ঢাকা শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫

এআই দিয়ে আয়

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২৫, ০১:০০ এএম

একসময় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এআই ছিল সায়েন্স ফিকশন সিনেমার গল্প। কালের পরিক্রমায় আজ এআই বাস্তব দুনিয়ার বিষয় হয়ে উঠেছে।

শুধু বাস্তবই নয়; এআই এখন মানুষের সামনে অর্থ উপার্জনের বিশাল দিগন্ত খুলে দিয়েছে। একসময় ফ্রিল্যান্সিং অথবা অনলাইন আয় বলতে কম্পিউটারে টাইপিং, ডেটা এন্ট্রি, ওয়েব ডিজাইন কিংবা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের মতো জটিল কাজ বোঝানো হতো। কিন্তু প্রযুক্তির গতিপথ বদলে দিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই। আজকে একজন সাধারণ মানুষও ঘরে বসে এআইভিত্তিক কাজ করে আয় করতে পারছেন।  ডিজিটাল যুগে যে কেউ সৃজনশীলতা ও প্রযুক্তি-দক্ষতা মিলিয়ে, এআই-এর মাধ্যমে আয় করতে পারে। সেটা হতে পারে লেখা, ডিজাইন, ভিডিও, প্রোগ্রামিং কিংবা মার্কেটিং। ডিজিটাল সব ক্ষেত্রেই কাজের ধরন বদলে দিয়েছে এআই। এআইকে সহযোগী হিসেবে ব্যবহার করে কিভাবে আয় করা যায় সে বিষয়ে জানাচ্ছেন মির্জা হাসান মাহমুদ।

কাজের ধরন বদলে দিয়েছে এআই

এআই আসলে মানুষের কাজ কেড়ে নেয়নি; বরং কাজের ধরন বদলে দিয়েছে। প্রথাগতভাবে যেসব কাজে মানুষের সময়, পরিশ্রম ও অভিজ্ঞতা লাগত, এখন সেগুলোর বড় অংশই এআই সম্পন্ন করতে পারে দ্রুত ও কার্যকরভাবে। উদাহরণ হিসেবে ধরা যায় কনটেন্ট রাইটিং, অনুবাদ, ডেটা অ্যানালাইসিস, গ্রাফিক ডিজাইন, ভয়েস ও ভিডিও এডিটিং ইত্যাদি। আগে কোনো কাজ করতে যেখানে একজন ফ্রিল্যান্সারের একদিন সময় লাগত, এখন এআই টুল ব্যবহার করে ঘণ্টাখানেকেই সে কাজ শেষ করা সম্ভব। একজন ডিজাইনারকে এখন আর শূন্য থেকে ছবি আঁকতে হচ্ছে না; তিনি এআই দিয়ে বেসিক ডিজাইন তৈরি করে সেটিকে নিজের সৃজনশীলতায় পরিমার্জন করছেন। যার কারণে সময় বেঁচে যাচ্ছে, এবং সে সময়কে অন্য কাজে লাগিয়ে লাভবান হওয়া সম্ভব। তাই বর্তমান সময়ে এআই সহায়ক দক্ষতা শেখাই হয়ে উঠছে নতুন অর্থনীতির মূলমন্ত্র। মানে, বর্তমান থেকে শুরু করে ভবিষ্যতেও যারা এআই-কে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে জানবে তারাই এগিয়ে থাকবে।

লেখালেখি-কনটেন্ট

ডিজিটাল যুগের সবচেয়ে জনপ্রিয় আয়-ক্ষেত্র এখন কনটেন্ট ক্রিয়েশন। ওয়েবসাইট, ব্লগ, ইউটিউব, সোশ্যাল মিডিয়াসহ সবখানেই দরকার মানসম্মত লেখা, স্ক্রিপ্ট ও ধারণা। চ্যাটজিপিটি, জেমিনাই বা ক্লাউড-এর মতো জেনারেটিভ এআই টুল ব্যবহার করে একজন লেখক সহজেই আইডিয়া তৈরি, স্ক্রিপ্ট লেখা, এমনকি সম্পাদনাও করতে পারে। অনেকে এখন এআই-কনটেন্ট রাইটার হিসেবে কাজ করছেন ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে। ক্লায়েন্ট তাদের থেকে ব্লগ পোস্ট, প্রোডাক্ট বর্ণনা বা সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাপশন তৈরি করায়। এআই-এর সহায়তায় তারা দিনে কয়েকগুণ বেশি কাজ দিতে পারেন, ফলে আয়ও বাড়ে। তবে মনে রাখতে হবে, এআইয়ের লেখা হুবহু ব্যবহার না করে নিজের ভাষা, স্থানীয় রেফারেন্স এবং তথ্য যোগ করা উচিত। তাতে লেখার মান ও মৌলিকতা বজায় থাকবে। শুধু এআই তৈরি লেখা দিলে পাঠক বা ক্লায়েন্ট আকর্ষণ হারায়।

