বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অসুস্থতায় উদ্বিগ্ন দেশের মানুষ। সব শ্রেণি-পেশার মানুষজন তার সুস্থতার জন্য দোয়া-প্রার্থনা কামনা করছেন। গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়ার সেবায় যুক্তরাজ্য থেকে ছুটে এসেছেন পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। এমন পরিস্থিতিতে সবার মনে একটাই প্রশ্নÑ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কবে দেশে ফিরবেন। এ ছাড়াও প্রশ্ন জেগেছে, আসন্ন নির্বাচন ও চলমান বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকা-ে খালেদা জিয়ার অসুস্থতায় দলের মধ্যে প্রভাব ফেলবে কি না। রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এবং যুক্তরাজ্যে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ব্যবস্থায় সমন্বয়কারীদের অন্যতম ড. এনামুল হক চৌধুরী।
তারেক রহমানের দেশে ফেরা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনি পরিবেশ তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। দেশের প্রতিটি মানুষ তার ফেরার অপেক্ষায়। শুধু তাই নয়, তিনি নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করবেন। তার ভোটার হওয়ার জন্য যেসব দাপ্তরিক কাজ প্রয়োজন সব প্রস্তুত। তারেক রহমান এই দেশের সন্তান। দেশের মাটিতে বড় হয়েছেন। দেশের একটা রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তাকে বাধ্য হতে হয় দেশত্যাগ করতে। রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরার সঙ্গে সঙ্গে তিনি দেশে ফিরে রাজনৈতিক ইতিহাস তৈরি করবেন।’
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক পরিস্থিতির বিষয়ে ড. এনামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া দেশের সাধারণ মানুষের কাছে একজন আইকন। তিনি সাধারণ কোনো মানুষ নন। আপসহীন নেত্রী তিনি। তার সুস্থতায় দেশের প্রতিটি মানুষ দোয়া-প্রার্থনা করছেন। তবে তার শারীরিক পরিস্থিতি বিষয়ে এ তার চিকিৎসক দলের সদস্যরাই ভালো বলতে পারবেন। তবে আমি যেটুকু বলব তা হলো, আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য একজন মানুষের শারীরিক স্থিতিশীলতা যা প্রয়োজন সেটুকু হলেই তাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে রওনা হব আমরা।’
আগে বলা হয়েছিল কাতারের আমিরের দেওয়া বিশেষ বিমানে করেই যাবেন বেগম খালেদা জিয়া কিন্তু এখন শোনা যাচ্ছে জার্মানি থেকে বিমান আসবে। এর কারণ কি জানতে চাইলে ড. এনামুল হক বলেন, ‘কাতার সরকারের পক্ষ থেকেই জার্মানের বিমানটি আসছে দেশে। কাতার সরকারই সব ব্যবস্থা করছে। তাদের বিমানটির কিছু কারিগরি ত্রুটির কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, কাতার সরকারের ব্যবস্থাপনাতেই বেগম খালেদা জিয়াকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হবে।’
গত ২৩ নভেম্বর হঠাৎ শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে খালেদা জিয়াকে দ্রুত রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি বর্তমানে ওই হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রয়েছেন। ৮০ বছর বয়সি সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস ও কিডনির সমস্যাসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন।
এখন তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি আগেই বলেছি, এ ব্যাপারে সবচেয়ে ভালো বলতে পারবে তার চিকিৎসায় নিয়োজিত বোর্ডের সদস্যরা। তবে আমি আমার জায়গা থেকে যতটুকু জেনেছি তিনি আগের চেয়ে কিছুটা ভালো। মুখে কোনো খাবার দেওয়া না হলেও স্যালাইন দিয়ে তাকে রাখা হয়েছে এবং এখন অনেকটাই উন্নতির দিকে তার অবস্থা। সবচেয়ে ভালো লক্ষণ হলো তার বুক পরিষ্কার হচ্ছে। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় যেখানে কফ জমে ছিল। গত বৃহস্পতিবার তার স্বাস্থ্যের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হয়েছে। যেখানে প্যারামিটারগুলো ভালোর দিকে ছিল। মেডিকেল বোর্ডও এতে স্বস্তি প্রকাশ করেছে।’
ঠিক কবে নাগাদ খালেদা জিয়াকে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে নিয়ে রওনা হবেনÑ জানতে চাইলে ড. এনামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘গত শুক্রবার ভোরেই খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে বিমানবন্দরে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার শরীরের কিছুটা অবনতি হলে আমরা সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছি। যখনই চিকিৎসকরা বলবেন তিনি জার্নির জন্য ফিট, তখনই কাতার ওই বিমানটি বাংলাদেশের উদ্দেশে পাঠিয়ে দেবে। এটি কাল-পরশু যেকোনো দিন হতে পারে।’
তিনি জানান, প্রথমে সিঙ্গাপুর নেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু সেখানে মাল্টিপুল ডিসপেন্সারি সেন্টার অত্যাধুনিক না হওয়ায় লন্ডনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আর চীন থেকে আসা চিকিৎসক দল তাদের দেশে নিতে জোর আগ্রহ দেখিয়েছিল। সবশেষ মেডিকেল বোর্ড লন্ডন ব্রিজ হাসপাতাল চূড়ান্ত করে।
তিনি বলেন, ‘কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করেই চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেখানে লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি রেখে কিছুদিন তার চিকিৎসা চলে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে কিছুদিন লন্ডনে তারেক রহমানের বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন। অনেকটা সুস্থ হয়ে গত ৬ মে একই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তিনি দেশে ফিরেছিলেন। তার বয়স এখন প্রায় ৮০ বছর। বিগত সরকারের নির্যাতন নিপীড়নের কারণে আজকে তিনি এমন পরিস্থিতির শিকার। তবে সবার দোয়ায় তিনি নিশ্চয়ই সুস্থ হয়ে ফিরবেন।’
খালেদা জিয়াকে আবারও বিদেশে নেওয়া হচ্ছে চিকিৎসার জন্য, তারেক রহমানও দেশে ফিরছেন নাÑ এ রকম পরিস্থিতিতে নির্বাচনি তপশিল ঘোষণা হচ্ছে। এতে করে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা আসার কোনো সম্ভাবনা রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সার্বক্ষণিক দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। সবাই একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য উন্মুখ। তাই এমন পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশার কোনো কারণ আমি দেখছি না।’

