নানা বিষয় নিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া এলাকায় উত্তেজনা ছিল আগেই। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানা পুলিশসহ নগর কমিশনারকেও জানানো হয়েছিল ৭ থেকে ১০ দিন আগে। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ছাত্রদলকর্মী মো. সাজ্জাদ নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
বাকলিয়ায় ব্যানার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে গত সোমবার মধ্যরাতে ছাত্রদলকর্মী মো. সাজ্জাদ নিহত হন। সাজ্জাদ নিহত হওয়ার সাত থেকে ১০ দিন আগে থানা পুলিশসহ নগর কমিশনারকে নিজের শঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ডা. শাহাদাত হোসেন।
এ প্রসঙ্গে শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে এই এলাকায় নানান বিষয় নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। আমি কমিশনারসহ থানার ওসিকে বিষয়টি অবগত করিয়েছি। নাম ধরে কিছু মানুষকে গ্রেপ্তারের কথাও বলেছি। পুলিশ যদি সময়মতো ব্যবস্থা নিত, তাহলে এই হত্যাকা- ঘটত না।’
গত সোমবার মধ্যরাতে বাকলিয়া থানার এক্সেস রোড এলাকায় যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সৈয়দ শাহ রোডে সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেনের ছবিসহ একটি ব্যানার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে বাগবিত-ায় মীর হেলাল গ্রুপ এবং ডা. শাহাদাত গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান সাজ্জাদ। পরে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন আরও ৮ জন।
চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুরুল আলম আশিক বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এক যুবককে হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার বুকে গুলির আঘাত ছিল। এ ছাড়া আরও আটজন আহত অবস্থায় ভর্তি আছেন।’
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিহত সাজ্জাদের লাশ দেখতে গিয়ে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তোলেন মেয়র। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগের কোনো না কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরামর্শে নগর পুলিশের কার্যক্রম চলছে। তাদের গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিশ কমিশনারকে বলেছি। পুলিশ কমিশনার ওসিকে বলেছেন। কিন্তু কেন জানি ওসি তাদের গ্রেপ্তার করছেন না। যদি আমার দলের কেউ তাদের শেল্টার দেয়, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি। ওসিকে আমি নাম ধরে বলেছি। কিন্তু পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি।’
সূত্র বলছে, এমদাদুল ও নগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী সিরাজ উল্লাহর অনুসারীদের মধ্যে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। গোলাগুলির ঘটনায় জড়িত হিসেবে নাম আসা সিরাজের অনুসারী নগর ছাত্রদলের সাবেক আপ্যায়নবিষয়ক সম্পাদক বোরহান উদ্দিন।
এ প্রসঙ্গে ডা. শাহাদাত হোসেন আরও বলেন, ১০-১২ দিন আগে তারা একটি ঘটনা ঘটিয়েছে। আমাদের যুবদলের ছেলেদের তারা অ্যাটাক করেছিল। সন্ত্রাসীদের কোনো দল নেই। আমি এই শহরকে নিরাপদ শহর হিসেবে দেখতে চাই। আমি চাই না এখানে সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের অভয়ারণ্যে পরিণত হোক।’
রাজনৈতিক দলের ব্যানার লাগানো নিয়ে তর্কবিতর্ক হলে পুলিশের কিছু করার নাই জানিয়ে বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, ‘যখন কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাই তখন আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারি। যেহেতু এখন একটা হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে, আমরা অপরাধীদের আইনের আওতায় আনব। অপরাধীদের দল-মত বিবেচনা করা হবে না। যারাই আইন ভঙ্গ করবে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন