ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর। ইতিমধ্যে নির্বাচনি হাওয়া বইছে ক্যাম্পাসজুড়ে। ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান থেকে ঐতিহাসিক সব সংগ্রামে ডাকসুর ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। দেশের রাজনীতিতে ঢাবির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে ডাকসু নির্বাচন নিয়েও তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। নিজেদের পক্ষে ইতিমধ্যে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীরা।
প্রতিদ্বন্দ্বীদের মাঝে চলছে টান টান উত্তেজনা। আজ মঙ্গলবার থেকে নিয়ম মেনে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করতে পারবেন প্রার্থীরা। এরই মধ্যে ডাকসুর অনেক প্রার্থী অভিযোগ করেছেন, কর্তৃপক্ষ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ধরে রাখতে পারছে না। একই সাথে নির্বাচন ঘিরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও কর্তৃপক্ষের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন প্রার্থীরা।
এদিকে নির্বাচন সামনে রেখে ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা এবং ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সভা করেছে ঢাবি প্রশাসন।
অন্যদিকে নির্বাচন ঘিরে আচরণবিধি ভাঙার অভিযোগও আসছে হরহামেশা। নিয়ম ভঙ্গ করে মধ্যরাতে অবস্থান করায় ভিপি পদপ্রার্থী উমামা ফাতেমার বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠায়, আলোচনার মুখে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি। আর নির্বাচনের শেষ সময়ে এসে ২১ প্রার্থী তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
ডাকসু নির্বাচনে কর্তৃপক্ষ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ধরে রাখতে পারছে না বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান। তিনি বলেছেন, বিভিন্ন প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচারণা চালালেও কোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। গুপ্ত সংগঠনগুলো বিভিন্ন হলভিত্তিক জোন তৈরি করে হলগুলোতে ডামি প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। একই সাথে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন একাধিক প্রার্থী।
এদিকে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা এবং ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সভা করেছে ঢাবি প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর জানায়, সভায় ক্যাম্পাসে সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। নির্বাচন উপলক্ষে ক্যাম্পাসের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার্থীদের নির্বিঘেœ ভোট প্রদান ও সুষ্ঠুভাবে ভোট গণনা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কর্মকৌশল ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
তবে এরই মধ্যে ভাঙছে আচরণবিধি, আসছে অভিযোগ; পাঠকক্ষে প্রচার চালানো যাবে না, ভোটারদের খাবার বা পানীয় দেওয়াতে আছে বারণ; কিন্তু হরহামেশা পাঠকক্ষে বা লাইব্রেরিতে ঢুকে পড়ছেন অনেক প্রার্থী। ক্যান্টিনে গিয়ে শিক্ষার্থীদের আপ্যায়ন করে ফেসবুকেও দেওয়া হয়েছে ছবি। আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর কয়েক দিন আগে থেকেই দেখা যাচ্ছে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের এসব ঘটনা। তবে প্রার্থীদের গণসংযোগ দেখে বোঝার উপায় নেই, আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হতে ছিল বাকি। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে সরগরম হয়ে ওঠা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গত কয়েক দিন ঘুরে আচরণবিধি লঙ্ঘনের এসব চিত্র চোখে পড়ে।
শেষ সময়ে নির্বাচনে ২১ জন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। গতকাল সোমবার দুপুরে সিনেট ভবনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ডাকসু নির্বাচনের চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন এই তথ্য জানান। তিনি দাবি করেন, মেজর কোনো আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা এখন পর্যন্ত ঘটেনি। এমনটি যেন ভবিষ্যতেও না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে চিফ রিটার্নিং অফিসার ও তার টিম কাজ করছে।
স্বতন্ত্রদের টার্গেট সাধারণ শিক্ষার্থীরা;
ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস), ছাত্র অধিকার পরিষদ, বাম জোটসহ আটটি প্যানেল রয়েছে। এর বাইরেও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছেন অনেকে। তাদেরও রয়েছে বড় প্রত্যাশা। দলীয় কোনো ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও যে যার জায়গা থেকে জনপ্রিয়। এই জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে ডাকসুতে জয়লাভের বিষয়ে তারাও আত্মবিশ্বাসী। তারা টার্গেট করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন