রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মুহাম্মদ ফজলুল করিম, ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম)

প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২৫, ০৬:৪৯ এএম

চা-দোকানের ব্যবসা নিয়ে  মাহিনকে হত্যার অভিযোগ

মুহাম্মদ ফজলুল করিম, ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম)

প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২৫, ০৬:৪৯ এএম

চা-দোকানের ব্যবসা নিয়ে  মাহিনকে হত্যার অভিযোগ

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার কাঞ্চননগর ইউনিয়নের চেঙ্গারমুখ এলাকায় চুরির অভিযোগে কিশোর মাহিনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নিহত রিহান উদ্দিন মাহিন (১৪), আহত মানিক (১৪) ও রাহাতের (১৪) পরিবারে চলছে মাতম। এ ঘটনায় নিহতের মা খতিজা বেগম বাদী হয়ে ঘটনার দিন রাতে ফটিকছড়ি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ এরই মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এদিকে, ঘটনার পর থেকে স্থানীয়দের অনেকেই নিরাপত্তাহীনতায় বাড়িঘর ছেড়ে চলে গেছেন। 

সরেজমিনে গিয়ে একাধিক সূত্রে জানা যায়, নিহত মাহিন এবং তার দুই বন্ধু মানিক ও রাহাত গত ২০ আগস্ট বুধবার রাতে কক্সবাজারে বেড়াতে যায়। পরদিন ২১ আগস্ট বৃহস্পতিবার রাতে ফেরার পথে তারা চট্টগ্রামে পৌঁছায় গভীর রাতে। সেখান থেকে অক্সিজেন মোড় এলাকা থেকে ৭০০ টাকা একটি সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে নিজ গ্রাম কাঞ্চননগরের উদ্দেশে রওনা দেয়। ভোর ৪টার দিকে তারা গ্রামে পৌঁছা। তবে ভাড়া কম থাকায় চালকের কাছে জামানত হিসেবে মানিককে রেখে মাহিন ও রাহাত টাকা আনতে তার বাড়ির দিকে রওনা হয়। পথে হঠাৎ চার-পাঁচজন তাদের চোর সন্দেহে ধাওয়া করলে ভয়ে তারা জনৈক বখতিয়ার নামের এক ব্যক্তির নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকে তাদের ধরে এনে চেঙ্গার মুখ ব্রিজের রেলিংয়ের সঙ্গে বেঁধে নির্মমভাবে মারধর করে। এতে রিহান উদ্দিন মাহিন নিহত হয়।

মাহিনের বাবা লোকমান জানান, চেঙ্গার মুখ ব্রিজের পাশে সম্প্রতি তিনি একটি চায়ের দোকান চালু করেন। দোকানটি খোলার পর থেকেই মাহিনের শালীন ব্যবহার ও আন্তরিক কাস্টমার সার্ভিসের কারণে দোকানের বিক্রি দ্রুত বেড়ে যায়। এতে পাশের আরেক চায়ের দোকানদার তৈয়বের ব্যবসা কমতে শুরু করে। এ নিয়ে তৈয়বের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে তাদের বিরোধ চলছিল। লোকমানের দাবি, দোকানের ব্যবসা নষ্ট করার উদ্দেশ্যে প্রতিহিংসার জেরে মাহিনকে চুরির অভিযোগে ফাঁসিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঘটনার দিন সকালে আহত তিন কিশোর ব্রিজের ওপর পড়ে থাকলেও পার্শ্ববর্তী দোকানদার তৈয়ব লাঠি হাতে আবারও তাদের মারধর করেন। এর কিছুক্ষণ পরই তৈয়বের চাচাতো ভাই, স্থানীয় পল্লি চিকিৎসক রোমান ধারাবাহিকভাবে আঘাত করতে থাকেন এবং অন্তত ১৮টি লাঠির আঘাত হানেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও মারধরের কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই মাহিনের মৃত্যু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, রোমানের আঘাতেই মাহিনের মৃত্যু হয়।

স্থানীয় প্রবীণ মুরব্বি আমির হোসেন বলেন, ‘আমি সকালে জমিতে যাওয়ার পথে ঘটনাস্থলের তিনটি ছেলেকে ব্রিজের রেলিংয়ে বাঁধা অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে থাকতে দেখতে পাই। আমি মারধর না করার অনুরোধ করলেও তারা কেউ শোনেনি। আমার সামনেই স্থানীয় যুবক রোমান লাঠি দিয়ে মাহিনকে আঘাত করলে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং সঙ্গে সঙ্গেই তার মৃত্যু হয়।’

মাহিনের বাবা লোকমান বলেন, সিএনজি ভাড়ার টাকা আনতে মাহিন ও রাহাত বাড়ির দিকে যাচ্ছিল। তখন স্থানীয় কয়েকজন তাদের চোর সন্দেহে ধাওয়া করে নির্মাণাধীন একটি ভবন থেকে নামিয়ে আনে এবং ব্রিজের রেলিংয়ে বেঁধে অমানবিকভাবে প্রহার করে। একপর্যায়ে মাহিন মারা যায় আর মানিক ও রাহাত গুরুতর আহত হয়।

এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, তিন কিশোরকে রশি দিয়ে বেঁধে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে হামলাকারীরা বেধড়ক পেটাচ্ছে। নিহত মাহিনের বাবা-মা ঘটনাস্থলে গিয়ে ছেলেকে বাঁচানোর চেষ্টা করলেও হামলাকারীরা কারো অনুরোধ শোনেনি। হামলাকারীরা মাহিনের মা-বাবা ও চাচাকেও মারধর করে। এমনকি মৃত্যুর আগে মাহিন পানি চাইলে তা-ও দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। হামলাকারীরা পানির বদলে প্রস্রাব খাওয়াতে বলে।

আহত কিশোর রাহাতের বাবা মো. ইউসুফ বলেন, ‘আমার ছেলে কখনো অভাবে বড় হয়নি। ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবারে বেড়ে উঠেছে। চুরির অপবাদ দিয়ে তাকে নির্মমভাবে পেটানো হয়েছে।’ 

আহত আরেক কিশোর মানিকের বোন আঁখি আক্তার বলেন, ‘ওকে মেরে পুরো শরীর থেঁতলে দিয়েছে। আমরা গরিব মানুষ, সুষ্ঠু বিচার চাই।’

নিহত মাহিনের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরে গত শুক্রবার রাতে জানাজা শেষে দাফন করা হয়। ওই দিনই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নজরুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতের পরিবারকে সমবেদনা জানান।

ফটিকছড়ি থানার ওসি নূর আহম্মদ জানান, নিহতের মা খতিজা বেগম বাদী হয়ে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ১০-১৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনার পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে আবুল কাসেম লেদুর ছেলে নোমান ও মৃত মাহমদুল হকের ছেলে আজাদকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ঘটনার পর থেকে পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। স্থানীয়দের অনেকেই নিরাপত্তাহীনতায় বাড়িঘর ছেড়ে চলে গেছে। নিহত মাহিনের বাবা লোকমান এখনো পিঠে পিটুনির দাগ দেখিয়ে কাঁদছেন, ‘আমার ছেলেকে বাঁচাতে গিয়েও আমি মার খেলাম, আমার বুকের ধন মাহিনকে হারালাম।’
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!