ঢাকার বাজারে বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের চাল। শ্রাবণের ঘনঘোর বর্ষায় সবজির সঙ্গে বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচও। তবে আমদানি করায় কেজিতে ১০০ টাকা কমে কাঁচা মরিচ এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। অন্যদিকে সব ধরনের ডিম ও মুরগির দাম কমেছে। গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে অন্তত ১০ টাকা দাম কমেছে বলে জানিয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী।
তারা বলেন, প্রবল বর্ষায় সরবরাহ ঘাটতিতে পণ্যের দাম বাড়ে। তবে এবার অনেক পণ্যের দাম কমেছে। চালের সরবরাহ সঠিক থাকলেও গত তিন সপ্তাহে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে অন্তত ২ টাকা বেড়েছে। খুচরা পর্যায়ে কেজিতে তা বেড়ে ৪ থেকে ৬ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। গ্রীষ্মের সবজি শেষ, যার কারণে গত সপ্তাহ থেকে অধিকাংশ কাঁচা সবজি এবং আলুর দামও বেড়েছে। তবে সবেচেয়ে দাম বেড়েছে কাঁচা মরিচের। ভারত থেকে আমদানি শুরু হওয়ায় দাম কমতে শুরু করেছে, বলেন ব্যবসায়ীরা।
ঢাকার কারওয়ান বাজার, মগবাজার ও মালিবাগ ঘুরে গতকাল বৃহস্পতিবার জানা গেছে, সাগর, মোজাম্মেল, মঞ্জু ও ডায়মন্ডের ৫০ কেজি চিকন চালের বস্তা এখন ৩৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি বস্তায় অন্তত ২০০ টাকা বেড়েছে, যা কেজিতে প্রায় ৪ টাকা। ঈদের আগে ৫০ কেজি চালের দাম ছিল ৩৬-৩৭শ টাকা। অন্যদিকে বিআর-২৮ প্রতি কেজি ৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চালের দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের চাটখিল রাইস এজেন্সির বেলাল আহমেদ বলেন, ‘চালের সরবরাহ ঠিক আছে, তবুও ঈদের পর থেকে দাম বাড়তে শুরু করেছে। এখন কেজিতে বেড়েছে প্রায় ২ টাকা, খুচরা পর্যায়ে সব ধরনের চালের দাম আরো বেড়েছে।’
মেসার্স নূর রাইস এজেন্সির চাল ব্যবসায়ী বলেন, ‘মোটা চাল এখন কম পাওয়া যায়। তবুও প্রতি কেজি ৫৮ টাকা। ৫০ কেজির বস্তার চিকন চালের দাম এখন প্রায় ৩৯শ টাকা। বস্তায় দাম বেড়েছে অন্তত ২০০ টাকা’Ñ বলেন তিনি।
ডিমের দাম সম্পর্কে কিচেন মার্কেটের ব্যবসায়ী উজ্জ্বল বলেন, ‘আগের চেয়ে দাম কিছুটা কমেছে। সাদা ডিমের ডজন ১১০ এবং লাল ডিম ১২০ টাকা।’
এদিকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে আলুর দাম কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। এমন তথ্য প্রকাশ করেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি)। তথ্য বলছেÑ রাজধানীর কয়েকটি কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। আর গত এক সপ্তাহে দাম বেড়েছে তিন দশমিক ৭৭ শতাংশ।
আষাঢ়ের ঘন বর্ষার পরে অধিকাংশ কৃষকের মরিচখেত নষ্ট হয়েছে। যার ফলে উৎপাদন কমায় দাম বেড়েছে। তবে দেশের কাঁচা মরিচের দাম নিয়ন্ত্রণে আমদানি বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বেড়েছে কাঁচা মরিচের আমদানি। গত শনিবার বন্দর দিয়ে ৫টি ট্রাকে ৪৮ টন কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে। এতে পণ্যটির সরবরাহ বাড়ায় কেজিতে দাম কমেছে ১৬০ টাকা করে। যার প্রভাব পড়েছে ঢাকায়। গতকাল কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।
কিচেন মার্কেটের পশ্চিমের অংশে মুরগির মাংস ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ব্রয়লারের দাম আরও কমেছে। গত সপ্তাহ থেকে আরও ২০ টাকা কমে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। সোনালি মুরগির দামও কমেছে। এখন প্রতি কেজি ২৭০-২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’ দাম কমার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হঠাৎ ক্রেতা কমেছে। কেন কমল বলা মুশকিল। দাম কমার এটিও কারণ হতে পারে’, বলেন তিনি। তবে ভোজ্যতেলের সরবরাহ ঠিক থাকায় সয়াবিন তেলের দাম এখনো বাড়েনি।
কারওয়ান বাজারে গতকাল দেখা গেছে, গেল সপ্তাহের তুলনায় খুচরা বাজারে সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে। দাম বেশি বাড়ার তালিকায় আছে বরবটি, বেগুন, কাঁকরোল ও করলা। অনেক সবজির মৌসুম শেষ হওয়ায় দাম কিছুটা বেড়েছে।
বাজারে প্রতি কেজি পটোল আগের দামে ৪০-৪৫ টাকা, গোল বেগুন প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকা, লম্বা বেগুন ৫০-৬০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৪০-৬০ টাকা, পেঁপের কেজি ৪০ টাকা, জালি কুমড়া প্রতি পিস ৪০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া কচুর লতি ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, ঝিঙ্গা ৬০-৭০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ টাকা, টমেটো ও করলা ৬০-৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দাম বৃদ্ধির বিষয়ে অনেক ব্যবসায়ী বলেন, বর্ষায় সবজির সরবরাহ কম। অনেক সবজির মৌসুমও শেষ হয়ে আসছে। নতুন সবজির সরবাহ বাড়লে দামও কমে আসবে। অন্যদিকে, বর্ষায় দেশি মাছের সরবরাহ বাড়লেও দাম কমে না বলে জানান তারা। গতকাল কিচেন মার্কেটে গতকাল প্রতি কেজি রুই ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। এ ছাড়া কাতল ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, কোরাল ৭৫০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২২০ টাকা ও তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।