ঢাকা সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

রাজকীয় হানিফের নাটকীয় উত্থান

সালমান ফরিদ ও আব্দুল আহাদ, সিলেট
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫, ১১:৩০ পিএম
  • সিসিকের সেকশন অফিসার পদে কাজ করেও বিলাসী জীবন
  • শহরে যাপন করেন সাধারণ জীবন, গ্রামে আলিশান কারবার
  • অবৈধ পথে আয়ের প্রায় পুরোটাই বিনিয়োগ করেছেন নিজ গ্রামে
  • দেড় একর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা ডেইরি ফার্মে রয়েছে দেশি-বিদেশি প্রায় ৩০০ গরু
  • বিপুল জায়গা জুড়ে আছে মাছ ও হাঁসের খামার
  • নিয়োগ বাণিজ্য, ময়লা বাণিজ্য ও টেন্ডার দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল আয়
  • সম্পদের সবই স্ত্রী মেহেরুন নেছার নামে

সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) সেকশন অফিসার মো. হানিফুর রহমান। চাকরিতে ঢোকার আগে দুই হাতে ছিল শূন্য থালা, ছিলেন সোয়ান ফোম কোম্পানির সেলসম্যান। ভাগ্যগুণে পেয়ে যান সিসিকের চাকরি। যোগ দেন সেকশন অফিসার হিসেবে। কিন্তু এই মানুষটির হাতে একদিন ধরা দিল আলাদীনের চেরাগ। যার বদৌলতে আজ তিনি বনে গিয়েছেনÑ শাহেন শাহ। ঘরে-বাইরে এখন রাজকীয় জীবনের অধিকারী তিনি। গড়ে তুলেছেন স্বপ্নের মতো একটি সাজানো-গোছানো সাম্রাজ্য। সেখানে কী আছে সেই প্রশ্ন অবান্তর, বরং কী নেই সেটিই মুখ্য। বিলাসবহুল গাড়ি, রাজকীয় বাগানবাড়ি, যে বাড়িতে শোবার ঘরের একটি খাট কেনা ৩ লাখ টাকায়।

গ্রামে আছে দৃষ্টির সীমানা বিস্তৃত জমির পর জমি। কোটি কোটি টাকায় গড়ে তোলা গরুর খামার, শহরে অগণিত ফ্ল্যাট, একাধিক প্লট, আছে বিশাল ব্যাংক ব্যালান্স। তার স্বপ্নের প্রধান সারথি প্রিয়তমা স্ত্রী মেহেরুন নেছা। তিনিই মূলত সেখানকার প্রকৃত অধিপতি। তার নামেই হানিফ রাজ্যের চাবিকাঠি। তবে রাজকীয় জীবনের অধিকারী হলেও তিনি বেশ চাপা স্বভাবের। সিলেট শহরে তিনি ঘুণাক্ষরেও কাউকে বোঝতে দেন না সে কথা! রিকশায় চড়ে, মোটরসাইকেলে করে মাঝেমধ্যে অফিস করেন। কেউ দেখলে ধারণাও করতে পারবেন না, তিনি একটি রাজকীয় সাম্রাজ্যের ‘মহান অধিপতি’। 

হানিফের উত্থান সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়াত বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের আমল থেকে। তখন সিলেট পৌরসভা। কামরানের আস্থাভাজন হয়ে উঠতে তার বেগ পেতে হয়নি। কামরান যুগের অবসানের পর আসে আরিফুল হক চৌধুরীর আমল। রঙ বদলাতে সময় নেননি। দ্রুত হয়ে ওঠেন আরিফুল হক চৌধুরীর আস্থাভাজন। এর পর থেকে হানিফ হয়ে ওঠেন আরও প্রভাবশালী। অনিয়ম-দুর্নীতিতে নেমে পড়েন দুই হাত খুলে। ‘প্রশাসনিক কর্মকর্তা’ হয়েও অল্পদিনে নগর ভবনে পরিণত হন ‘দ্বিতীয় কর্তা’য়। আরিফ যুগেও একই পথ অবলম্বন করেন। সিসিকের প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদ ছাড়াও কনজারভেন্সি শাখার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। পরে আরও গুরুত্বপূর্ণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শাখার দায়িত্ব পান। সিসিকে সবচেয়ে বেশি এই শাখায় নিয়মিত নিয়োগ চলমান থাকে। ফলে নগরভবনে নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন অতিমাত্রায়। সিসিকে তাকে পরিচিতি এনে দেয় ‘দুর্নীতির বরপুত্র’ নামে।

