প্রশাসনের আলটিমেটামের পর সিলেটের লুণ্ঠিত সাদাপাথর স্বেচ্ছায় ট্রাকযোগে ও নৌকা যোগে ফেরত দিচ্ছেন অনেকেই। স্বেচ্ছায় লুণ্ঠিত পাথর ফেরত দিতে যেন তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে সাদাপাথর এবং আশপাশের এলাকা থেকে কোটি কোটি টাকার পাথর লুট হয়ে যায়। গত জুলাই ও আগস্টে দুই সপ্তাহে সাদাপাথর এলাকায় নজিরবিহীন লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) সকাল পর্যন্ত অন্তত ২০০টি ট্রাকে প্রায় ৩ লাখ ঘনফুট পাথর ফেরত দেওয়া হয়েছে। এর ফলে প্রশাসনের ডাম্পিং এলাকায় প্রতিস্থাপনের জন্য প্রায় ১৩ লাখ ঘনফুট পাথর স্তূপ করে রাখা হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিন মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, সোমবার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৬ লাখ ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়েছে। পাথর প্রতিস্থাপনে অন্তত ২০০ জন শ্রমিক কাজ করছেন।
স্বেচ্ছায় লুণ্ঠিত পাথর ফেরত দিতে তিন দিনের আলটিমেটাম দেন নবাগত জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম। তার ঘোষণায় বলা হয়, মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে মজুত রাখা সাদাপাথর নিজ খরচে কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে প্রশাসনের কাছে জমা দিলে বিনাশর্তে দায়মুক্তি দেওয়া হবে। এই সময়সীমার পর যাদের কাছে পাথর পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাইকিংয়ের পর থেকেই পাথর ফেরত দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়।
ভোলাগঞ্জ ১০ নম্বর ঘাট থেকে পাথর নিয়ে আসা ট্রাকচালকরা জানান, এসব পাথর বিভিন্ন ক্রাশার মেশিন থেকে নেওয়া হয়েছে এবং নৌকাযোগে এনে সাদাপাথরে ফেলা হচ্ছে।
স্থানীয় এলসি ব্যবসায়ী নোমান আহমদ বলেন, সাদাপাথর প্রাকৃতিকভাবে যেভাবে ছিল, হয়তো তা পুরোপুরি ফিরে আসবে না। তবে প্রশাসনের উদ্যোগে এর নান্দনিকতা ফিরে আসবে। প্রশাসন যথেষ্ট চেষ্টা করছে।
ভোলাগঞ্জ ১০ নম্বর ঘাটে পাথর বুঝে নেওয়ার দায়িত্বে থাকা কোম্পানীগঞ্জ তহশিল অফিসের চেইনম্যান এনায়েত হোসেন বলেন, গতকাল লাখ লাখ ঘনফুট পাথর ফেরত দেওয়া হয়েছে। সোমবার দুপুর পর্যন্ত ২২টি গাড়ি পাথর এসেছে, তবে লাইনে অন্তত ২০০টিরও বেশি গাড়ি রয়েছে।
সোমবার সরেজমিনে সাদাপাথর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভোলাগঞ্জ ১০ নম্বর বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে নজিরবিহীনভাবে সাদাপাথর লুট হয়েছে। পাথর লুটের ফলে এলাকাটি একপ্রকার মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে যে পাথরগুলো সেখানে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে, তা লুটপাটের তুলনায় খুবই অল্প বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল বারি। তিনি বলেন, প্রশাসনকে সাধুবাদ জানাতেই হয়, তারা অন্তত লুণ্ঠিত পাথর ফেরত এনে প্রতিস্থাপন করছে।
এদিন শতাধিক নৌকার মাধ্যমে সাদাপাথরের লুট হওয়া স্থানে পানিতে পাথর ফেলা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিন মিয়া নিজে উপস্থিত থেকে স্থানান্তর কার্যক্রম তদারকি করেন। খনি ও খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর এক কর্মকর্তা সাদাপাথর এলাকা পরিদর্শন করলেও তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করেন।
ইউএনও রবিন মিয়া আরও বলেন, সোমবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত সাড়ে ৫ লাখ ঘনফুট পাথর প্রতিস্থাপন হয়েছে। আমাদের ডাম্পিং স্টেশন থেকে নৌকায় করে প্রতিনিয়ত পাথর আনা হচ্ছে। সদরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পাথর আসছে। আশা করছি, সপ্তাহের শেষের দিকে ভালো খবর দিতে পারব। পুরো এলাকায় পাথর পুনঃস্থাপন হয়ে গেলে সাদাপাথর আরও নান্দনিক রূপে ফিরে আসবে, যা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হবে।
ভোলাগঞ্জ নোম্যানস ল্যান্ডের ১০ নম্বর এলাকায় সাদাপাথরের স্তূপটি ছিল পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। প্রতিদিন পর্যটকে মুখর থাকায় এই অঞ্চলটি ঘিরে নৌকা শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের জীবিকা নির্বাহ হতো।
কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ভোলাগঞ্জে পাথর লুটের মহোৎসব শুরু হয়। জেলা ও স্থানীয় প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে পাথরখেকোরা লুটপাট চালায়। সমালোচনার মুখে শুধু জেলা প্রশাসককে ওএসডি ও ইউএনওকে বদলি করা হয়।
তবে সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক সাদাপাথর পুনরুদ্ধারে উদ্যোগ নেন এবং নতুন জেলা প্রশাসক আসার পর উদ্ধার অভিযানে গতি আসে। বর্তমানে জব্দকৃত পাথর সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও পুনঃস্থাপনের ফলে পরিবেশ রক্ষায় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন