বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসান আরিফ

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২৫, ১২:১৪ এএম

জুলাই সনদ প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর

জাতীয় নির্বাচনের দিন বা আগে গণভোটের সুপারিশ

হাসান আরিফ

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২৫, ১২:১৪ এএম

জাতীয় নির্বাচনের দিন বা  আগে গণভোটের সুপারিশ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ বাস্তবায়নের জন্য অবিলম্বে একটি সাংবিধানিক আদেশ (অর্থাৎ সরকারি প্রজ্ঞাপন) জারি করে গণভোট আয়োজনের সুপারিশ করেছে। এ জন্য ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন বা আগে জুলাই সনদ নিয়ে গণভোট আয়োজনের সুপারিশ করেছে কমিশন। কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কারের পথ খুলে দেওয়াই এ সুপারিশের মূল লক্ষ্য।

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায়-সম্পর্কিত সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে এই সুপারিশ তুলে দেন। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঐকমত্য কমিশনের সভাপতিও।

সুপারিশ হস্তান্তরের সময় উপদেষ্টা পরিষদের অন্য সদস্যদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, মো. আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। পরে ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বিস্তারিত তুলে ধরেন।

তিন ধাপে আইনি ভিত্তি দেওয়া হবে জুলাই জাতীয় সনদের। প্রথমে অন্তর্বর্তী সরকার সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করবেন। এরপর নেওয়া হবে গণভোট। গণভোটে পাস হলে সেই আদেশ বাস্তবায়ন করবে নির্বাচিত সংসদ। তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের এ সুপারিশে নেই ‘নোট অব ডিসেন্ট’।

কমিশনের প্রস্তাবিত ব্যালটের প্রশ্ন হবেÑ ‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং ইহার তফসিল-১-এ সন্নিবেশিত সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবসমূহের প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করিতেছেন?’

আলী রীয়াজ বলেন, যেকোনো গণভোটের ক্ষেত্রে এক অথবা দুইটা প্রশ্ন থাকে। কোথাও একটু বেশিও হয়েছে। আইসল্যান্ডের ক্ষেত্রে সম্ভবত উদাহরণ আছে যে ছয়টা প্রশ্ন ছিল। কিন্তু আমাদের সুপারিশ হচ্ছে, একটা প্যাকেজ হিসেবে একটি প্রশ্ন যে, ‘আপনি এই আদেশ এবং এই আদেশের তফসিলে যে বিষয়গুলো সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত আছে তার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করছেন কি না।’

প্যাকেজের কোনো অংশের ওপর একমত এবং অন্য অংশের ওপর ভিন্নমতের হিসাব কীভাবে হবেÑ এ প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেন, ‘আপনি যে আশঙ্কার কথা বলছেন, এটার জন্য এটা হবে, ওটার জন্য ওটা হবে। যেকোনো রেফারেন্ডামের ক্ষেত্রে এই বিষয়টা থাকে। আমি তুরস্কের ২০১৬ সালের রেফারেন্ডামের উদাহরণ দিয়েছি, ওখানে ২১টি বিষয় ছিল এবং সেটি অত্যন্ত মার্জিনালি জিতেছিল, ৫১% মাত্র। সে ক্ষেত্রে হতে পারে যে, ওই ২১টি বিষয়ের মধ্যে কেউ কেউ একটি বিষয়ে একমত, ১৯টি বা ২০টি বিষয়ে একমত। তারপর ভোট কীভাবে দিয়েছেন, আমি জানি না।

আলী রীয়াজ বলেন, বাংলাদেশে অতীতে এ রকম নির্বাচন হয়েছে, সেগুলোর উদাহরণ আমি দিচ্ছি না, বিভিন্ন কারণে। কিন্তু পৃথিবীতে বাংলাদেশই প্রথম গণভোট করবে না, যেখানে একটিমাত্র প্রশ্ন দিয়ে অনেক বিষয়কে ক্যাপচার করার চেষ্টা হচ্ছে। ৪৮টি বিষয় একই প্যাকেজে আনাটা গণভোটের প্রশ্ন হিসেবে জটিল হয়ে যাবে কি নাÑ এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যেকোনো গণভোট সাধারণত এক বা দুটি প্রশ্ন হয়, ক্ষেত্রবিশেষে তার চেয়ে বেশি হয়েছে। দু-একটি, পাঁচটা বা ছয়টা প্রশ্ন ছিল। কিন্তু এযাবৎকালে ১৭৮৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যে তথ্য বা গবেষণার বিষয়গুলো আমার কাছে জানা আছে, তার ওপর ভিত্তি করে আমি বলতে পারি, অধিকাংশ প্রশ্ন আসলে একটা।

এক বা দুইটা প্রশ্ন হলেও এর পেছনে অনেক প্রশ্ন থাকে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমি একটু উদাহরণ দিলে আপনি বুঝতে পারবেন। ২০১৬ সালে তুরস্কে যে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেটায় প্রশ্ন একটাই ছিল। কিন্তু সেই এক প্রশ্নে ২১টি বিষয়ে সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। তাহলে এই যে, আপনি বা আমি-আমরা যদি মনে করি যে জনগণ এগুলো বুঝতে পারবেন না। জনগণের ওপর আস্থা রাখুন, বাংলাদেশের জনগণের ওপর আস্থা রাখুন। বাংলাদেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধ করেছে, বাংলাদেশের মানুষ নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ ফ্যাসিবাদী শাসনকে প্রতিরোধ করেছে এবং যখনই সুযোগ তৈরি হয়েছে তখন নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় তারা তাদের রায় দিতে পেরেছে।’

জনগণ বুঝতে পারবে না, এমন কথা বললে নিজের অস্বস্তির কথা তুলে ধরে আলী রীয়াজ বলেন, ‘যখন কেউ আমাকে বলেন, জনগণ এটা বুঝবেন না। আমি এটাতে খুব অস্বস্তিবোধ করি, ব্যক্তিগতভাবে আমি খুব অস্বস্তিবোধ করি। বোঝাবার ক্ষেত্রে সরকারের একটা দায়িত্ব আছে। আমি বোঝাবার অর্থে বলছি না, আমি বলছি সরকারের দায়িত্ব হবে এগুলো (গণভোটবিষয়ক প্রশ্ন) যতটা দ্রুত সম্ভব, যতটা সহজলভ্য করে যেভাবে হোক প্রত্যেকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া। আজকে আমরা যখন সুপারিশটা সরকারকে দিয়েছি, সেখানে এটা আমরা সুস্পষ্টভাবে, অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বলেছি, এটা আপনারা করবেন, এটা আপনাদের কাজ।

সুপারিশে বলা হয়েছে, সরকারের জারি করা ওই আদেশের নাম হবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫।’ এই আদেশ জারির পর সরকারের এখতিয়ার থাকবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনসহ তার আগে যেকোনো দিন গণভোট আয়োজনের।

গণভোটে জুলাই সনদের বৈধতা নেওয়ার প্রশ্নে দলগুলো একমত হলেও গণভোট কবে হবে, এর ভিত্তি কী হবে, ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবেÑ এসব ক্ষেত্রে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে মতবিরোধ আছে।

ঐকমত্য কমিশন তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ একই সঙ্গে সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও জাতীয় সংসদ হিসেবে কার্যকর থাকবে। তবে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে সংসদের কার্যকাল থাকবে ২৭০ দিন (৯ মাস)। এই সময়ের মধ্যেই গণভোটে অনুমোদিত সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। যদি সংসদ ২৭০ দিনের মধ্যে দায়িত্ব শেষ করতে না পারে, তাহলে গণভোটে পাস হওয়া বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে প্রতিস্থাপিত হবে, বলে কমিশনের প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

কমিশনের মতে, নির্বাচনের পর যে সংসদ কার্যকর হবে, সেই সংসদের সদস্যরাই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হবেন। তারা সংসদ সদস্য ও সংস্কার পরিষদের সদস্য হিসেবে দুটি আলাদা শপথ গ্রহণ করবেন। সংস্কার পরিষদের বৈঠকে স্পিকার সভাপতিত্ব করবেন; তার অনুপস্থিতিতে ডেপুটি স্পিকার বা সভাপতি প্যানেলের কেউ দায়িত্ব পালন করবেন। সংস্কার পরিষদ নিজস্ব কর্মপদ্ধতি (নিয়মাবলি) তৈরি করবে এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয় তাদের সাচিবিক সহায়তা দেবে।

ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আমরা সরকারকে লিখিতভাবে বলেছি, অবিলম্বে সাংবিধানিক আদেশ জারি করে গণভোট আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার যেন এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত একটি গণভোট তফসিল ঘোষণা করে।

তিনি আরও বলেন, যেসব সুপারিশ সাংবিধানিক নয়, সরকার সেগুলো অধ্যাদেশ বা অফিস আদেশের মাধ্যমে অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে পারে। আমরা কোন সুপারিশ কীভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব, তা পরিষ্কারভাবে চিহ্নিত করে দিয়েছি।

ঐকমত্য কমিশন তাদের সুপারিশে ভোটের সংখ্যানুপাতে ১০০ সদস্যের একটি সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। গণভোটে জনগণের সম্মতি পেলে জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠার ৪৫ দিনের মধ্যে উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়টি বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। তবে এবার নির্বাচনের আগে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব না হওয়ায় প্রথম উচ্চকক্ষ গঠনের ক্ষেত্রে এই শর্ত কার্যকর থাকবে না বলে কমিশন জানিয়েছে।