সোয়ান ফোমের লাইনম্যান থেকে সাফল্যের শীর্ষে:

প্রথম জীবনে ছিলেন একটি পত্রিকায় সার্কুলেশন বিভাগের সহকারী। ২০০০ সালে যোগ দেন সোয়ান ফোমের লাইনম্যান হিসেবে কোম্পানির সেলস বিভাগে। ২০০১ সালে তৎকালীন মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের হাত ধরে ঢুকে পড়েন সিলেট সিটি কর্পোরেশনে। এই নিয়োগই ধীরে ধীরে তার জীবন বদলে দিতে শুরু করে।

একাধিক সূত্র জানায়, মাত্র দুই দশক আগেও হানিফের তেমন কিছু ছিল না। সিটি করপোরেশনে চাকরির কল্যাণে তার ভাগ্যের চাকা বদলে যায়। তিনি বনে যান অঢেল সম্পদের মালিক। গ্রামে গড়ে তুলেছেন জমিদারি। আছে বিশাল এলাকা জুড়ে গরু ও মাছের খামার। সেখানেই আছে রাজকীয় খামার বাড়ি। সিলেট সিটি করপোরেশনের অনেক কিছু সেখানে নিয়ে ব্যবহার করেছেন তিনি। 
প্রায় দুই দশক ধরে তিনিই সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ভেতরের সবচেয়ে প্রভাবশালী কর্মকর্তা। একাধিক মেয়র এলে-গেলেও তার অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। তার আধিপত্য শুধু নগরভবনেই সীমাবদ্ধ নয়। দাপট রয়েছে সিসিক প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে বাইরের অবৈধ কাজকারবার থেকে মাসোয়ারা আদায়ে সিদ্ধহস্ত তিনি। সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর দুই আমল ছিল তার দুর্নীতির স্বর্ণযুগ। সবশেষ আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর আমলের এক বছরেও তিনি সুবিধা করতে পেরেছিলেন বেশ ভালোভাবেই। অভিযোগ আছে, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর এক বছরের আমলে বর্জ্য শাখায় ১৭৬ জনের নিয়োগ নিয়ে যে তুলকালামকা- হয়, সেখানেও হানিফ ছিলেন নায়ক। প্রত্যেকের কাছ থেকে কমপক্ষে দুই লাখ টাকা করে আর্থিক সুবিধা নিয়ে চাকরি দেওয়া হয়।

ঘুষের এই টাকা নিয়ে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সাথে দেন-দরবারের একপর্যায়ে তাকে বর্জ্য শাখা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। হানিফ তার অবৈধপথে আয়ের প্রায় পুরোটাই নিজের গ্রামে বিনিয়োগ করেছেন। সিলেট শহরে বাসা-বাড়ি ও জায়গা ক্রয় ছাড়া খুব একটা বিনিয়োগ করেননি।

সিসিকের ভেতরের একাধিক সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে নতুন প্রশাসন আসার পর থেকে প্রশাসনিক শাখা পুরোদস্তুর তার নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। সিসিকে চারশর বেশি লোক নিয়োগ হয়েছে তার হাত ধরেই। মাস্টাররোলে নিয়োগপ্রাপ্তদের কাছ থেকে জনপ্রতি তিন থেকে চার লাখ টাকা করে আর্থিক সুবিধা নেন। যদিও এ টাকা তিনি একা হজম করেননি, সিসিকিরে উপর থেকে সিনিয়র সব কর্মকর্তা তার ভাগ পেয়েছেন।

বর্তমানে তিনি সিসিকে যে শাখার কর্মকর্তা সেই কনজারভেন্সি শাখায় কাজ করেন সবচেয়ে বেশি শ্রমিক। তাদের মধ্যে নাইটগার্ড, রিকশা নিয়ন্ত্রণ, বিদ্যুৎকর্মী, ময়লার গাড়িচালক, বর্জ্যকর্মীসহ বিভিন্ন পদে তারা মাস্টাররোলে কর্মরত। তাদের প্রত্যেকেই টাকার বিনিময়ে চাকরি নিতে হয়েছে। পরিচ্ছন্নতা শ্রমিকরা পর্যন্ত ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকা দিয়ে সিসিকে চাকরি নিয়েছেন। আর এই টাকা বুঝে নিয়েছেন হানিফ।

স্ত্রীই তার অনৈতিক কর্মের রক্ষাকবচ:

হানিফের নামে খুব একটা সম্পদ নেই। যা আছে তার বেশির ভাগই স্ত্রীর নামে। তিনি যত সম্পদ গড়ে তুলেছেন, তা সবই করেছেন স্ত্রীর নামে। সিলেট সিটি করপোরেশনের বরাদ্দ করা প্লটটিও তিনি নিয়েছেন স্ত্রীর নামে। আর গ্রামে ‘আর এম ডেইরি ফার্ম’ নামে যে বিশাল ডেইরি ফার্মটি রয়েছে তার, সেটিরও উদ্যোক্তা তার স্ত্রী। এলাকায় হাওর ও আশপাশের যেসব জমিজমা কিনেছেন, তিনি তারও একটি বড় অংশ স্ত্রীর নামে। সিলেট শহরে যে কয়টি বহুতল ভবন ও জমি রয়েছে, সেগুলোরও বেশির ভাগের মালিকানায় নাম স্ত্রী মেহেরুন্নেছার।

গ্রামের নতুন জমিদার:

হানিফের গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের জালালপুরে। একসময় কোনো রকমে সেখানে মাথাগোঁজার ঠাঁই থাকলেও আজ সেই গ্রামে রয়েছে পাহাড়সম সম্পদ। বিস্তীর্ণ এলাকার প্রায় পুরোটাই তার নিজের করে নিয়েছেন। দেড় একরের বিশাল এলাকাজুড়ে মায়ের নামে আর এম ডেইরি ফার্ম গড়ে তুলেছেন হানিফ। যে ফার্মে বিনিয়োগ করা হয়েছে অর্ধশত কোটি টাকার কাছাকাছি। ২ শেডের ওই ফার্মে রয়েছে দেশি-বিদেশি প্রায় ৩০০ গরু। যেগুলোর একেকটির বাজার মূল্য ২ থেকে ৩ লাখ টাকা। সেই গরুর খাবারের জন্য পাশেই বন্দোবস্ত করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ একর জায়গা জুড়ে উন্নত জাতের ঘাষের চাষাবাদ। সেখানে রয়েছে মৎস্য খামার। মাছের খামারে আছে হাঁসের পাল। গরু ও মাছের খামার রক্ষাণাবেক্ষণের জন্য রয়েছে বিশাল কর্মচারি ও শ্রমিকবাহিনী। তাদের থাকবার জন্য খামারের ভেতরে তৈরি করা হয়েছে ৪টি পৃথক বহুতল ভবন। হানিফ নিজেই স্বীকার করেন, এসব জমির মালিক তিনি নন। তার ‘উদ্যোক্তা’ স্ত্রী। যিনি বিয়ের পর একজন সাধারণ গৃহিণী ছিলেন মাত্র।

নাম প্রকাশে স্থানীয় জালালপুরের একজন জমি বিক্রেতা দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমি জমি বিক্রি করতে চাইনি। অনেকটা জোর করেই জমি কিনে নিয়েছেন হানিফ। প্রথমে মতো না দিলেও পরে জমি তার খামারের ভেতরে ঢুকে বেদখল এবং চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ার ভয়ে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি।

