বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডনে উন্নত চিকিৎসার সম্ভাবনা এখন পুরোপুরিই নির্ভর করছে চিকিৎসায় নিয়োজিত মেডিকেল বোর্ডের চূড়ান্ত মতের ওপর। বোর্ড ‘সেফ টু ফ্লাই’ সার্টিফাই করলেই অর্থাৎ সবুজ সংকেত দিলে তাকে (খালেদা জিয়া) দ্রুততম সময়ে লন্ডনে নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি জানান, তার শারীরিক অবস্থা এখনো অপরিবর্তিত। তবে আমাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে তার যুক্তরাজ্যে যাওয়ার জন্য। এমনকি প্রস্তুত রাখা হয়েছে দেশটির লন্ডন ব্রিজ হাসপাতালও। এখন তার শারীরিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ার অপেক্ষা। তিনি জানান, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান সশরীরে সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখছেন। দলীয়ভাবেও চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তকে ‘ফাইনাল অথরিটি’ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ডা. জাহিদ। তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা ও চিকিৎসা দুটো দিকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। মেডিকেল বোর্ডের অনুমতি পেলেই বিদেশে নেওয়া হবে।’ গত ছয় বছর ধরে দায়িত্ব পালনকারী মেডিকেল বোর্ডের পেশাদারত্ব ও নিষ্ঠার প্রশংসা করে ডা. জাহিদ বলেন, ‘মেডিকেল বোর্ড অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করে আসছে। তাদের পরামর্শেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসা একনিষ্ঠভাবে চলছে। এ সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে ছড়িয়ে পড়া নানা গুজবের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ডা. জাহিদ। তিনি বলেন, সময়ের অভাবে সব কিছু দেখতে পারি না। কিন্তু অনুরোধ, কেউ গুজব ছড়াবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না, অন্যকেও বিভ্রান্ত করবেন না। দোয়া করবেন আল্লাহ যেন তাকে দ্রুত সুস্থতা দান করেন।’
বিদেশ যাত্রা প্রসঙ্গে ডা. জাহিদ হোসেন আরও জানান, ‘প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র, লজিস্টিক ও মেডিকেল অ্যারেঞ্জমেন্ট তৈরি রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে কাতার সরকার ও অন্তর্বর্তী সরকারও সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে।’ খালেদা জিয়ার সুস্থতার বিষয়ে মেডিকেল বোর্ডের আশাবাদের কথা উল্লেখ করে ডা. এ জেড এম জাহিদ বলেন, ‘এর আগেও তিনি আরও গুরুতর অবস্থায় ছিলেন, আল্লাহর রহমতে তখনো সুস্থ হয়েছিলেন। এবারও আমরা আশাবাদী, ইনশাআল্লাহ দ্রুতই তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।’
আবারও এভারকেয়ারে ডা. জুবাইদা রহমান, মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে বৈঠক : রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাশুড়ি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হাসপাতালটিতে গতকাল শনিবার বিকেলে তৃতীয় দফায় হাসপাতালে আসেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেওয়া হবে কি না সে বিষয়ে তার মেডিকেল বোর্ডের সভা হয় এদিন। এতে উপস্থিত ছিলেন ডা. জুবাইদা।
এর আগে গত শুক্রবার রাতে দ্বিতীয় দফায় এই হাসপাতালে আসেন খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ। তিনি প্রায় তিন ঘণ্টা হাসপাতালে অবস্থান করেন। এ সময় তিনি খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। পরে রাতে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যান। এদিন সকালে লন্ডন থেকে ঢাকায় পৌঁছে বিমানবন্দর থেকেই এভারকেয়ার হাসপাতালে ছুটে যান ডা. জুবাইদা রহমান। তিনি সেখানে তার শাশুড়ি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং কিছু সময় কাটান। তিনি মূলত অসুস্থ শাশুড়ি খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নিতেই দেশে এসেছেন।
এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ফ্লাইটকে ‘ভিভিআইপি মুভমেন্ট’ ঘোষণা : রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সের ফ্লাইটটিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদনের পর সেটিকে ভিভিআইপি ফ্লাইট হিসেবে অনুমোদন দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বেবিচককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে ফ্লাইট অবতরণের ক্লিয়ারেন্সও দিয়েছে। গতকাল শনিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক ক্যাপ্টেন এস এম রাগীব সামাদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
