- দেশজুড়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের কর্মসূচি
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ৮১তম জন্মদিন পালিত হয়েছে গতকাল শুক্রবার। এ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এদিন বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবন ফিরোজায় প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে ফুলের তোড়া পৌঁছে দেন তার একান্ত সচিব সজীব এম খায়রুল ইসলাম ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম। এদিকে, জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে দেশ ও দেশের বাইরে বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে আলোচনা সভা ও দোয়ার আয়োজন করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে দেওয়া ফুলের তোড়া গ্রহণ করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব ও সাবেক সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বেলায়েত হোসেন, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান ও চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের কর্মকর্তা মাসুদ রহমান। শুভেচ্ছার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ইস্কান্দার মজুমদার ও তৈয়বা মজুমদার দম্পতির তৃতীয় সন্তান তিনি। বিএনপি-প্রধান গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় অবস্থান করেন। জন্মদিনে দলীয়ভাবে এবারও ছিল না কেক কাটার কোনো আয়োজন। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, খালেদা জিয়ার দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনায় সারা দেশের দলীয় কার্যালয়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে। গত বৃহস্পতিবার দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ নির্দেশনা দেন। কয়েক বছর ধরে খালেদা জিয়ার নির্দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে জন্মদিন পালন করা থেকে বিরত আছে বিএনপি। এদিনও কেক কেটে জন্মদিন পালন না করার জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বেলা ১১টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল হয়। অনুষ্ঠানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পৈতৃক নিবাস ফেনীর ফুলগাজী হলেও তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে দিনাজপুরে বাবার কর্মস্থলে। ১৯৬০ সালের আগস্টে তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন খালেদা জিয়া। এই দম্পতির দুই সন্তান, তারেক রহমানের জন্ম ১৯৬৫ সালের ২০ নভেম্বর এবং ১৯৬৯ সালের ১২ আগস্ট আরাফাত রহমান কোকোর। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের নামে বর্বরোচিত গণহত্যা শুরু করলে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি সেনারা বিদ্রোহ করেন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে দেশি-বিদেশি চক্রান্তে বিপথগামী সৈন্যদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন।
এর পরপরই জিয়াউর রহমানের গড়া বিএনপির রাজনীতিতে আগমন ঘটে খালেদা জিয়ার। দলের নেতাকর্মীদের দাবির মুখে ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি তিনি বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ লাভ করেন। পরে তৎকালীন সরকারবিরোধী দীর্ঘ আপসহীন সংগ্রামের পর ১৯৯১ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এ পর্যন্ত তিন দফায় প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন খালেদা জিয়া। ওয়ান-ইলেভেনের পর মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকারের আমলে তিনি কারাবন্দি হন। পরে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির অভিযোগে কারাদ- হলে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে আবারও বন্দি করা হয়।
করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ৬ মাসের জন্য সাজা স্থগিত করে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয় সরকার। তখন থেকে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। ৬ মাস পর পর তার মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছিল তৎকালীন সরকার। গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট খালেদা জিয়ার সাজা বাতিল করে মুক্তি দেন রাষ্ট্রপতি। চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান বিএনপির চেয়ারপারসন।
লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। টানা ১৭ দিন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৫ জানুয়ারি বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় যান। টানা ৪ মাস চিকিৎসা শেষে মে মাসে ঢাকায় আসেন। এর পর থেকে গুলশানের বাসা ফিরোজায় অবস্থান করছেন।