হানিফ ও তার স্ত্রী প্রায় প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার গ্রামের বাড়িতে যান। খামারের মালিক তারা হলেও এর দেখবালের পুরো দায়িত্ব তার বড় ভাতিজা আলালের কাঁধে। তিনি জানান, ফার্মে তার বাবা আলতাফুর রহমান, চাচা হানিফুর রহমান ও চাচির (হানিফুর রহমানের স্ত্রী) অংশ রয়েছে। ফার্মটি করা হয়েছে দাদির নামে।

সিসিকের একটি সূত্র জানায়, হানিফ বিভিন্ন সময় সিসিকের বিভিন্ন মালামাল নিয়ে তার ফার্মে কাজে লাগান। এমন কি সিসিক থেকে মালামাল নিয়ে সেখানে নিরাপদে লুকিয়ে রাখেন। সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, বৈদ্যুতিক লাইট, সারঞ্জামÑ কিছুই তিনি নিতে বাদ দেননি। আর এই কাজটি করেন তারই আস্থাভাজন এবং তার হাতে নিয়োগ পাওয়া নগরীর দক্ষিণ সুরমার মোমিনখোলার সেলিম ড্রাইভার। ২০১৭ সালের শেষ দিকে সিসিকের ৩টি গাড়ি গায়েবের অভিযোগ উঠলে বিষয়টি আলোচনায় আসে। এ নিয়ে পুলিশ তদন্তও করে। ওই বছরের ২৩ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। তদন্ত প্রতিবেদনে সিসিক কর্মকর্তা হানিফের যোগসাজশে অস্থায়ী কার্যালয়ে গ্যাস কাটার দিয়ে গাড়িগুলো কেটে বাইরে পাচারের বিষয়টি উঠে আসে। 

বর্জ্য শাখায় দুর্নীতির আইডল:

হানিফের উত্থান মূলত বর্জ্য শাখার ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে। বর্জ্য অপসারণের নামে তার বাহিনী বিভিন্ন সোর্স থেকে অর্থ হরিলুট শুরু করে। একাধিক সূত্র দাবি করে, হানিফ যুগে সিসিকের বর্জ্য শাখায় ময়লার গাড়ি ছিল শতাধিক। এর মধ্যে প্রতিদিন অন্তত ৬০টি গাড়ি সচল থেকে কাজে নিয়োজিত থাকতে পারত। এ জন্য তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে নেওয়া হয় দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে। রেস্তোরাঁ থেকে নিয়ে আসা বর্জ্যরে মধ্য থেকে আলাদা করে সংগ্রহ করা হয় উচ্ছিষ্ট খাবার। এই খাবার বিক্রি করা হয় বিভিন্ন মাছের খামারে। সেসব খামারিদের সঙ্গেও চুক্তিবদ্ধ হয়ে টাকা আদায় করতেন হানিফের বিশ্বস্ত লোকজন।

এভাবে শুধু রেস্টুরেন্ট ও হাসপাতালের বর্জ্য ও ময়লা অপসারণ করেই তার মাসিক আয় হতো অন্তত ৮ লাখ টাকা। এ ছাড়া দৈনিক মজুরি ভিত্তিকে কাজ করা লোকজনের কাছ থেকেও টাকার একটা অংশ কেটে রাখা, বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও মার্কেট, বিপণিবিতান থেকে ময়লা-আবর্জনা অপসারণে কর্মীদের দিয়ে টাকা আদায় এবং ফুটপাতে বসা হকারদের কাছ থেকেও দৈনিক টাকা উত্তোলনের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। এ সময় হানিফ সিসিকের বিলবোর্ডের খুঁটি সেলিম ড্রাইভারের মাধ্যমে আদমপুর পাচার করতেন। সেখান থেকে আয়ের কোনো অংশই সিসিকের কোষাগারে দেওয়া হতো না। 

স্বজনপ্রীতির মহোৎসব:

সিসিকের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করে, বর্তমানে সিলেট সিটি করপোরেশনে হানিফের ১৮ জন নিকটাত্মীয়-স্বজন চাকরিতে কর্মরত। এর মধ্যে ভাগ্নে ও ভাতিজা সম্পর্কের রয়েছেন ৯ জন। প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদেও তারা নিয়োগ পেয়েছেন। এ ছাড়া এ যাবৎ তার মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে অর্ধশতাধিক কমলগঞ্জের বাসিন্দা বলে জানিয়েছে ওই সূত্র। অভিযোগ রয়েছে, কনজারভেন্সি শাখাসহ বিভিন্ন শাখায় হত্যাসহ বিভিন্ন মামলার দাগি অপরাধীদের নিয়োগ দিয়ে দাপট খাটাচ্ছেন তিনি।

সিসিক থেকে বরাদ্দ নিয়ে সিসিককেই ভাড়া:

নগরীর বাগবাড়ির নিলয় আবাসিক এলাকায় সিলেট সিটি করপোরেশন থেকে বরাদ্দ নেন ৫ কাঠার একটি প্লট। সেটি নিয়ে ভাড়া দিয়ে দিয়েছেন স্বয়ং সিটি কপোরেশনকে। কসাই খানার জন্য সিসিককে মাসে ৫০০০ টাকায় ভাড়া দেন তিনি। পরবর্তিতে ওই প্লটের ভাড়া বাড়িয়ে করা হয় ১০ হাজার টাকা। কিছুদিন আগে তার স্ত্রী মেহেরুননেছা ওই প্লটের ভাড়া ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা বৃদ্ধির জন্য সিসিক কর্তৃপক্ষের কাছে একটি আবেদন করেছিলেন। সিটি করপোরেশন সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভাড়া বাড়িয়ে ১৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করে। 

অভিযোগ বিষয়ে হানিফের বক্তব্য:

অভিযোগ নিয়ে তার বক্তব্য চাইতে গেলে হানিফুর রহমান থাকেন নির্লিপ্ত। কোনো অভিযোগ নিয়ে তার কোনো অনুশোচনা নেই। বলেন, ‘নিউজ করে কী হবে? আগেও এসব নিয়ে সাংবাদিকরা লিখেছেন, কিচ্ছু হয়নি। আপনারা লিখবেন তো? লিখেন। লিখে কী হবে?’

তার দাবি, সব অভিযোগ মিথ্যা। বলেন, আমি অনিয়ম-দুর্নীতি করিনি। আমি ফোম কোম্পানির সেলসম্যান থেকে কঠোর পরিশ্রম ও সততার মাধ্যমে আজকের অবস্থানে পৌঁছেছি। অর্জিত সম্পদের অধিকাংশই বৈধ আয় থেকে এসেছে। 

স্ত্রীর নামে থাকা সম্পদ নিয়ে বলেন, আমার স্ত্রীর নামে থাকা সম্পদ পরিবারের স্বাভাবিক ও আইনি বিষয়। সিসিকের মালামাল বা যানবাহন ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করিনি, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক। বাগবাড়ির নিলয় আবাসিক এলাকার প্লট স্ত্রীর নামে হওয়া ও সিসিককে ভাড়া দেওয়ার ব্যাপারে আমি সব নিয়ম ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি।

হানিফের নামে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার বলেন, আমি সিসিকে সদ্য যোগদান করেছি। সিসিকে নানান অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে এবং অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে কারো লিখিত অভিযোগ বা সংবাদ পেলে যথাযথ তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আমি মেয়র থাকার সময়ে দুর্নীতি রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। হানিফের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণসহ অভিযোগ থাকলে আমি তার দায়ভার নেব। অনেক সময় কর্মচারীরা ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে অন্যদের ফাঁসানোর চেষ্টা করে। আমার সময়কার দুর্নীতির কোনো প্রমাণ থাকলে তা আমি গ্রহণ করব।

গত ২০ বছর সিসিকের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-১-এর দায়িত্ব পালনকারী সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, হানিফ মেয়র কামরানের ও আরিফুল হক চৌধুরীর আস্থাভাজন ছিলেন। শুনেছি গত মেয়রের সময় একই সাথে দুটি বাগান বাড়ি তৈরি হয়েছিল। এর একটি সেকশন অফিসার হানিফের। একজন সাধারণ কর্মকর্তা বাগানবাড়িসহ কীভাবে শতকোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়ে যায়, এগুলো নিয়ে রাষ্ট্র খোঁজ নিতেই পারে।