ঢাকা শুক্রবার, ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

এপিএইচআরের সংবাদ সম্মেলন

আসিয়ানে উপেক্ষিত রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৫, ০৫:৫৫ এএম
রোহিঙ্গা

রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে মানবিক সংকটের বিষয়টি তুলে ধরে আসিয়ান জোটকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে আসিয়ান পার্লামেন্টারিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস (এপিএইচআর)। আসিয়ানের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থাটি বলছে, রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশ ও আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। সংস্থাটি বলেছে, আসিয়ান রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণকে উপেক্ষা করেছে। এটি ইতিমধ্যে একটি সংকটজনক পর্যায়ে রয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানী ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলন এই আহ্বান জানায় এপিএইচআর। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে সংগ্রহ করা তথ্য-উপাত্তের বিষয়ে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

এপিএইচআর জানায়, ১ থেকে ৩ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং ফিলিপাইনের বর্তমান ও সাবেক আইনপ্রণেতাদের নিয়ে গঠিত এপিএইচআর প্রতিনিধিদল কক্সবাজার সফর করে। এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মুখোমুখি হওয়া এবং ক্রমবর্ধমান মানবিক ও মানবাধিকার সংকট মূল্যায়ন করা।

সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন সংকট ও নানা দিক তুলে ধরা হয়। রোহিঙ্গা সংকট কোনো বিচ্ছিন্ন সমস্যা নয় জানিয়ে বিষয়টি আসিয়ানের পরবর্তী সভায় তুলে ধরা হবে বলে জানায় মানবাধিকার সংস্থাটি।

রোহিঙ্গা সংকট আসিয়ান-সংশ্লিষ্ট বিষয় উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটি জানায়, দ্রুতই রোহিঙ্গা সংকট উত্তরণ না হলে মানব পাচার, অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান এবং শরণার্থীদের অব্যাহত আগমনের কারণে আসিয়ান অঞ্চলের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে। এ সময় বিভিন্ন দেশ রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থ সহায়তা কমিয়ে দেওয়ায় আসন্ন খাদ্য সংকট সমাধানে দ্রুত আসিয়ানকে একটি মানবিক তহবিল গঠনের অনুরোধ জানায় এপিএইচআর।

সংস্থাটি বলছে, আসিয়ান রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণকে উপেক্ষা করেছে। এটি এরই মধ্যে একটি সংকটজনক পর্যায়ে রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করেছে, ২০২৫ সালের নভেম্বরের পর খাদ্য রেশন ফুরিয়ে যাবে, যদি না প্রতি মাসে ১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল নিশ্চিত করা হয়।

এ ছাড়া এপিএইচআর রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে একটি আসিয়ান প্ল্যাটফর্ম তৈরির আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি আসিয়ানকে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে রোহিঙ্গা শিশু ও যুবকদের জন্য স্বীকৃত শিক্ষা এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের সুযোগ নিশ্চিত করারও আহ্বান জানিয়েছে।

ফিলিপাইনের সরকার রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি এবং উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেওয়ায় সেই সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে এপিএইচআর। অন্যান্য আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্র এটি অনুসরণ করতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

এপিএইচআর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, মানবিক সাহায্যকারী সংস্থা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সরকারগুলোকে রোহিঙ্গা সংকটের মানবিক চাহিদা ও রাজনৈতিক জটিলতাগুলো মোকাবিলায় জরুরিভাবে এবং সহানুভূতির সঙ্গে কাজ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে এপিএইচআরের সহসভাপতি ও মালয়েশিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য চার্লস সান্তিয়াগো বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের আট বছর পেরিয়ে গেলেও আসিয়ান এখনো এটিকে নিজেদের সমস্যা হিসেবে দেখছে না। এপিএইচআর প্রথম ২০১৮ সালে এই বিষয় তুলে ধরেছিল এবং আজ আবারও একটি আসিয়ান মানবিক তহবিল গঠনের জন্য আমাদের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করছি। যদি আসিয়ান মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে মানব পাচার, অবৈধ বাণিজ্য এবং ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতার ভার পুরো অঞ্চলকে বহন করতে হবে।

রোহিঙ্গা সমস্যাকে শুধু বাংলাদেশের নয়, আসিয়ানেরও সমস্যা বলে উল্লেখ করেন চার্লস সান্তিয়াগো। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়াই হতে পারে একমাত্র সমাধান। এ জন্য চীনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, এটি অস্বীকারের সুযোগ নেই। চীন রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিপক্ষে নয়। চীনও রোহিঙ্গা সমস্যার একটা স্থায়ী সমাধান চায়। তবে স্থায়ী সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ও আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার সংসদ সদস্য ওং চেন বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমারের বাসিন্দা এবং যেহেতু মিয়ানমার একটি আসিয়ান রাষ্ট্র, তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্রগুলোর একটি বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তারা শরণার্থীশিবিরগুলোতে পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা দেবে। যেখানে অচিরেই ব্যাপক দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি তৈরি হবে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, ইউএসএআইডির ব্যাপক তহবিল কাটছাঁটের কারণে ২০২৫ সালের নভেম্বরের শেষে খাদ্য রেশনের জন্য বাজেট উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। শিবিরগুলোতে থাকা ১৩ লাখ মানুষের জন্য প্রতি মাসে ১ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলারের প্রয়োজন।

ফিলিপাইনের সাবেক কংগ্রেস সদস্য রাউল ম্যানুয়েল বলেন, রোহিঙ্গা যুবকেরা স্বীকৃত শিক্ষা এবং প্রাসঙ্গিক দক্ষতা প্রশিক্ষণ ছাড়া আটকে থাকতে পারে না। তাদের ভবিষ্যৎ এবং একটি টেকসই সমাধানের যেকোনো আশা নির্ভর করে তাদের মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার এবং একটি শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক মিয়ানমার গঠনে অবদান রাখার সরঞ্জামগুলো নিশ্চিত করার ওপর। আমরা আসিয়ানকে এই কাজটি সম্ভব করার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।

এর আগে সংগঠনটির একটি প্রতিনিধিদল গত বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে।