতুন করে ভাবনায় ফেলেছে বিএনপিকে।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সমন্বয়হীনতা, গ্রুপিং ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভরাডুবি হয়েছে। বিজয় দেখতে পাওয়া দলের ছাত্র সংগঠনের এমন শোচনীয় পরাজয়ে হতভম্ব বিএনপি।

পরাজয়ের জন্য ন্যূনতম প্রস্তুত ছিলেন না নেতারা, যদিও অনেক প্রার্থী নির্বাচনে কারচুপি ও ফলাফল প্রভাবিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। এখন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচনে ধরাশায়ী হওয়ার কারণ খুঁজতে তথ্য নিয়ে ৯ সেপ্টেম্বর রাতেই বৈঠক করেন। তবে প্রতিপক্ষের কৌশলে এমন শোচনীয় পরাজয় হয়েছে মনে করছেন নেতারা।

তাদের ভাষ্য, ছাত্রদলের পাল্টা কোনো কৌশল ছিল না। ছিল না সমন্বয়। নির্বাচনের ফলাফল মূল্যায়নেরও তাগিদ দিয়েছেন নেতাকর্মীরা। তাছাড়া কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভরাডুবির অন্যতম কারণ হলো ভাগাভাগির হল কমিটি, হল কমিটির প্রার্থীদের ক্যাম্পাসে পরিচিতি নেই, বিএনপির মাত্র একজন নেতার মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে প্রার্থী তালিকা প্রণয়ন, সাবেক ছাত্রনেতা ও বিএনপিপন্থি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে সমন্বয়হীনতার কারণেই এমন ফলাফল হয়েছে।

এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রদলের নেতাদের ধারাবাহিক যোগাযোগ না থাকাও তাদের সঙ্গে দূরত্বের বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর বাইরে গ্রুপিং ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের সম্পাদকীয় তো দূরের কথা, একজন সদস্য প্রার্থীও বিজয়ী হয়ে বের হয়ে আসতে পারেননি বলেও মনে করছেন তারা।

এছাড়া অল্প সময়ে প্যানেল গঠন করায় বিভিন্ন গ্রুপকে এক প্ল্যাটফর্মে আনতে পারেনি ছাত্রদল। নির্বাচনে দলের প্রত্যেক স্তরের নেতাকর্মী আর সমর্থকদের পাশে টানতেও পারেনি। শুধু প্রার্থীদের ব্যক্তি ইমেজকে কেন্দ্র করে নির্বাচনি বৈতরণি পার হতে চেয়েছে সংগঠনটি। শিক্ষক ও নারী ভোটার কিংবা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল খুবই দুর্বল।

তাছাড়া সামাজিক মাধ্যমে তাদের প্রচারণা এবং জেলা থেকে ফোন করে ভোটের জন্য চাপ দেয়াকেও পরাজয়ের কারণ হিসেবে দেখছেন তারা। জেলার ফোন হিতে বিপরীত হয়েছে বলেই মনে করেন তারা। ডাকসুতে বিপর্যয়ের পর বিএনপির ছাত্র সংগঠনটি ভোটে অস্বচ্ছতা, অনিয়মের বিভিন্ন অভিযোগ করেছে প্রকাশ্যে।

ছাত্রদল ও বিএনপি নেতাদের অনেকে এমন অভিযোগও করছেন যে, ডাকসুর ভোটের ব্যাপারে ছাত্রলীগের সঙ্গেও ছাত্রশিবিরের আঁতাত হয়েছিল। ছাত্রশিবির অবশ্য এসব অভিযোগ মানতে রাজি নয়। তবে ছাত্রদল ও বিএনপির নেতৃত্ব প্রাথমিকভাবে নিজেদের কিছু দুর্বলতার বিষয়ও চিহ্নিত করেছে বলে জানা গেছে।

এ ছাড়া ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল মূল্যায়নে মঙ্গলবার বৈঠকে করেছেন ছাত্রদলের নেতারা। বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল জানান, নির্বাচনের সমস্ত ডাটা নিয়ে কাজ করছেন তারা। ডাকসু নির্বাচনে ১২টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে ৯টিতে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।

বাকি তিনটি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। সদস্য পদ রয়েছে ১৩টি। এর মধ্যে ১১টিতে জয়ী হয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের সদস্যরা। একটিতে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। অন্যটিতে জয়ী হন বাম সমর্থিত প্রার্থী। এর মধ্যে কোনো পদেই ছাত্রদলের প্যানেলের নেতারা জয়লাভ করতে পারেননি, এমনকি ভোটের ব্যবধানও ছিল অনেক বেশি।

ছাত্রদলের নেতারা জানিয়েছেন, ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীদের যে ফলাফল এসেছে, তা মাত্র ১০ থেকে ১২ দিনের প্রচারণায় এসেছে। যে প্রচারণা ৫ আগস্টের পরপরই শুরু হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু ঢাবি ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের প্রতি কেন্দ্র থেকে সে ধরনের কোনো দিকনির্দেশনা ছিল না। তারা মনে করেন, নির্বাচনে যাব না মুখে মুখে বললেও ভেতরে ভেতরে ৫ আগস্টের পর থেকেই নির্বাচন নিয়ে পরিকল্পিতভাবেই কাজ করেছে ছাত্রশিবির।

ঢাবি ছাত্রদলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের হল কমিটিসহ সব জায়গায় যোগ্য ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। এর পরিবর্তে তরুণদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। অর্থাৎ, আমার লোক না হলে তাকে কোনো পদ-পদবি দেওয়া যাবে না। অথচ নির্বাচনের দিন হল কমিটির নেতাদেরও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এর বাইরে পারস্পরিক বিভেদ এবং দ্বন্দ্বও ফল বিপর্যয়ের কারণ বলে মনে করছেন তারা।

ওদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় এক নেতার দিকনির্দেশনায় ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা কাজ করেছেন। এই নেতা নির্বাচনের দিন ছাত্রদলের সাবেক কোনো নেতার ফোনও রিসিভ করেননি এবং কোনো নির্দেশনা দেননি। ডাকসু ছাত্রদলের সাবেক নেতা এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নেতাদেরও নির্বাচনের দিন তিনি কোনো দিকনির্দেশনা দেননি বলেই মনে করেন তারা। তবে তাদের নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান ছাত্রনেতারা।

সবকিছু ছাপিয়ে ডাকসু নির্বাচনে বড় ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিং হয়েছে বলেও অভিযোগ ছাত্রদলের নেতাদের। তাদের ভাষ্য, ঢাবির ভিসি, প্রক্টরিয়াল বডিসহ নির্বাচনে সম্পৃক্ত শিক্ষক এবং অন্যদের বেশির ভাগ জামায়াত-শিবির সমর্থিত ছিলেন। এ কারণে নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল আলাদা সুবিধা পেয়েছে। ফলাফল ঘোষণার সময় মঙ্গলবার রাতে ফেসবুক পোস্টে পরিকল্পিত কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন ছাত্রদল প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী মো. আবিদুল ইসলাম খান।

অভিযোগ থাকলেও নির্বাচনে কী ধরনের ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং হয়েছে, তা এখনো খুঁজে বের করতে পারেনি বিএনপি। তা ছাড়া বিদেশ থেকে সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েঞ্জাররা শিবিরের পক্ষে অবস্থান নিয়ে সুইং ভোট নষ্ট করেছেন বলেও মনে করে বিএনপি। বিএনপির আশঙ্কা, তাদের কথায় যদি ভোট ঘুরে যায়, তাহলে সেটি ভবিষ্যতের জন্য বড় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমাদের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান ছিল না ডাকসু নির্বাচন নিয়ে। যাদের সমন্বয় করেত দেওয়া হয়েছিল, তারা হয়তো শিবিরের কৌশল ধরতে পারেনি। তবে জাতীয় রাজনীতিতে বা সংসদ নির্বাচনে ডাকসুর প্রভাব পড়বে বলে আমরা মনে করি না। আমাদের আরও সতর্কতার সঙ্গে আগামী দিনের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে।’

Link copied!