ঢাকা রবিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৫

বললেন আইন উপদেষ্টা

উপদেষ্টা হিসেবে আমাদের  ‘সেইফ এক্সিট’ প্রয়োজন নেই 

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২৫, ১১:০৮ পিএম

অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা ‘সেইফ এক্সিট খুঁজছেন’ এমন মন্তব্যের সঙ্গে একমত নন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের (উপদেষ্টারা) কারো কোনো সেইফ এক্সিটের প্রয়োজন নাই।’ তবে তিনি মনে করেন, রাষ্ট্রকাঠামো যে অবস্থায় দাঁড়িয়েছে, সেখানে ‘জাতি হিসেবে’ বাংলাদেশের একটি ‘সেইফ এক্সিটের প্রয়োজন আছে।’

গতকাল শনিবার ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত ‘খসড়া জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ ২০২৫’ শীর্ষক পরামর্শক সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। সভাটি অনুষ্ঠিত হয় আইন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে।

সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এক বক্তব্যে দাবি করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের অনেকেই ‘সেইফ এক্সিট’ খুঁজছেন। এরপর মঙ্গলবার নওগাঁয় এক অনুষ্ঠানে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমও একই ধরনের মন্তব্য করেন। সেদিন উপদেষ্টাদের উদ্দেশ করে সারজিস বলেন, ‘মৃত্যু ছাড়া মানুষের সেইফ এক্সিট নেই।’ তবে নাহিদ ইসলাম বা সারজিস আলম কেউই নির্দিষ্ট করে বলেননি, কোন কোন উপদেষ্টা সেইফ এক্সিট খুঁজছেন বলে তাদের ধারণা।

এ বক্তব্যের পর উপদেষ্টাদের পক্ষ থেকে পাল্টা প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করে। গত বুধবার পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, তিনি কোনো ‘এক্সিট’ খুঁজছেন না। তার ভাষায়, এর আগেও বহু ঝড়ঝঞ্ঝা এসেছে, ওই ঝড়-ঝঞ্ঝা প্রতিহত করে দেশে থেকেছি। বাকিটা জীবনও দেশেই কাটাব আপনাদের সঙ্গে।

নাহিদ ইসলামের বক্তব্যের বিষয়ে সেদিন রিজওয়ানা বলেন, নাহিদ ইসলামের এই বক্তব্য তাকেই প্রমাণ করতে হবে। এটা আমার বিষয় না, ওই বক্তব্য খ-ানোরও বিষয় না।

এরপর গতকাল শনিবার আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট অবস্থান জানান। তিনি বলেন, আপনারা জানেন, এখন ‘সেইফ এক্সিট’ নিয়ে নানা কথাবার্তা হচ্ছে। তা আমরা উপদেষ্টারা খুব নিশ্চিতভাবে জানি যে, আমাদের কারো কোনো সেইফ এক্সিটের প্রয়োজন নাই। তবে বাংলাদেশের জাতি হিসেবে আমাদের সেইফ এক্সিটের প্রয়োজন আছে। কারণ একটা ভয়াবহ, অসুস্থ, আত্মবিধ্বংসী রাষ্ট্রকাঠামো থেকে আমাদের সেইফ এক্সিট প্রয়োজন এই জাতির।

সভায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ ২০২৫ নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বিগত সরকারের নিয়োগ প্রক্রিয়ারও সমালোচনা করেন। তার ভাষায়, আপনারা সবাই জানেন, রাষ্ট্রপতি কখনোই প্রধান বিচারপতিকে স্বাধীনভাবে নিয়োগ করেন নাই। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা অনুযায়ী বাংলাদেশে সবসময় প্রধান বিচারপতি নিয়োগ পেয়েছেন। তো আমরা আশা করব, এই মানবাধিকার আইনটার মাধ্যমে যেন আমরা সত্যিকার অর্থে একটি শক্তিশালী মানবাধিকার কমিশন প্রতিষ্ঠা করতে পারি।

আসিফ নজরুল আরও বলেন, একটা শক্তিশালী মানবাধিকার কমিশন গড়ে তোলা শুধু সরকারের, আইনজীবীদের, অ্যাটর্নি জেনারেলের বা সমাজের কোনো নির্দিষ্ট অংশের দায়িত্ব নয়। এটা বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষের দায়িত্ব। আশা করি, এ দায়িত্ব আগে থেকে অনেক ভালোভাবে আমরা পালন করতে পারব।