ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান সম্পূর্ণভাবে তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। যে পরিস্থিতিতে তিনি ভারতে এসেছিলেন, সেই বাস্তবতার দ্বারাই এটি প্রভাবিত। গতকাল শনিবার নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত এইচটি লিডারশিপ সামিটে এনডিটিভির সিইও ও এডিটর-ইন-চিফ রাহুল কানওয়ালের সঙ্গে এক আলোচনায় তিনি এ মন্তব্য করেন। এ সময় বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ভবিষ্যতে উন্নতির আশাও প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার তুমুল গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। শত শত মানুষের প্রাণহানি ও হাজার হাজার মানুষ আহত হওয়ার পর তার টানা ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মানবতাবিরোধী অপরাধে গত মাসে ৭৮ বছর বয়সি শেখ হাসিনাকে তার অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদ-ে দ-িত করে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এরপর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার তাকে ফেরত পাঠাতে অনুরোধ করলেও নয়াদিল্লি কোনো সাড়া এখনো দেখায়নি।
রাহুল কানওয়াল হিন্দুস্তান টাইমসের লিডারশিপ সামিটে নানা বিষয়ে আলোচনার ফাঁকে এস জয়শঙ্করের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, শেখ হাসিনা যতদিন চান ততদিনই ভারতে থাকতে পারবেন কি না? জবাবে জয়শঙ্কর প্রথমেই বলেন, ‘আচ্ছা, এটি একটা ভিন্ন বিষয়, তাই না?’ এরপর তিনি বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে এখানে এসেছিলেন। আমি মনে করি, সেই পরিস্থিতির স্পষ্ট প্রভাব এই ঘটনার (ভারতে আশ্রয় নেওয়া) ওপর ছিল। আবার শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্তটা তাকে নিজেকেই নিতে হবে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান নেওয়ার পর প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। এ নিয়ে এনডিটিভির প্রধান সম্পাদক রাহুল কানওয়ালের প্রশ্নে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বাংলাদেশে একটি বিশ্বাসযোগ্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে নয়াদিল্লির অবস্থান তুলে ধরেন।
বাংলাদেশের অতীত রাজনৈতিক বিষয়গুলোর কথা উল্লেখ করে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যা শুনেছি তা হলো, বাংলাদেশের মানুষ, বিশেষ করে যারা এখন ক্ষমতায় আছেন, তাদের আগের নির্বাচনগুলো কীভাবে পরিচালিত হয়েছিল, সেটা নিয়ে সমস্যা ছিল। এখন সমস্যা যদি নির্বাচনই হয়; তাহলে প্রথম কাজ হবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা।’
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ভবিষ্যতে উন্নত হওয়ার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের মঙ্গল কামনা করি। আমরা মনে করি, একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশের মতোই বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে চায়।’
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফল যাই আসুক না কেন, তা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্যপূর্ণ ও পরিপক্ব দৃষ্টিভঙ্গির হবে। আশা করি, পরিস্থিতির উন্নতি হবে’।