ঐকমত্য কমিশনের বিকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, সরকার চাইলে সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত ৪৮টি বিষয়ের ওপর খসড়া বিল প্রস্তুত করে গণভোটে দিতে পারেন। গণভোটে জনগণ বিলটির প্রতি সম্মতি জানালে, সেটি ভবিষ্যৎ সংবিধান সংস্কার পরিষদের কাজে সহায়ক দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে।

আলী রীয়াজ বলেন, গণভোটে জনগণের সম্মতি পেলে এই বিল সংবিধান সংস্কার পরিষদকে সহায়তা করবে। পরিষদ জুলাই সনদের চেতনা ধরে সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংযোজন, পরিমার্জন, পরিবর্তন বা বিয়োজন করতে পারবে। তবে যদি পরিষদ সময়মতো কাজ শেষ করতে না পারে, গণভোটে অনুমোদিত বিলই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে।

২০২৪ সালের অক্টোবরে অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান সংস্কার ও রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে ছয়টি কমিশন গঠন করে। পরবর্তী সময়ে এসব কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনার জন্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশন ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত সংগ্রহ করে। ৩০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার পর ৬৪টি বিষয়ে ঐকমত্য গঠিত হয় এবং আরও ২০টি বিষয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধান সংশোধনের জন্য জনগণের ক্ষমতা যেন সরাসরি ব্যবহৃত হয়, আমরা সেই নীতিতে বিশ্বাসী। গণভোটের বিষয়ে প্রায় সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। এটি জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার একটি গণতান্ত্রিক উপায়।

সংবিধান সংস্কার পরিষদকে ‘কন্সটিটুয়েন্ট পাওয়ার’ (গাঠনিক ক্ষমতা) দেওয়া হলেও তারা নিজেদের মতো করে সংস্কার করতে পারবে না বলে স্পষ্ট করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। কেন পারবে নাÑ এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কন্সটিটুয়েন্ট পাওয়ার দেওয়া হচ্ছে এই বিবেচনা থেকে যে মৌলিক সংস্কার করা হবে। তবে তাদের গাইড করবে জুলাই জাতীয় সনদ। কন্সটিটুয়েন্ট পাওয়ার মানে এই নয় যে, যা খুশি তা-ই লিখতে পারা যাবে।

সংবিধান সংস্কার পরিষদে যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকবে, সংস্কারের যেসব প্রস্তাবে তাদের আপত্তি বা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ আছে, তারা তাদের মতো করে সংস্কার করতে পারবে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, গণভোটের প্রস্তাবটি এসেছে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার আলোচনায়, যেখানে প্রস্তাব ছিল সবকিছুই জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়ার। জনগণ যদি রায় দেয়, তাহলে রাজনৈতিক দল তার ভূমিকা নির্ধারণ করবে। কমিশন মনে করে, কোনো রাজনৈতিক দল জনগণের রায় পাওয়া জিনিসকে শুধু নিজস্ব দলীয় অবস্থান থেকে বিবেচনা করবে না।

বিএনপি নেতারা প্রশ্ন তুলেছেনÑ নভেম্বরে গণভোটের দাবির আড়ালে অন্য কোনো রাজনৈতিক পরিকল্পনা আছে কি না? নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, তারা ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণার পরিকল্পনা করছে।

দীর্ঘ এক বছরের আলোচনা, পর্যালোচনা ও রাজনৈতিক মতবিনিময়ের ফলাফল হিসেবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষরিত হয় গত ১৭ অক্টোবর।

এখন সেই সনদ বাস্তবায়নের কাঠামো ও আইনি ভিত্তি স্থাপনে ঐকমত্য কমিশনের এ সুপারিশকে দেশের রাষ্ট্রসংস্কার প্রক্রিয়ার একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা আশা করি সংবিধান সংস্কার পরিষদ তাদের দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবে এবং সরকারের পক্ষ থেকে যেন দ্রুত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সূচনা করা হয়Ñ এই প্রত্যাশা করছি।

ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’ জারির পর নির্বাচনের দিন বা তার আগে গণভোট আয়োজনের দায়িত্ব এখন সরকারের হাতে। এই গণভোটের মাধ্যমে জনগণের রায়ই নির্ধারণ করবেÑ বাংলাদেশের সংবিধান সংস্কার ও রাষ্ট্রসংস্কারের নতুন অধ্যায় কীভাবে শুরু হবে।

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের যে প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে ইতিবাচক ফল না এলে কী হবে, এমন প্রশ্নে জনগণের ওপর আস্থা রাখার কথা বলেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

তিনি বলেন, লাতিন আমেরিকার দেশ চিলিতে সংবিধান নিয়ে দুইবার গণভোট ব্যর্থ হওয়ার উদাহরণ টেনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই অধ্যাপক বলেন, প্রথমবার চিলিতে একটা সংবিধান তৈরি করে দেওয়া হলো গণভোটে, সেটা হারল। কেউ কেউ বললেন, এটা অনেক বেশি দক্ষিণপন্থি হয়ে উঠেছিল অথবা বামপন্থি হয়ে উঠেছিল। একেকজন একেকটা বলল। তারপর আবার এটা সংশোধন-সংযোজন করে আবার গণভোটে দেওয়া হয়েছিল। আবারও ফেল করে। পাস না করলে তার মানে হচ্ছে, জনগণ তাহলে গ্রহণ করছেন না। এ জন্য আমি বলছি আবার, জনগণের ওপর আস্থা রাখুন।

জুলাই সনদের যেসব বিষয় নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়ন সম্ভব

উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত সম্প্রসারণ: যেসব উপজেলা জেলা সদরে অবস্থিত (সদর উপজেলা), সেসব উপজেলা আদালতসমূহ জেলা জজ কোর্টের সাথে সংযুক্ত রেখে সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে। বিদ্যমান চৌকি আদালত, দ্বীপাঞ্চল ও ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত উপজেলা আদালতসমূহ বহাল রেখে এর প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।

জেলা সদরের কাছাকাছি উপজেলাগুলোতে নতুন আদালত স্থাপনের প্রয়োজন নেই (প্রয়োজনীয় জরিপ পরিচালনা সমাপ্ত করে)। অবশিষ্ট উপজেলাগুলোর জনসংখ্যার ঘনত্ব, ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য, যাতায়াতব্যবস্থা, দূরত্ব, অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে পর্যায়ক্রমে আদালত স্থাপন করা হবে। অধস্তন আদালতের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা এবং আইনগত সহায়তা কার্যক্রম উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হবে।

বিচার বিভাগে জনবল বৃদ্ধি: বিচার বিভাগের সব স্তরে বিচারক ও সহায়ক জনবল বৃদ্ধি এবং বিশেষায়িত আদালত স্থাপন করা হবে।

আদালত ব্যবস্থাপনা সংস্কার ও ডিজিটাইজ করা: মামলার দীর্ঘসূত্রতা ও হয়রানি নিরসন, স্বচ্ছতা আনয়ন, মামলার খরচ হ্রাস ও বিচারপ্রাপ্তি সহজলভ্য করার জন্য বিভিন্ন বিধি প্রণয়ন, সংশোধন ও সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক নির্দেশনা জারির মাধ্যমে আদালত ব্যবস্থাপনার সংস্কার ও ডিজিটাইজ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

আইনজীবীদের আচরণবিধি:

আইনজীবীদের আচরণবিধি যুগোপযোগীকরণ, জেলা পর্যায়ে বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনাল স্থাপন এবং এর প্রধান হিসেবে একজন বিচারককে দায়িত্ব প্রদান করা হবে। অপরদিকে আদালত প্রাঙ্গণে দলীয় রাজনৈতিক কর্মকা- নিষিদ্ধ করা হবে।

গণহত্যা ও ভোট জালিয়াতির সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন কমিশন গঠন: জুলাই গণঅভ্যুত্থানকালে গণহত্যা ও নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত এবং ভোট জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের চিহ্নিতকরণ এবং তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করা হবে।

কুমিল্লা ও ফরিদপুর নামে দুটি প্রশাসনিক বিভাগ গঠন: ভৌগোলিক অবস্থান ও যাতায়াতের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কুমিল্লা ও ফরিদপুর নামে দুইটি প্রশাসনিক বিভাগ গঠন করা হবে।

দুর্নীতিবিরোধী কৌশলপত্র প্রণয়ন:

রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের পরিবর্তে একটি দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় কৌশলপত্র প্রণয়ন করে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবিরোধী দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ করা হবে। সংবিধানের বিধান অনুযায়ী ন্যায়পাল নিয়োগ করে ন্যায়পালের কার্যালয়কে এই কৌশলপত্র বাস্তবায়নের সঙ্গে কার্যকরভাবে যুক্ত করা হবে।

পরিষেবা খাতের কার্যক্রম ও তথ্য অটোমেশন করা: সেবা প্রদানকারী সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিশেষত, থানা, রেজিস্ট্রি অফিস, রাজস্ব অফিস, পাসপোর্ট অফিস এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ সব সেবা-পরিষেবা খাতের সেবা কার্যক্রম ও তথ্য-ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ (এন্ড-টু-এন্ড) অটোমেশনের আওতায় আনা হবে। ওপেন গভর্নমেন্ট পার্টনারশিপের পক্ষভুক্ত হওয়া: বাংলাদেশকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ওপেন গভর্নমেন্ট পার্টনারশিপের পক্ষভুক্ত হতে হবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!