ঢাকা বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫

ঢাকাকে এক ছাতার নিচে আনতে হবে

মাইনুল হক ভূঁঁইয়া
প্রকাশিত: মে ১৪, ২০২৫, ০৬:৩০ এএম
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম । ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

নগর সরকারের আদলে ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম বলেছেন, ঢাকাকে এক ছাতার নিচে আনা না হলে কোনো পরিকল্পনাই কাজে আসবে না। রূপালী বাংলাদেশকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, সব কাজের সিদ্ধান্ত এক জায়গা থেকে আসতে হবে। নগরের পানি, গ্যাসসহ সব সেবার বিষয়ে সিদ্ধান্ত এক জায়গা থেকে নিতে হবে যোগ করেন তিনি।

ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় নির্মাণাধীন ৩৩৮২টি ভবনের অবৈধ অংশ চিহ্নিত করে তা ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। অবৈধ ভবনগুলোর কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে পর্যায়ক্রমে ভবনগুলোর আংশিক ভেঙে ফেলা হবে। প্রথম ধাপে সেবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন, ফৌজদারি মামলা দায়ের এবং নকশা বাতিল করা হবে। প্রয়োজনে পরের ধাপে ভবনগুলো সিলগালা করা হবে।

রাজউক চেয়ারম্যান দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, যত দিন আমি দায়িত্বে আছি এই কাজ চালিয়ে যাব। এগুলো ভেঙে হোক কিংবা অন্যভাবে হোকÑ ভবন মালিকদের নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসব। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমরা নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি। আমরা প্রথমেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে নকশার ব্যত্যয় ঘটানো অংশটুকু চিহ্নিত করে দিচ্ছি। ভবন মালিকদের বলে দিচ্ছি নিজ উদ্যোগে অপসারণ করে নিতে। নতুবা পরবর্তী সময়ে আমরা নিজেরাই ভেঙে দেব।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, রাজউক আপাতত আর কোনো প্লট বরাদ্দ দেবে না। যে জায়গাগুলো আছে, সেখানে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। আদিবাসী ও সাধারণ ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের বিষয়টি তাহলে কী হবে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, প্লটপ্রাপ্তি সাপেক্ষে এদের বিষয়টি ভবিষ্যতে ঊর্র্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে সুরাহার উদ্যোগ নেওয়া হবে। তার মতে, এটি একটি বিশেষ মানবিক প্রক্রিয়া। অবশ্যই এটি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনার দাবি রাখে।

ড্যাপ সংশোধনী বিলম্বিত হওয়ায় ভবন নির্মাণ বন্ধ হয়ে গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আবাসন ব্যবসায়ীরা এমন অভিযোগের জবাবে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, এটি ভুল ধারণা। আমরা কোনো কাজই বন্ধ রাখিনি। নিয়ম মেনে নকশা অনুমোদন এবং ছাড়পত্র প্রদান নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, নকশা অনুযায়ী সরেজমিনে পর্যালোচনা করে যতটুকু রাস্তা আছে, সে অনুযায়ীই আমরা নির্মাণ অনুমোদন দেব। 
এ প্রসঙ্গে নির্মিতব্য ও নির্মীয়মাণ ভবন মালিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সামান্য লাভের আশায় ভবন নির্মাণ করলে তার ফল তাদেরকেই ভুগতে হবে। কেননা রাস্তার জায়গা না ছেড়ে ভবন বানালে ফায়ার ব্রিগেড ঢুকতে পারবে না। এতে বড় দুর্ঘটনার শিকার হতে হবে। তা ছাড়া অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে বাধাগ্রস্ত হলে রোগীদের প্রাণহানির শঙ্কা থেকেই যায়।

ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম জানান, আগামী ছয় মাসের মধ্যে পূর্বাচলকে বাসযোগ্য করে গড়ে তোলা হবে। তাহলে ঝিলমিলের কী হবে এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। বলতে গেলে সেখানে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানিসহ বেশির ভাগ অবকাঠামোই গড়ে উঠেছে। আমরা প্লট মালিকদের দ্রুত বাড়িঘর নির্মাণের জন্য তাগিদ দিয়েছি। যারা আমাদের কথা অমান্য করবেন, তাদের প্লট বাতিল অথবা জরিমানার মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে আমরা পিছপা হব না।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, শিগগিরই ঝিলমিলও পূর্ণাঙ্গ আবাসিক এলাকা হয়ে উঠবে। আগস্ট অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অসামান্য অবদানের নামে পূর্বাচল ও ঝিলমিলে যে ৮৩০ জনকে প্লট দেওয়া হয়েছে, তাদের বিষয়ে আপনাদের সিদ্ধান্ত কী জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমরা তাদের তালিকা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দুদকে পাঠিয়ে দিয়েছি। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, আমি যোগদান করেই রাজউকে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছি। অতীতে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এমন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই ব্যবস্থা চলমান থাকবে। তিনি বিশ্বাস করেন, এ ধারা অব্যাহত থাকলে কেউ অনিয়ম-দুর্নীতি করে পার পাবে না।

রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ঢাকাকে একটি আধুনিক ও বাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তোলা আমার প্রধান লক্ষ্য। এই লক্ষ্য সামনে রেখে আমি নানামুখী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি ও দিন-রাত শ্রম দিয়ে যাচ্ছি।