ডিজাইন-ভিজ্যুয়াল

দৃশ্যমান কনটেন্টের গুরুত্ব যেকোনো অনলাইন ব্যবসায় অপরিসীম। আগে একজন ডিজাইনারকে ফটোশপ অথবা ইলাস্ট্রেটরের মতো সফটওয়্যারে দীর্ঘ সময় কাজ করতে হতো। এখন বিভিন্ন এআই টুল কয়েক মিনিটে দৃষ্টিনন্দন ডিজাইন বানিয়ে দিতে পারে। গরফলড়ঁৎহবু, উঅখখক্সঊ, খবড়হধৎফড়.ধর, ঈধহাধ অও এর মতো টুলগুলো এখন গ্রাফিক ডিজাইনারদের হাতে জাদুর ছোঁয়া দিয়েছে। এখন কেবল টেক্সট প্রম্পট দিয়েই তৈরি করা যায় পোস্টার, লোগো, ইলাস্ট্রেশন, এমনকি বইয়ের কভারও। অনেক ডিজাইনার এখন ফাইভার ও আপওয়ার্কে-এ এআই-জেনারেটেড ডিজাইন বিক্রি করছেন। কেউ তৈরি করছেন ইউটিউব থাম্বনেইল, কেউ প্রিন্ট-অন-ডিমান্ড সাইট, যেমন কেউ কেউ জবফনঁননষব বা ঞববংঢ়ৎরহম-এ এআই-ডিজাইন করা টি-শার্ট বিক্রি করছেন। এই খাতে আয় নির্ভর করে প্রম্পট-দক্ষতার ওপর। মানে যে যত সুন্দর ও নির্দিষ্টভাবে এআইকে নির্দেশ দিতে পারে, সে তত উন্নত ফলাফল পায়।

ভিডিও-ভয়েস

ভিডিও কনটেন্ট এখন সবচেয়ে বেশি দেখা হয় সোশ্যাল মিডিয়া ও ইউটিউবে। ভিডিও প্রোডাকশন একসময় ব্যয়বহুল ছিল, কিন্তু এখন জঁহধিু গখ, চরশধ, ঝুহঃযবংরধ, ঐবুএবহ, ঙঢ়ঁংঈষরঢ়-এর মতো টুল সেই চিত্রও বদলে দিয়েছে। এই সফটওয়্যারগুলো দিয়ে টেক্সট থেকে ভিডিও বানানো যায়, ভয়েসওভার দেওয়া যায়, এমনকি পুরো অ্যানিমেটেড চরিত্রও তৈরি করা যায়। ডিজাইনারদের মতো অনেক ইউটিউবার এখন এআই-নির্ভর চ্যানেল চালাচ্ছেন; যেখানে ভয়েস, স্ক্রিপ্ট, এমনকি চরিত্রও এআই দিয়ে তৈরি। এতে প্রোডাকশন খরচ অনেক কমে আসে।  ভয়েস ক্লোনিং টুল যেমন ঊষবাবহখধনং বা চষধু.যঃ ব্যবহার করে কেউ কেউ এখন পেশাদার ভয়েসওভার শিল্পী হিসেবেও কাজ করছেন।

