ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ঘিরে অস্থিরতার মধ্যে থানা ও বিভিন্ন স্থান থেকে লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবিষয়ক সভায় তিনি এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
তিনি বলেন, পিস্তল, শটগানের খবর দিলে ৫০ হাজার টাকা, চায়নিজ রাইফেলে ১ লাখ, এসএমজির ক্ষেত্রে দেড় লাখ এবং এলএমজির জন্য ৫ লাখ টাকা দেওয়া হবে। আর প্রতিটি গুলির জন্য ৫০০ টাকা করে পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র ও গুলির ক্ষেত্রে এই পুরস্কার প্রযোজ্য হবে। তথ্যদাতার পরিচয় গোপন রাখা হবে বলে জানান উপদেষ্টা।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে, সেই সুযোগে ‘নিয়োগ বাণিজ্যও’ বেড়ে গেছে। নিয়োগ বাণিজ্য যদি কেউ করে, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। এ ক্ষেত্রে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। উপদেষ্টার চেয়ারে বসার পর ‘বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়ের সংখ্যা বেড়ে গেছে’ মন্তব্য করে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, এরা কেউ যদি চাঁদাবাজি বা অন্য কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকে, তাদের ব্যাপারে তথ্য দিন।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যদি আমরা দুর্নীতি করি, তাহলে লিখে দিয়েন। তবে ভুল তথ্য দিয়ে রিপোর্টিং না করার অনুরোধ করছি। নিউজ প্রকাশের পরে যে সম্মানহানি হয়, প্রতিবাদ দিয়ে সেটা আর উদ্ধার হয় না।’
গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার সড়ক বন্ধ করে বাসা থেকে কর্মস্থলে যাতায়াত করেনÑ এরকম খবরের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এ ব্যাপারে তাকে একটি কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হবে। কোর কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এখানে আইজিপি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আপনারা হয়তো কিছুদিনের মধ্যে সেটা জানতে পারবেন। নিয়মমতো প্রথমে কারণ দর্শাতে বলা হবে। ব্যাখ্যা তলব করা হবে।’
নির্বাচন নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নির্ভর করে জনগণ ও রাজনৈতিক দলের ওপর। এরা যখন নির্বাচনমুখী হয়ে যাবে, তখন এসব সমস্যা কমে যাবে। সবার সাহায্য-সহযোগিতায় আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে পারব।’
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর বিক্ষুব্ধ জনতা দেশের বিভিন্ন থানা ও পুলিশের স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে। পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্রে জানা যায়, সে সময় বিভিন্ন থানা ও পুলিশের স্থাপনা থেকে ৫ হাজার ৭৫৩ আগ্নেয়াস্ত্র ও ৬ লাখ ৭ হাজার ২৬২টি গুলি লুট হয়। পাশাপাশি টিয়ার গ্যাসের ৩২ হাজার ৫টি শেল, ১ হাজার ৪৫৫ টিয়ার গ্যাস গ্রেনেড, ৪ হাজার ৬৯২ সাউন্ড গ্রেনেড, ২৯০ স্মোক গ্রেনেড, ৫৫ স্টান গ্রেনেড, ৮৯৩ মাল্টিপল ব্যাং স্টান গ্রেনেড এবং ১৭৭টি টিয়ার গ্যাস স্প্রে লুট হয়। ১২ আগস্ট থেকে পুলিশ সদর দপ্তর একাধিকবার লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দেওয়ার আহ্বান জানায়। গত ৩ সেপ্টেম্বর এগুলো জমা দেওয়ার সময়সীমা শেষ হয়।
সেপ্টেম্বর থেকেই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে দেশব্যাপী যৌথ অভিযান চালায় অন্তর্বর্তী সরকার। সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যরা এই অভিযানে অংশ নেন। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যমতে, লুণ্ঠিত আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে এখনো ১ হাজার ৩৬৩টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়নি। লুণ্ঠিত ৬ লাখ ৫১ হাজার ৮৩২ গোলাবারুদের মধ্যে উদ্ধার হয়নি ২ লাখ ৫৭ হাজার ৭২০টি।
নির্বাচন সামনে রেখে এসব অস্ত্র ব্যবহার করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন বিভিন্ন দলের রাজনীতিবিদ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মনে করেন, রাজনৈতিক দল ও জনগণ নির্বাচনমুখী হলে ভোটের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কোনো ধরনের ‘সমস্যা থাকবে না। সবার সহযোগিতায় একটা ‘শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন’ উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন