ঢাকা রবিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৫

গুম কমিশনের প্রামাণ্যচিত্র প্রকাশ

বিরোধী মত দমনে গুম ছিল প্রধান হাতিয়ার

শহিদুল ইসলাম রাজী
প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২৫, ১১:১৮ পিএম
  • টার্গেট ছিল বিএনপি-জামায়াত-শিবির
  •  জাতীয় নির্বাচনের আগে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেত গুমের সংখ্যা
  • অনেককে দীর্ঘদিন আটকে রেখে একাধিক মামলা দিয়ে ছেড়ে দিত 
  • আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গল্পই মিডিয়া প্রচার করত নির্দ্বিধায় : নূর খান 
  • ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেম গুমের সাথে কন্টিনিউয়াস একটা সিস্টেম ছিল 
  • ৫ আগস্টের পর ধ্বংস করা হয় আলামত

এক ভুক্তভোগীর অভিযোগ- বলত যে, ‘তুই এই সংগঠন করো?’ আমি বলছি, ‘না’। শুরু হইল কারেন্ট শক।

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমন-নিপীড়ন ছিল নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। এক্ষেত্রে বিরোধী রাজনৈতিক দলকে দমন করার জন্য গুমকে একটা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে আওয়ামী সরকার। সেক্ষেত্রে প্রধান টার্গেট ছিলÑ বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। বিরোধী দল, বিরোধী মত যখন সংগঠিত হয়ে তৎকালীন সরকারের কোনো বিষয়কে প্রটেস্ট করতে চাইত, তখনই বিরোধীদের দমনে নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যেত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে উঠিয়ে নেওয়ার সংখ্যা বেড়ে যেত। এতে মূল ভূমিকায় ছিলÑ র‌্যাব, পুলিশ, ডিবি, সিটিটিসি, ডিজিএফআই ও এনএসআই।

এসব বাহিনীর সদস্যদের তত্ত্বাবধানে গুমের শিকার ব্যক্তিদের দিনের পর দিন আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। তাদের অনেককেই হত্যা করা হয়েছে। আর যাদের বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে, তাদের একাধিক মামলা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বেশির ভাগ মামলাই হতো জঙ্গি তকমায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে। শেখ হাসিনার আমলে গুমের শিকার ব্যক্তিদের নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনার প্রামাণ্যচিত্র ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ গত বুধবার রাতে প্রকাশ করেছে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। এতে ফুটে উঠেছে গুম কারা করত, কীভাবে করত, গুমের পর নিখোঁজদের কোথায় এবং কীভাবে আটকে রাখা হতো, তাদের পরিণতি কী হতো এবং কারা কারা এই কাজে সরাসরি জড়িত ছিল। প্রামাণ্যচিত্রে উঠে এসেছে, প্রত্যেকটা জাতীয় নির্বাচনের আগে গুমের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেত। এসব গুম ও হত্যার সবকিছু সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই হয়েছে বলে মনে করছে গুমসংক্রান্ত কমিশন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এ পর্যন্ত গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনে ১৮০০ অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে ২৫০টির অকাট্য প্রমাণ পেয়েছে কমিশন। এদের মধ্যে বিভিন্ন পেশাজীবী ও শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছে। গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৪২ কর্মকর্তার পাসপোর্ট বাতিল করা হয়। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তবে গত বছরের ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশে ছেড়ে পালিয়েছে অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে শীর্ষ মহলের নির্দেশে ডিজিএফআই, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), পুলিশ, র‌্যাব ও ডিবি পুলিশ আয়নাঘর তৈরি করে। বিরোধীদের গুমের পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহম্মেদ সিদ্দিক। নিরাপত্তা বাহিনীগুলো বিচার ছাড়াই বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের আটক করছিল। তাদের মধ্যে ছিলেন বিএনপির একজন জনপ্রিয় নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমন। ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর রাজধানীর নাখালপাড়ার বাসা থেকে র‌্যাব পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় তৎকালীন ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম সুমনকে। তার সঙ্গে নিখোঁজ হন আরও পাঁচজন। নিখোঁজের পরপরই পরিবার সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ করলেও এখন পর্যন্ত সুমনের কোনো সন্ধান মেলেনি।

কমিশন সদস্য সাজ্জাদ হোসেন বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে যখন জনমত তৈরি হয়ে যেত, সরকারের বিরুদ্ধে যখন মানুষ প্রশ্ন করা শুরু করত, যখন সংঘবদ্ধ আন্দোলনের চেষ্টা হতো, বিরোধী দল, বিরোধী মত যখন সংগঠিতভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে কোনো বিষয়কে প্রটেস্ট করতে চাইতÑ তখনই নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যেত। আমরা যেটা দেখেছি, প্রত্যেকটা জাতীয় নির্বাচনের আগে গুমের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেত। এটা আমরা দেখেছি ২০১৪-এর নির্বাচনের আগে অর্থাৎ ২০১৩-এর পিরিয়ডে এবং ২০১৮-এর সময় ২০১৭-১৮ এবং ২০২৪-এর নির্বাচনের ঠিক আগে ২০২৩-এর শেষের দিকে এবং ২০২৪ সালের শুরুর দিকে।

তিনি বলেন, এটা আমরা সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালেও দেখতাম, অস্বাভাবিকভাবে মামলার সংখ্যাটা বেড়ে যাচ্ছে এবং সেখানে মূল আসামি হিসেবে যাদের দেখা হতো তারা হচ্ছে তৎকালীন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। 

প্রামাণ্যচিত্রে গুম কমিশনের সদস্য নুর খান বলেন, মিডিয়াকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী র‌্যাব, ডিজিএফআই, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তাদের মতো করে ব্যবহার করেছে। তারা যেই ধরনের গল্প বানিয়ে দিত সেই গল্পই মিডিয়া প্রচার করত নির্দ্বিধায়। কোনো জায়গায় কিন্তু তারা প্রশ্ন করত না। 

তথ্যচিত্র সূত্রে দেখা গেছে, ৪৭ বছর বয়সি গুমের শিকার এক পুরুষ ভুক্তভোগী ডিবি ও ডিজিএফআই কর্তৃক ৪ মাস ১০ দিন নিখোঁজ ছিলেন। গুম কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ওই ভুক্তভোগী জানান, ‘তাকে বলছে, তারেক রহমানের অ্যাকাউন্ট ডিটেল বলেন। কোন কোন জায়গায় তার টাকা থাকে? আমি বলছি ভাই, আমি জানি না। আই ডোন্ট নো, আই সিম্পলি ডোন্ট নো। তো বলছে, ম্যাডাম খালেদা জিয়ার টাকা কোথায় কোথায় দিয়েছেন? কোথায় রাখে? আমি বলছি, আমি জানি না। এরপর টর্চার করে ফেলে রাখল।’ 

সম্পৃক্ততা না থাকলেও যদি দাড়ি-টুপি পরে, মসজিদ-মাদ্রাসায় যায় বা এগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে জঙ্গি মামলা দেওয়া হয়েছে। ২৮ বছর বয়সি গুমের শিকার এক পুরুষ ভুক্তভোগী র‌্যাব-২ কর্তৃক ৬২ দিন নিখোঁজ ছিলেন। তিনি কমিশনকে বলেন, ‘আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়, তোর জামায়াতের কোন পদ? শিবিরের কোন পদে আছোছ। অক করছ, এই সেই প্রশ্ন। তো আমি বলছি, আমি একসময় ছাত্রশিবির করতাম, এখন করি না। তিনি বলেন, তখন আমার মুখে আরেকটু বড় দাড়ি ছিল। মুখে বড় দাড়ি ক্যান, টাকনুর ওপরে কেন প্যান্ট পরিÑ এই ধরনের নানা কোশ্চেন করত। আবার প্রশ্ন করা হতোÑ আমার ভাই কেন জামায়াতে ইসলামী করত? এই টাইপের প্রশ্ন করা হতো। ফাঁকে ফাঁকে খুবই বাজে বিশ্রীভাবে কথায় কথায় গালি দিত। জঙ্গি, রাজাকারের বাচ্চা। তবে রাজাকারের বাচ্চাই বেশি বলছে।’ 

২০১৬ সালে র‌্যাব গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১, ১৯ বছর বয়সি এক যুবককে ৭ দিন গোপন বন্দিশালায় রেখেছিল। ওই ভুক্তভোগী বলেন, তারা একটা দড়িতে করে আমাকে মেশিনের মাধ্যমে উপরে ঝুলায়। ঝুলানোর পরে, এলোপাতাড়ি মারতে থাকে আর অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। একপর্যায়ে তারা আমাকে বলে, ‘তুই শিবিরের ক্যাডার।’ তুই করে কথা বলে এবং গালাগাল করে অনেক। তখন আমি কান্নাকাটি করি। একপর্যায়ে মারধরের সাথে সাথে আমার গোপন জায়গায় কারেন্ট শক দেয়। বাথরুমে গেলে বলত, ‘চোখ একটা খুলবি, তারপরে কাজ সারবি।’ আমি আসলে ওখানে কাউকে ওভাবে দেখিও নাই। একদিন দুই-তিনজন ব্যক্তি ক্যামেরার সামনে নেয় এবং বলে, ‘আমরা যেভাবে বলি, ঐভাবে বলতে হবে, যেন কোনো ভুল না হয়।’ ল্যাপটপ সামনে ছিল, আর তাদের মুখ ঢাকা ছিল, আমি ওইভাবে তাদের ফেস দেখিও নাই। তারা সেখানে বলে, ‘তুই তোর জীবনের সবকিছু বল।’

গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন আটকের পর কিছু ভুয়া মামলা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এটা একটা সিস্টেমে পরিণত হয়েছিল। আমরা সেটাকে বলছি, কিছু প্যাকেজ কেস দিচ্ছেন। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা, অস্ত্র আইনে, বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি। এসব আইনে মামলা দিয়ে দেওয়ায় ভুক্তভোগীকে অনেক দিন জেল খাটতে হচ্ছে। 

তিনি বলেন, প্রত্যেককে চার-পাঁচটা মামলায় একই ধরনের ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে এবং হুবহু ওয়ার্ড ফর ওয়ার্ড। যদি এভাবে হয় ৪-৫টা, তাহলে বুঝতে হবে এই কেসগুলো বানোয়াট কেস। দুটো মামলার আপনার ভাষা একরকম হতে পারে না বলে উল্লেখ করেন গুম কমিশনের চেয়ারম্যান। 

২০ বছর বয়সি এক ভুক্তভোগী যুবক ২০১৪ সালে র‌্যাব-১২ কর্তৃক অপহৃত হন। তিনি ৩৪ দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন। ওই যুবক গুম কমিশনকে বলেন, ‘চোখ বাঁধা, হ্যান্ডকাফ লাগানো। এখনো দাগগুলো যায়নি, ১০-১১ বছর হয়ে গেছে। বাথরুমে নিয়ে যাওয়ার সময়টা ছিল এরকম, আমাকে অন্ধের মতো একটা লাঠি ধরায় দিত। আমার হাত পেছনে বাঁধাÑ এ অবস্থায় একটা লাঠি আমার হাতের ফাঁকার মধ্যে দিত। উলঙ্গ করে কারেন্ট শক দিয়ে ঝুলায়ে রাখছিল দুই ঘণ্টার মতো। মানে একটাই দাবি যে, আমাকে স্বীকার করতে হবে। এই বিষয়টা তো আমি মানতে রাজি হইনি। শকটা কীভাবে দিয়েছিল? পেনিসের মধ্যে ক্লিপ বা এই জাতীয় কিছু একটা লাগাইছিল আর হাত দুটো উপরে বাঁধা ছিল। এই অবস্থায় কারেন্ট শক দিত আর পেছন থেকে মারত। ‘হ্যাঁ’ বললে মার থামে, কারেন্ট শক থামে। ‘না’ বললেই মার চলে। মানে এগুলো অনেকটা সাজেশন টাইপের। বলত, ‘তুমি এই সংগঠন করো?’ আমি বলছি, ‘না’। শুরু হইল কারেন্ট শক। 

আরেক ভুক্তভোগী ২৯ বছরের যুবক। যিনি ২০১৬ সালে র‌্যাব-১ কর্তৃক অপহৃত হন। তিনি ৫৩ দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন। এ ভুক্তভোগী কমিশনকে বলেন, ‘আমার তখন কোনো মামলা পর্যন্ত নাই। আমার শরীরে কোনো কাপড় রাখেনি ওরা। আমাকে ঝুলাইছে। এরপরে কিছু কিছু টর্চার করছে, যেগুলো আমি আপনাকে বলতে পারতেছি না। যেগুলো বলা যায় না। আমার ওয়াইফ জানে। তো ওখানে আমি সেন্সলেস হয়ে যাই। তখন নামায় তারা আমাকে। ছয় মাস দাগ ছিল আমার কব্জিতে। ওইখান থেকে আমার ঘাড়ের সমস্যা হয়ে গেছে। আমাকে টর্চার করছে এবং এমন জায়গায় ইলেকট্রিক শক দিছে, তারা বলতেছে, ‘তোকে আমি ইম্পোটেন্ট বানায় দিব, যদি তথ্য না দিস।’ আমাকে দীর্ঘ সময় ইলেকট্রিক শক দিছে এবং আমি ফিল করতেছিলাম, ইচ অ্যান্ড এভরি পার্ট অব মাই বডি। মানে ইলেকট্রিক শক খেয়ে আমার মনে হচ্ছিল আমার পা এবং আমার মাথা দুইটা স্কুইজ হয়ে এক হয়ে গেছে। 

কমিশনের সদস্যরা জানিয়েছেন, তদন্তে নেমে তারা দেখতে পেয়েছেন ৫ আগস্টের পরই অধিকাংশ আলামত ধ্বংস করা হয়েছে। এমনকি যেখানে আটকে রাখা হয়েছিল সেসব বন্দিশালার অবকাঠামো ধ্বংস বা পরিবর্তন করা হয়েছে। কমিশন সদস্য সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বিশেষ করে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলাগুলো হতো জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে। এটা কিন্তু প্রথমেই ভুক্তভোগীকে হিউমিলিয়েট করছে। সমাজ থেকে তাকে প্রথমে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হলো। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হলো এবং প্রতিবেশী সবাই তাকে ভিন্ন চোখে দেখে। এই ছেলেটা জঙ্গি, আমরা তো জানতাম না এটা জঙ্গি পরিবারের সন্তান। 

তিনি বলেন, যখন একজন গুম হচ্ছে, দেওয়ার আর ওয়ান অব টু থিংকস। একটা হলো তাকে মেরে ফেলা হবে বা তাকে বাঁচিয়ে রাখা হবে। তো বাঁচিয়ে রাখার পরবর্তীতে কী হবে? বাঁচিয়ে রাখার পরবর্তী বেশির ভাগ কেস হলো, তাদের মামলা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। মামলাগুলো যথেষ্ট ভয়ঙ্কর। 

কমিশন বলছে, ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেম গুমের সাথে কন্টিনিউয়াস একটা সিস্টেম ছিল। কমিশন-সংশ্লিষ্টরা জানান, ভুক্তভোগীদের আটকের পর ছেড়ে দেওয়াকে লিগালাইজ করার জন্য অর্থাৎ ভুক্তভোগীকে একটা বেআইনি কাস্টডি থেকে একটা আইনি কাস্টডিতে নেওয়ার জন্য একটা মামলা-মোকাদ্দমার দরকার। সেই কাজটা করতে গিয়ে অনেক মিথ্যা মামলা-মোকাদ্দমায় তাদের জড়িত করে দেওয়া হতো। প্রত্যেকের ক্ষেত্রে একাধিক মামলা দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে একটা মামলা প্রত্যেকের ক্ষেত্রে কমন। সেটা হচ্ছে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা এবং জঙ্গি তকমা দিয়ে দেওয়া। প্রত্যেকটা ভিক্টিমের ক্ষেত্রে দেখা গেছে তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আছে কি না। 

গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য ড. নাবিলা ইদ্রিস বলেছেন, ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু এর মানে এই নয় যে, বাহিনীগুলোতে কর্মরত দোষীরা পরিবর্তন হয়েছে। ৫ আগস্টের পর অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে আলামত ধ্বংস করা হয়। মণকে মণ কাগজ পোড়ানো হয়েছে সব জায়গায়। ডিজিএফআই বলেন, র‌্যাব বলেন, এনএসআই বলেন, সব জায়গায় আলামত পোড়ানো হয়। বিভিন্ন জায়গায় পুরো ভবনের স্ট্রাকচার বদলে ফেলা হয়।