ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৫

রূপনগরে অগ্নিকাণ্ড 

১০ মরদেহ শনাক্তের দাবি স্বজনদের

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৫, ১২:১২ এএম

এ যেন নিমতলীর ঘটনার পুনরাবৃত্তি। হাসপাতালে মরদেহের সামনে স্বজনদের আহাজারি চোখে জল আনছে সাধারণ রোগীসহ স্বজনদেরও। রাজধানীর মিরপুরে রূপনগরের আগুনের ঘটনায় পুড়ে মারা যাওয়া ১৬ জনের মধ্যে ১০ জনের মরদেহ শনাক্তের দাবি করেছেন স্বজনেরা। যাদের সবাই জীবিকা নির্বাহের জন্য ভবনটিতে কাজ করতেন। এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য বারবার দেখা যে কারো জন্য দুঃসহ উল্লেখ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সব লাশের চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে। তবে ১০ জনের লাশ শনাক্তের দাবি করেছেন স্বজনেরা। ভবিষ্যতে সমস্যা এড়াতে এখন সব লাশের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে রাখা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে স্বজনদের কাছে আপাতত এই ১০টি লাশ হস্তান্তর করা যাবে।

গতকাল বুধবার নিজ দপ্তরে ঢামেক পরিচালক সাংবাদিকদের আরও বলেন, নয়জন পুরুষ ও সাতজন নারীর লাশ এখানে এসেছে। লাশগুলো হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে। স্বজনেরা চাইলে, আর পুলিশ বা জেলা প্রশাসন অনুমতি দিলে শনাক্ত হওয়া লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়া হস্তান্তর করা যাবে।

এর আগে, শিয়ালবাড়ির একটি টিনশেড দোতলা রাসায়নিক গুদামে গত মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আগুন লাগে। গুদামে আগুন ধরে বিস্ফোরিত হয়ে পাশের চারতলা ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। পরে চারতলা ভবনের দোতলা ও তিনতলার বিভিন্ন স্থান থেকে ১৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া ১৬টি লাশ ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়।

সারোয়ারের লাশ মিলল জোড়া আঙুল দেখে

পুড়ে যাওয়া ভবনের আশপাশে বন্ধু সারোয়ারের ছবি হাতে মঙ্গলবার থেকেই খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন আমানুল্লাহ। সারোয়ার মিরপুরের রূপনগরের শিয়ালবাড়িতে পুড়ে যাওয়া একটি পোশাক কারখানায় হেলপার হিসেবে কাজ করতেন। গতকাল বুধবার সারোয়ারকে ঢাকা মেডিকেল মর্গে পাওয়ার কথা বলেছেন আমানুল্লাহ। তার মুখসহ পুরো শরীর পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। বাম হাতের বুড়ো আঙুলের সঙ্গে জোড়া লাগানো আরেকটি আঙুল দেখেই তাকে শনাক্ত করা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের কর্মকর্তারা বলেছেন, যে ১৬ জনের লাশ মিলেছে, তাদের সবার চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে। ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের পরেই লাশগুলো হস্তান্তর করা হবে। সারোয়ারের বন্ধু আমানুল্লাহ বলেন, ওর বাঁ হাতের বুড়া আঙুলে আরেকটা জমজ আঙুল আছে। শরীরের কিছু বোঝা যায় না, মুখের আকৃতিও বোঝা যায় না। ওই আঙুল দেখে সারোয়ারকে ওর ভাই শনাক্ত করেছে।

রূপনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেছুর রহমান বলেন, লাশ শনাক্ত করার দাবি নিয়ে স্বজনেরা পুলিশের কাছে আসছেন। তবে প্রত্যেকটি লাশের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করার পর হস্তান্তরের কার্যক্রম শুরু হবে। পাশাপাশি স্বজনদেরও ডিএনএ নমুনা এখনই নিয়ে রাখা হবে।

ঢামেকে ১৬ মরদেহ, এলেন ১৭ পরিবার

রাজধানীর মিরপুর রূপনগর এলাকায় কেমিক্যাল গোডাউন ও গার্মেন্টসে অগ্নিকা-ে ১৬ জন নিহতের খবর পাওয়া গেলেও মরদেহ খুঁজতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে এসেছেন ১৭টি পরিবার। গতকাল বুধবার বিকেলে ঢামেক মর্গে নিহত স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়। নিহত দাবিকৃত ১৭ জন হলেন- মো. আল মামুন (৩৯), মো. নূরে আলম সরকার (২৩), ফারজানা আক্তার (১৫), নার্গিস আক্তার (১৮), খালিদ হাসান সাব্বির (২৯), আব্দুল আলিম (১৪), রবিউল ইসলাম রবিন (২০), মাহিয়া আক্তার (১৪), জয় মিয়া (২০), মার্জিয়া সুলতানা (১৮), আসমা আক্তার (১৩), সানোয়ার হোসেন (২২), মুনা আক্তার (১৬), মৌসুমী খাতুন (২২), মুক্তা (৩৬), তোফায়েল আহমেদ (১৮) ও নাজমুল ইসলাম রিয়াজ (৩৮)।

এ বিষয়ে রূপনগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোখলেছুর রহমান লস্কর বলেন, অগ্নিকা-ের ঘটনায় আমরা এখন পর্যন্ত ৬টি মরদেহ বুঝে পেয়েছি। ১৬টি মরদেহের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৬টি মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে এবং ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। মরদেহগুলোর ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে, এরপর পরিবারের নমুনার সঙ্গে মিলিয়ে হস্তান্তর করা হবে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত মরদেহের খোঁজে ১৭ পরিবার আমাদের কাছে এসেছিলেন। সব ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ ও মিলিয়ে পরিবারের সঙ্গে যাচাই শেষে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।