প্রোগ্রামিং-টেক সার্ভিস

যারা কোডিং জানে তাদের জন্য এআই যেন আশীর্বাদ।  অনেক এআই টুল এখন ডেভেলপারদের সহকারী হিসেবে কাজ করে, যার সাহায্যে কোড লেখা, ডিবাগিং, এমনকি সম্পূর্ণ ওয়েব অ্যাপ তৈরি করা পর্যন্ত সম্ভব। এই সেক্টরে আলোচিত টুলগুলো হলো- এরঃঐঁন ঈড়ঢ়রষড়ঃ, জবঢ়ষরঃ এযড়ংঃৎিরঃবৎ, ঈযধঃএচঞ ঈড়ফব ওহঃবৎঢ়ৎবঃবৎ ইত্যাদি। অনেক ফ্রিল্যান্সার এখন এআই-সহায়তায় দ্রুত প্রজেক্ট ডেলিভারি দিয়ে আয় করছেন। পাশাপাশি অনেকে এআই-অ্যাপ বা অটোমেশন টুল তৈরি করে মাসিক সাবস্ক্রিপশন মডেলে উপার্জন করছেন।

মার্কেটিং-সোশ্যাল মিডিয়া

বর্তমান সময়ে ডিজিটাল মার্কেটিং পুরোপুরি ডেটা-চালিত। এখন এআই ব্যবহার করে সহজেই টার্গেট অডিয়েন্স, ট্রেন্ড অ্যানালাইসিস ও কনভারশন ট্র্যাকিং করা যায়। ঔধংঢ়বৎ.ধর, ঈড়ঢ়ু.ধর, ঘড়ঃরড়হ অও, ঈযধঃএচঞ ইত্যাদি টুল দিয়ে তৈরি করা যায় বিজ্ঞাপনের কপি, ব্লগ পোস্ট কিংবা নিউজলেটার। এ ছাড়া এআই টুল দিয়ে অটো-রিপ্লাই, কনটেন্ট শিডিউলিং ও ইমেইল ক্যাম্পেইন পরিচালনা করে মার্কেটাররা সময় বাঁচাচ্ছেন, বাড়াচ্ছেন আয়।

ফ্রিল্যান্সিং-মাইক্রো টাস্ক

যারা নতুন ফ্রিল্যান্সিং শুরু করছেন, তারা এআই-সহায়ক ছোট কাজ করেও আয় করতে পারেন। যেমন, ডেটা সাজানো, অনুবাদ, রিসার্চ, ক্যাপশন তৈরি বা ছবি এডিট। অনেক সাইট যেমন জবসড়ঃধংশং, ঈষরপশড়িৎশবৎ বা অসধুড়হ গবপযধহরপধষ ঞঁৎশ-এ এআই-সম্পর্কিত মাইক্রো টাস্ক করে আয় করা যায়। এছাড়া ঙঢ়বহঅও বা ঐঁমমরহম ঋধপব-এর ওপেন সোর্স মডেল ব্যবহার করে অনেকেই নিজেদের ছোট ব্যবসা তৈরি করছেন। যেমন কাস্টম চ্যাটবট সার্ভিস, কনটেন্ট জেনারেটর বা ওয়েবসাইটের জন্য এআই-সহায়তা।

শিক্ষাদান ও পরামর্শ

যারা প্রযুক্তি সম্পর্কে ভালো বোঝেন, তারা অন্যদের এআই টুলের ব্যবহার শেখানোর মাধ্যমেও আয় করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ- অনলাইন কোর্স তৈরি, ইউটিউবে টিউটোরিয়াল বানানো, ওয়ার্কশপ পরিচালনা করা যেতে পারে। ঈড়ঁৎংবৎধ, টফবসু, ঝশরষষংযধৎব-এর মতো প্ল্যাটফর্মে এখন অনেকেই নিজেদের এআই-কোর্স বিক্রি করছেন।

ভবিষ্যতের সুযোগ

বিশ্বজুড়ে এআই-নির্ভরতা দ্রুত বাড়ছে। চঈি-এর এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে এআই-এর অবদান হবে প্রায় ১৫.৭ ট্রিলিয়ন ডলার। প্রযুক্তির এই যুগে যারা এআই-কে ভয় না পেয়ে বন্ধুর মতো গ্রহণ করছে, তারাই হচ্ছে আগামী দিনের সফল কর্মী, উদ্যোক্তা, সৃষ্টিশীল মানুষ।