সময়ের কী নির্মম পরিহাস! এক সময় যিনি ছিলেন ইউনিয়নের প্রভাবশালী ইউপি সদস্য, অসহায় মানুষের কার্ড, ভাতা, সরকারি সুবিধা এনে দিয়েছেন শত শত পরিবারকে, আজ তিনি নিজেই ছেলের বউয়ের একটি চালের কার্ডের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
ঘটনাটি ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার কুশনা ইউনিয়নের। উপজেলার গালিমপুর গ্রামের বাসিন্দা ও কুশনা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য জমির হোসেন বৃহস্পতিবার সকালে ছেলের বউ রেহেনা খাতুনকে নিয়ে হাজির হন উপজেলা চত্বরে। একসময় যিনি ছিলেন স্থানীয় রাজনীতিতে পরিচিত মুখ, এখন পঙ্গুত্ববরণ করে দিন কাটান ঘরে বসেই। সংসার চলে ছেলের আয়ে।
ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট প্রকল্পের আওতায় সরকার কোটচাঁদপুর উপজেলায় ১,০৮৬ জন নারীকে ৩০ কেজি করে চাল বিতরণের জন্য কার্ড দিচ্ছে। সেই কার্ড পাওয়ার জন্য স্থানীয় সংরক্ষিত মহিলা সদস্য রনেকা খাতুনের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছিলেন রেহেনা খাতুন, সাবেক মেম্বার জমির হোসেনের ছেলের স্ত্রী।
কিন্তু বুধবার রাতে জানতে পারেন, তালিকায় তার নাম নেই। এরপর গত বৃহস্পতিবার সকালে ছেলের বউ ও মহিলা সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে দপ্তর থেকে দপ্তরে ঘুরতে থাকেন জমির হোসেন। এ সময় উপজেলা গেটের সামনে দেখা হলে কথার একপর্যায়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি তিনি।
তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ সালে আমি ছিলাম কুশনা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার। শত শত বিধবা, বয়স্ক ভাতা, চালের কার্ড করে দিয়েছি। অথচ আজ আমার ছেলের বউয়ের একটি কার্ডের জন্য হাত পাততে হচ্ছে।’
মহিলা সদস্য রনেকা খাতুন বলেন, ‘আমি তিনজনের কাগজপত্র চেয়ারম্যানের কাছে জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু কারো কার্ড হয়নি। কেন হয়নি, জানি না।’
মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা শিলা বেগম বলেন, ‘চেয়ারম্যান-মেম্বারদের দেওয়া তালিকা থেকেই আমরা কাজ করি। যে তালিকা হাতে পেয়েছি, তাতে রেহেনা খাতুনের নাম নেই।’
এ বিষয়ে কুশনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদুজ্জামান সবুজ বলেন, ‘এখন এসব তালিকা ওয়ার্ডের দলীয় নেতারা করে দেন। আমরা শুধু জমা দিই। কিন্তু দোষ সবসময় চেয়ারম্যানের ঘাড়ে পড়ে। মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা চাইলে যাচাই করে যাদের প্রাপ্য নয়, তাদের বাদ দিতে পারেন।’
এ বিষয়ে কোটচাঁদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আনিসুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় মন্তব্য পাওয়া যায়নি।