গর্ভবস্থায় মায়ের শরীরে নানা শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে। এর মধ্যে ঘুমের ব্যাঘাত একটি খুবই সাধারণ সমস্যা। অনেক ক্ষেত্রে ঘুমহীনতা গর্ভবতীর অন্যান্য সমস্যার সঙ্গে, মিলে জটিল অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। এটি শারীরিক, মানসিক ও হরমোন জনিত পরিবর্তনের কারণে ঘটে। তবে কিছু সহজ উপায় মেনে চললে এই সমস্যা অনেকটাই কমানো সম্ভব। প্রথম ট্রাইমেস্টার বা প্রথম ১২ সপ্তাহে ঘুমের ব্যাঘাতের মূল কারণ, শুরুতে প্রোজেস্টেরন হরমোন হঠাৎ বেড়ে যায়, ফলে দিনে ঘুম বেড়ে যায়, রাতে ঘুম ভেঙে যায় বারবার। অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে বারবার প্রস্রাবের চাপ, বমি বমি ভাব, বুক জ্বালা, মানসিক উদ্বেগ। যদিও প্রথম দিকে পেট খুব বেশি বড় হয় না, তবুও শারীরিক অস্বস্তির কারণে আরামদায়কভাবে সোয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে। দ্বিতীয় ৩ মাসে ঘুমের সমস্যা কিছুটা কমে যায়। তবুও ঘুমে ব্যাঘাত হতে পারে, কেননা এই সময়ে পেট ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করে, ফলে আরামদায়ক ভঙ্গিতে ঘুমানো কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক গর্ভবতী মা হঠাৎ পায়ে ব্যথা অনুভব করেন, বিশেষ করে রাতে। গর্ভাবস্থায় হজম প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়, খাবার পাকস্থলিতে বেশি সময় থাকে, ফলে রাতে বুকে জ্বালা হয়, শুয়ে থাকলে সমস্যা আরও বেড়ে যায়। হরমোনজনিত পরিবর্তনের কারণে নাক বন্ধ হয়ে থাকে বা শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে, বিশেষ করে শোয়ার সময়।
শেষ ৩ মাসের গর্ভবতীর শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘুমকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। শিশুর ওজন ও আকার বেড়ে যাওয়ায় ঘুমানোর জন্য আরামদায়ক ভঙ্গি পাওয়া কঠিন। পিঠে ব্যথা, কোমরে ব্যথা, পা ফোলা ব্যথা, অ্যাসিড রিফ্লাক্স ও বুক জ্বালা এ সময় আরও বেড়ে যায়। শিশুর মাথা নিচের দিকে নেমে আসার কারণে মূত্রথলির ওপর বেশি চাপ পড়ে, ফলে রাতে বারবার টয়লেট যেতে হয়, ঘুম ভেঙে যায়। হঠাৎ শ্বাসকষ্ট, বেশি বেশি শিশুর নড়াচড়া, অতিরিক্ত গরম অনুভব প্রসব নিয়ে চিন্তা, অনাগত শিশুর স্বাস্থ্য ও ভবিষ্যৎ চিন্তা ইত্যাদি মানসিক চাপ ঘুমকে আরও ব্যাহত করে।
অনিদ্রার অভাব
ঘুমের অভাব মায়ের ও শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর নানা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ বা প্রিÑএক্ল্যাম্পসিয়া, ডায়াবেটিস, অপরিণত কম ওজনের বাচ্চা হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়, সেই সঙ্গে মায়ের প্রসব পূর্ব ও পরবর্তী বিষণœতার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
ঘুমের সঠিক অভ্যাস:
একই সময়ে ঘুমানো ও জাগা। এতে শরীরের ঘড়ি (নরড়ষড়মরপধষ পষড়পশ) ঠিক থাকে ও ঘুম সহজে আসে।
পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের, বিশেষত স্বামীর এ ব্যাপারে সহযোগিতার প্রয়োজন।
ঠান্ডা ও নীরব পরিবেশ তৈরি করা
- মোবাইল/টিভি ঘুমানোর পূর্বে ব্যবহার নিষেধ
- ঘুমানোর পূর্বে ভারী খাবার এড়িয়ে চলা, রাতে পানি কম খাওয়া।
- মেডিটেশন, হালকা হাঁটাÑব্যায়াম করা, গভীর শ্বাস নেওয়া
- বাম পাশ ফিরে ঘুমানো, হাঁটুর মাঝে বালিশ ব্যবহার করা,
- ঘুমানোর পূর্বে পায়ে ম্যাসাজ, স্ট্রেচিং করা, বই পড়া।
- ঘুমানোর ৫Ñ৬ ঘণ্টা আগে থেকে চা, কফি, সফট ড্রিংকস ইত্যাদি না খাওয়া
- যথাসম্ভব উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা না করা।
- কখন ডাক্তারের পরামর্শের প্রয়োজন
- টানা কয়েক রাত ঘুম না হলে
- শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, ধড়ফড় করা, অস্বাভাবিক ক্লান্তি হলে
- অতিরিক্ত উদ্বেগ বা মানসিক অস্থিরতা হলে
- অবহেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
গর্ভাবস্থায় ঘুমের সমস্যাকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। নিয়মিত ঘুম না হলে মায়ের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব পড়ে এবং শিশুর বিকাশেও সমস্যা হতে পারে। তাই সময়মতো ঘুমের অভ্যাসে পরিবর্তন আনা, মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
ডা. সারাবান তহুরা
কনসালটেন্ট (গাইনি এন্ড অবস)
চেম্বার : আলোক মাদার এন্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর ৬, ঢাকা।

